শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩৬ অপরাহ্ন

গোদাগাড়ীতে শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানে নেই স্বাস্থ্যবিধি

বিডি ঢাকা স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১৬৭ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ প্রতিদিনই বিশ্বে হুহু করে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। হঠাৎ করেই বিশ্বব্যপি পুনরায় করোনার নতুভ ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রণ বৃদ্ধি পাওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রয়েছে চরম উদ্বিগ্নে। দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা দেশের নাগরিকসহ বিভিন্ন দপ্তরকে অধিক সচেতন ও করোনার টিকা দেওয়া তাগিদ প্রদান করছে।

এরই মধ্যে রাজশাহীতে গত কিছুদিন যাবত অতিমাত্রায় করোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলায় একদিনে রেকর্ড করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগি শনাক্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ও সরকারের উর্ধতন দুইজন কর্মকর্তাও রয়েছেন।

গত সোমবার রাজশাহীর দুইটি ল্যাবে ২০২ জনের নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্ত হয় ৬২ জনের। যা নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
নতুন ভাবে করোনা ভাইরাস বৃদ্ধি পাওয়া ও ওমিক্রনের রোগী দেশে সানাক্ত হওয়ার পর দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে।এটি বাস্তবায়নের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন অফিস সমূহ।

এরই অংশ হিসেবে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এই টিকা দেওয়ার কার্যক্রমে চরম অবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এই ধরনের অবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলার জন্য করোনার আরো অতিমাত্রায় ছড়িয়ে যাওয়ার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
আশহাব নামের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, গোদাগাড়ী উপজেলা মিলনায়তনে শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়ার জন্য আমাদের ডাকা হয়েছে। সকাল হতে আমরা বসে আছি তবে টিকা দেওয়ার জন্য নূন্যতম পরিবেশ দেখছি না। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এসে যে যেমন করে হুড়োহুড়ি করে টিকা কক্ষে ঢুকছে। এতো করোনার দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান।

বুধবার (১৯ জানুয়ারী) বেল ১১ টায় উপজেলা মিলনায়তনে সরেজমিতে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়। উপজেলা ক্যাম্পাস জুড়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী গায়ে গা ঘেঁষে এক জায়গা দাঁড়িয়ে আছে । এদের মধ্যে কেউ মুখে মাস্ক ও মাস্ক বিহীন ভাবে আছে। ছেলে মেয়েরা টিকাদান কক্ষে প্রচন্ড হুড়োহুড়ি করে ঢুকছে। পুলিশ দায়িত্বে থাকলেও প্রথমদিকে পুলিশকে নিস্ক্রীয় থাকতে দেখা যায় । পরে পুলিশ তৎপর হলেও তাদের কন্ট্রোল করতে পারছে না। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শিক্ষা অফিসের কোন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি।

আইহাই রাহি গ্রামের খুরশেদ আলী বলেন, আমি আমার বোনকে আইহাই রাহি উচ্চ বিদ্যালয় হতে টিকা দিতে এসেছি। এখানে এসে দেখছি টিকা দেবার জন্য নূন্যতম শৃঙ্খলা নেই। টিকা নিতে এসে দেখা যাচ্ছে করোনা বেশী ছড়াচ্ছে। এমন অবস্থাপনা জন্য তিনি উপজেলা প্রশাসন, শিক্ষা অফিস ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শুভ দৃষ্টি কামনা করেন।

নাম প্রকাশ না করে এক স্কুল শিক্ষক বলেন, যে ভাবে আমাদের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে তাতে কোন নিয়মের মধ্যে পড়ছে না। দূরদূরান্ত হতে এসে এই শীতে রাস্তায় অনেক ঝুঁকি হয়ে পড়ছে। টিকা কেন্দ্রে ঢুকতে ঠেলাঠেলিতে অনেকে পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছে।

আরেক শিক্ষার্থীর মা বলেন, হাজার হাজার শিক্ষার্থী এখানে এসে টিকা দিচ্ছে কিন্তু কোন স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। ব্যবস্থাপনাটাই মনে হচ্ছে ঠেলাঠেলি তাই আমার সন্তানকেউ ঠেলাঠেলি করে টিকা দিতে হবে। তবে করোনা আক্রান্ত হলে এর দায় কে নিবে?।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে গত ৮ জানুয়ারী হতে টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন হওয়ার পর গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা টিকা দেওয়ার কার্যক্রমে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও টিকা দেওয়ার তদারকির দায়িত্বে থাকলেও তিনি একদিনও সেখানে উপস্থিত হন নি।

এই বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ডা. রাশেদুল হাসান শাওন হলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় তাই যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে টিকা দেওয়ার ভেন্যু নির্ধারনের দিন তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান।

এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে দায়িত্বে থাকলেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: দুলাল আলমকে অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেন নি।

শিক্ষর্থীদের টিকা কার্যক্রমে চরম অবস্থাপনা বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ডা. রাশেদুল হাসান শাওনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ১২ হতে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার নির্দেশনা আছে। এই ক্ষেত্রে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে ৪৩ হাজারের শিক্ষার্থী রয়েয়ে। অল্প সময়ের মধ্যে টিকা দিয়ে শেষ করার নির্শেনা থাকায় এসব ব্যবস্থাপনা হতে পারে বলে জানান।

তিনি আরো জানান, গত ১৭ জানুয়ারী পর্যন্ত ১ হাজার ৩৬৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এগুলো দ্রুত দেবার জন্য তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগামীদিনে কাকনহাট পৌরসভা ও গোগ্রাম ইউনিয়নে টিকা দিওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান। তিনি আরো জানান। ফাইজারের টিকা এসি ঘর ছাড়া দেওয়া সম্ভব না তাই এমন ঘর নির্ধারণ করে দিতে এক জায়গায় বেশী শিক্ষার্থীদের সমাগম হচ্ছে। আগামীতে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মাথায় রাখা হবে বলে তিনি জানান।

গোদাগাড়্ ীউপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: জানে আলম বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা দেওয়ার নির্দেশনা থাকায় একটু এমন অবস্থা হয়ে যাচ্ছে। শির্ক্ষীরা নিজেরাও সচেতন হচ্ছে না। তবে তিনি এসব বিষয়ে খেয়াল রাখা ও ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com