শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন

পাবনায় চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৩৪৩ বার পঠিত
পাবনায় চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী!
ফটো সংগৃহীত
পাবনা সংবাদদাতা : পাবনায় চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে গয়েশপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুতাহার হোসেন মুতাই। তার প্রার্থীতা বাতিল চেয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর আপীল মোকাদ্দমা করার কথা জানিয়েছেন গয়েশপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সুজ্জাতুল ইসলাম।
অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যান প্রার্থী মুতাহার হোসেন মুতাই ১৯৯৮ সালের ওই এলাকার মো. সাইদুর রহমানের বড় ছেলে মো. মোফাজ্জল হোসেন ঝন্টু হত্যা মামলার এজাহাভুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।
মামলা ও অভিযোগের তথ্য সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২১ জুন ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পাবনা থানার মামলা নং-৪০। এই মামলায় ধারা ৩০২/৩৪ দণ্ডবিধি মোকাদম্মায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী বর্তমান চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান মুতাহার হোসেন মুতাই।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, একজন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি হতে পারে না। পলাতক আসামী মুতাহার হোসেন মুতাই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গয়েশপুর ইউনিয়ন থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের জুন মাসের ২১ তারিখে দিবাগত রাতে পাবনা জেলার গয়েশপুর রথখোলা পাড়ায় মো. আসকর আলী মোল্লার বাড়ির দক্ষিণ দুয়ারী ছাপড়া ঘরের দরজার খিল ভেঙ্গে প্রবেশ করে মো. সাইদুর রহমানের বড় ছেলে ভিকটিম মো. মোফাজ্জল হোসেন ঝন্টুকে তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। ঘটনার পরেদিন সকালে পাশবর্তী শালাইপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ভিকটিম ঝন্টুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। এই হত্যাকান্ডের ঘটনার পরে নিহত ঝন্টুর বাবা মো. সাইদুর রহমান বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। এই হত্যা মামলার পুলিশের তিনজন তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত কাজ শেষ করতে না পারায় পরবর্তীতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মামলার অবশিষ্ট তদন্তভার গ্রহণ করেন। অতঃপর মামলাটি সিআইডির উপরে ন্যাস্ত হয়।
২০০৬ সালের ২৫ মে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এফ এম আমিনুল ইসলামের আদালত দীর্ঘ শুনানী ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এই মামলার ৬ জনকে খালাস ও ৬ জনকে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন মো. শহিদুর রহমান শহিদ, মো. মোতাহার হোসেন মুতাই (পলাতক), আমিরুল ইসলাম, রঞ্জু, মো. আলাইদ্দিন ও শামসুল।
দন্ণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় উক্ত আসামীদের প্রত্যেককে যাব্বজীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন বিচারক। এই মামলার আসামী মো. মোতাহার হোসেন মুতাই (পলাতক) থাকায় তার গ্রেফতার কাল হতে অথবা আত্মসমর্পনের কাল হতে তার উপর অর্পিত দণ্ডাদেশ কার্যকর হবে বলে আদালত রায় প্রদান করেন।
প্রার্থীতা বাতিলের আপীলকারী গয়েশপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সুজ্জাতুল ইসলাম বলেন, একদিকে তিনি দলের দায়িত্বে থেকেও দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে, এর মধ্যে তিনি এলাকার চাঞ্চল্যকর ঝন্টু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত (পলাতক) আসামি।  নির্বাচনের আইন অনুযায়ী তিনি  প্রার্থী হতে পারেননা। দলের নীতি নির্ধারকেরা খুব দ্রুত তার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবেন।
মামলার বিষয়ে গয়েশপুর ইউনিয়নের সতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মোতাহার হোসেন মুতাই বলেন, আমার বিরুদ্ধে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি বিগত ৫ বছর চেয়ারম্যান ছিলাম। আমার নামে হত্যা মামলার ওয়ারেন্ট থাকলে আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যেতো। এই মামলায় আমি হাইকোর্ট থেকে জামিনে নিয়ে আছি। আমি এখনো গয়েশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। এই নির্বাচনে আমার জয় বুঝতে পেরে তারা নানাভাবে আমাকে হয়রানী করার চেষ্টা করছে।
অভিযোগের বিষয়ের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, কোনো মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। অভিযোগের আলোকে বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com