বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

ফরিদপুরের ১৫ ইউপিতে আ’লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী ২০ জন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০২১
  • ৩১৪ বার পঠিত

ফরিদপুর সংবাদদাতা :  ‘আমরা পরিবারগতভাবে আওয়ামী লীগ। আমি ও আমার মা দেলোয়ারা বেগম ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। দেওয়া হয়নি।  আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দীর্ঘদিন ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। পরিবারগতভাবে আমরা ক্ষুব্ধ। আমি আজ বিদ্রোহী। তবে আমরাই প্রকৃত আওয়ামী লীগ।

দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া নিয়ে এভাবেই নিজের অবস্থান তুলে ধরেন নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নে আওয়ামী লগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফরিদপুর জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য কামাল হোসেন মিয়া।

শুধু কামাল মিয়াই নন, আগামী ১১ নভেম্বর ফরিদপুরের নগরকান্দা ও সালথা উপজেলার যে ১৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তার ১৫টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ২০ জন।

তবে নগরকান্দার লস্করদিয়া এবং সালথার ভাওয়াল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কোন বিদ্রোহী প্রার্থী নেই।

যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের বেশির ভাগেরই দলীয় পদ রয়েছে। তৃণমূল আওয়ামী লীগ থেকে সুপারিশ করে যে নাম কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে পাঠানো হয়েছিল সে তালিকায় ওই নামগুলি ছিল। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

সালথা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী। বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা ১০ জন। এর মধ্যে একটিতে তিন, একটি দুই এবং বাকিগুলোতে একজন করে।

সালথার রামকান্তুপুরে বিদ্রোহী প্রার্থী তিনজন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ইমারত হোসেন, উপজেলা কৃষকলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ইসারত হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন। যদুনন্দীতে দুইজন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য নুরুজ্জামান ও আওয়মী লীগের সমর্থক কামরুজ্জামান মোল্লা।

এছাড়া আটঘরে আওয়ামী লীগ কর্মী মো. শাহজাহান, মাঝারদিয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম মিয়া, গট্টিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার রেজাউর রহমান, বল্লভদীতে উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি সাইফুর রহমান শাহীন এবং সোনাপুরে আওয়ামী লীগ সমর্থক সোহেল রানা।

গট্টি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার রেজাউর রহমান বলেন, আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হযনি। অথচ এ আওয়ামী লীগের জন্য আমার বাবা ও আমি কি না করছি। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় আমার পদ কেড়ে নেওয়া হতে পারে। তাতে আমার কিছু আসে যায় না।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন মিয়া বলেন, বড় দল, অনেক নেতাকর্মী। পদ পদবি কিংবা নির্বাচন করতে তো অনেকেই চায়। সবাইকে তো আর মনোনয়ন দেওয়া যায় না। এজন্যই এত বিদ্রোহী প্রার্থী। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনার নৌকার বিপক্ষে কাজ করার সুযোগ নেই। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বিদ্রোহীদের বসিয়ে দেওয়ার জন্য।

নগরকান্দা উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টিতে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ১০ জন। দুটি ইউনিয়নে দুইজন করে এবং ৬টি ইউনিয়নে একজন করে বিদ্রোহী প্রার্থী রযেছেন।

রামনগর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান কুদ্দুস ফকির এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাইমুদ্দীন মন্ডল।

চরযশোরদীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম প্রচার সম্পাদক ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খন্দকার ওয়াহিদুল বারী।

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম প্রচার সম্পাদক ও চরযশোরদীর ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান বলেন, দল করি কিন্তু মনোনয়ন পাই না। গতবারও আমি বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করে জিতেছি। তবে আওয়ামী লীগ আমার বুকে।

তালমায় জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য  মো. কামাল হোসেন, পুরপাড়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থক আতাউর রহমান, কোদালীয়া শহীদ নগরে আওয়ামী লীগ সমর্থক ইমামুল হক, কাইচাইলে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কবির হোসেন, ডাঙ্গীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান বুলবুল সরদার এবং ফুলসূতীতে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক খন্দকার তৌহিদুর রহমান।

নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার যুক্তি তুলে ধরে তৌহিদুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর নৌকা সঠিক জায়গায় যায়নি। গিয়েছে হাইব্রিড ব্যাক্তির কাছে। আমি জন্মসূত্রে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে আওয়ামী লীগ হয়েছি। আর যিনি নৌকা পেয়েছে তিনি ২০১১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন তার আগে জাতীয় পার্টি, বিএনপি করতেন। তাই দলীয় সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিতে পারিনি।

আওয়ামী লীগ মনোনীত একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করে বলেছেন, বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকায় নির্বাচনে তাদের বিজয় কঠিন হয়ে পড়েছে। দলীয় প্রধানসহ আওয়ামী লীগের উর্ধতন নেতারা হুঁশিয়ারি করলেও তাতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা তা আমলেই আনছে না।

নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসন বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের নাম, পদবী ও মুঠোফোন নম্বর উল্লেখ করে জেলা কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে বহিস্কারের সুপারিশসহ পত্র পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এ দুই উপজেলার ইউনিয়নসমূহে ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ১১ নভেম্বর। গত মঙ্গলবার ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com