শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৭ পূর্বাহ্ন

মাদারীপুরের এমপিরা ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা উন্মুক্ত চান

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১
  • ২৯৬ বার পঠিত

মাদারীপুর সংবাদদাতা : ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী চান না মাদারীপুর জেলার সংসদ সদস্যরা। এ জন্য জেলার তিনটি নির্বাচনি এলাকার আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যরা একজোট হয়ে জেলার কোনও ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন না দিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছেন। অবশ্য এমপিদের এই চিঠিকে ব্যক্তিগত উল্লেখ করে জেলা আওয়ামী লীগ বলেছে, তারা নৌকার পক্ষে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে নাম বাছাই করে তাদের কাছে পাঠানো হলে তারা সেটা কেন্দ্রীয় কমিটিতে জমা দেবে। কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেই অনুযায়ী তারা কাজ করবে।

জানা গেছে, চলমান ইউপি নির্বাচনের প্রথম ধাপে গত ২০ জুন এ জেলার শিবচর উপজেলার ১৭টি ইউপির মধ্যে ১৩টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে কাউকেই দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি শিবচরে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হয়। সেখানে দেখা যায়, সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি এবং দলীয়ভাবে তাদের আলাদা করে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন করা উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অসম্ভব। তাই সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে শিবচরে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার সুপারিশ করে তার রেজুলেশন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ওই সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম লিটন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে শিবচর উপজেলার ১৩টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন না দেওয়া হলেও তফসিল ঘোষিত কালকিনি ও ডাসার উপজেলার ১৩টি ইউপিতে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে কেন্দ্রে চিঠি পাঠিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ।

এর আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-২০২১-এর ডামাডোল শুরু হলে চলতি বছরের জানুয়ারিতে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মাদারীপুর জেলার কোনও ইউপিতে নৌকা প্রতীক না দিয়ে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার অনুরোধ করা হয়। মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এবং মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) গত ২৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভাপতিকে চিঠি দিয়েছিলেন। দলের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াকে মাধ্যম করে ওই চিঠি দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে।

চিঠিতে দলীয় মনোনয়নে অনুষ্ঠিত আগের ইউপি নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ও ফলাফল তুলে ধরে বলা হয়, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক দিয়েছিল। ওই নির্বাচনে মাদারীপুরের চারটি উপজেলার ৫৯টি ইউনিয়নের মধ্যে শিবচর উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বাকি তিন উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৫টিতে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।

প্রার্থী বাছাইয়ের সময় জনপ্রিয় প্রার্থীরা মনোনয়ন বঞ্চিত, প্রার্থী বাছাইয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের পছন্দ-অপছন্দে গুরুত্ব প্রদান এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রার্থী বাছাইয়ে অনিয়মের কারণে নৌকার সব প্রার্থী জয়ী হতে পারেনি—এমনটি বলা হয় ওই চিঠিতে।

নির্বাচনে নৌকা প্রতীক জয়লাভ না করায় জনমনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউনিয়নের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্যের বন্ধন বিনষ্ট হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নেতাদের প্রতি তৃণমূল নেতাকর্মীদের আস্থার ঘাটতি হয়েছে।

সংসদ নির্বাচনে সব সময়ই মাদারীপুর জেলা থেকে নৌকা জয়ী হয় উল্লেখ করে দলীয় সভাপতিকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, দিনে দিনে নৌকা প্রতীকের প্রতি মানুষের সমর্থন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই জেলায় ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে কোথাও নৌকার প্রার্থী জয়ী না হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ব্যথিত হন, জনগণ কষ্ট পান এবং তাদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

চিঠিতে বলা হয়, ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মাদারীপুর জেলায় আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে নৌকা প্রতীক না দিলে আমাদের নির্বাচনি এলাকার নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট হবে না। এটা হলে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজেরাসহ উপজেলা ও জেলা কমিটির নেতারা বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে মুক্ত থাকবেন বলেও উল্লেখ করা হয়।

পৌরসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২০১৫ সালে দেশে প্রথমবারের মতো স্থানীয় সরকার পরিষদের শীর্ষ পদের নির্বাচন দলীয় মনোনয়নে অনুষ্ঠানের বিধান চালু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে দেশে প্রথমবারের মতো ইউপি চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নে ভোট হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ গোপালগঞ্জ জেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়াই সারাদেশে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। এতে অনেক জায়গায় নৌকার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরাই বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে নৌকাকে হারিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়ীও হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় মনোনয়নে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ইউপি নির্বাচন শুরু হওয়ার পর আওয়ামী লীগের তৃণমূলে কোন্দল-সংঘাত বাড়তে থাকে। এর জের ধরে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও দূরত্ব বাড়তে থাকে। এ কারণে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন ফোরামে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার প্রস্তাবও এসেছে। মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিত্র তুলে ধরে ইতোপূর্বে দলীয় ভিত্তিতে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান বিলোপের অনুরোধও করেন।

দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে এ বিষয়ে অনুরোধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করে শাজাহান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে যারা প্রার্থী হন তাদের সবাই আমাদের দলের সমর্থক। দেখা যায় নির্বাচনে যিনি নৌকা পাচ্ছেন তিনিও আওয়ামী লীগের। তার বিরুদ্ধে যারা প্রার্থী হচ্ছেন তারাও আমাদের। ফলে নৌকার বিরুদ্ধে কেউ জয়ী হলে আমাদের হৃদয়ে আঘাত লাগে। আবার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়। এ জন্য আমরা তিন জন এমপিই আমাদের জেলায় প্রার্থী মনোনয়ন না দিয়ে উন্মুক্ত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি। এ বিষয়ে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’

ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত শিবচর উপজেলার ১৩টি ইউপিতে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেখানে যারা জিতেছেন তারা সবাই আমাদের লোক। আশা করছি জেলার বাকি ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে তিনি আমাদের অনুরোধ রাখবেন।’

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল দে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমপিদের চিঠিটি তাদের ব্যক্তিগত। এটা কোনও দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। আমরা দলীয় মনোনয়ন ও নৌকা প্রতীকের পক্ষে। ইতোমধ্যে কালকিনি ও ডাসার উপজেলার যেসব ইউনিয়নের তফসিল ঘোষণা হয়েছে সেখানে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা থেকে প্রার্থী বাছাই করে যাদের নাম পাঠিয়েছে, আমরা সেটা রেজুলেশন করে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমরা চাই দলীয় মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে ভোট হোক।’

শিবচর উপজেলার ১৩ ইউপির কাউকে নৌকা না দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘উপজেলা থেকে প্রার্থী বাছাই করে আমাদের কাছে পাঠালে আমরা সেটা রেজুলেশন করে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেই। শিবচর উপজেলা থেকে কোনও প্রার্থীর তালিকা আমাদের কাছে পাঠানো হয়নি। যার কারণে সেটা কেন্দ্রে পাঠানোর দরকার ছিল না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনও চিঠির বিষয় আমার জানা নেই। এটা মাদারীপুরের জেলা আওয়ামী লীগ বলতে পারবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com