এনামুল হকের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কোর্ট বাজার এলাকায়। উপজেলার ধায়নগর ইউনিয়নের নাককাটিতলা-বালুটুঙ্গী গ্রামে তার আমের বাগান। সেই বাগানেই বর্তমানে তার ছোট-বড় মিলিয়ে ৬০০টি গোল্ডেন ম্যাঙ্গো আমের গাছ রয়েছে। এর মধ্যে বড় আমের গাছ রয়েছে ১১৪টি। এক একটি পরিণত গাছ থেকে আড়াই থেকে তিন মণ আম পান তিনি।
এনামুল হক জানান, বছরে তিন থেকে চারবার একই গাছে আম ধরে। এক ডালের আম শেষ না হতে আরেক ডালে আমের মুকুল চলে আসে। আর আমের দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। যেহেতু অসময়েও এই আম পরিপক্ক হয়। সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা কেজি পর্যন্ত আম বিক্রি করেছি। আর ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা মণ আমের মৌসুমেই বিক্রি হয়। তবে আমরা আমের মৌসুমে গোল্ডেন ম্যাঙ্গোর মুকুল ভেঙে দিই যাতে অন্য সময় বেশি আম ধরে। আমের ওজনও ভালো হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এনামুল হক স্বপনে’র বারোমাসি আম গোল্ডেন ম্যাংগো’র বাগানে একই আম গাছে প্রসষ্ফুটিত মুকুল, গুটি আম এবং পরিপক্ক রঙ্গীন আম ঝুলছে। নতুন জাতের আমের স্বাদ, রং, ঘ্রাণ কেমন, বর্তমান বাজারে এর মুল্য কত? এমন প্রতিক্রিয়ায় গোল্ডেন ম্যাংগো চাষী কৃষি উদ্যোক্তা এনামুল হক জানান, ভিয়েতনামী এ আম সহনীয় মিষ্টি। যার ওজন পরিপক্ক অবস্থায় এক কেজিতে তিনটি এবং সর্বোচ্চ ৭০০ গ্রাম ওজন হয়ে থাকে। আম পাকা অবস্থায় হলুদাভ আকার ধারণ করে। যা মানুষে দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। বছরে তিন থেকে চারবার আম ধরে। অসময়ে উৎপাদিত হওয়ায় আমের মুল্য ছয় থেকে সাতশ টাকা প্রতি কেজি। সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা কেজিও এই আম বিক্রি হয়। গতবছর ৪০ হাজার টাকা মণে আম বিক্রি করেছেন বলে দাবী করেন এনামুল হক।
তিনি জানান, তিন বছর পূর্বে ভিয়েতনামে এই আম গাছ দেখে তারও ইচ্ছে জাগে ‘গোল্ডেন ম্যাঙ্গো’ বাগান করার। প্রবাস থেকে ফিরে তিনি অনুধাবন করেন দেশে বেকার সমস্যা দূর করতে উদ্যোক্তা হওয়ার বিকল্প কিছু নাই। তার বাগানে নিয়মিত ৬ থেকে ৭ জন মানুষ কাজ করেন। কম হলেও সাতজন লোকের কর্মসংস্থান করতে পেরেই তিনি আনন্দিত।
প্রতিবেশী কৃষক খুরশেদ আলমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রায় এই বাগানে আসি। আমি ভাল-মন্দ বা বাগান পরিচর্যা বিষয়ে জ্ঞান ধারণ করবার চেষ্টা করি। খুরশেদ আলম আরও বলেন এটি একটি লাভজনক ব্যবসা। আমি আগামীতে ১০ বিঘা জমিতে গোল্ডেন ম্যাংগো চাষ করবার পরিকল্পনা করছি।
এনামুল হকের বাগানের কর্মচারী শাজাহান আলী জানান, বর্তমানে এ অঞ্চলে কাজকর্ম কম। কিন্তু এনামুল নতুন প্রজাতির আম চাষ করায় আমি তার বাগানে কাজ করতে পারছি। আমরা বাগানের পরিচর্যা করি। শাজাহান আলির মত আরও ৬/৭ কাজ করছেন, যারা নিয়মিত বাগান পরিচর্যা করেন।
নতুন কৃষি উদ্যোক্তা এনামুল হকের শুধু বাগান নয়, হক নার্সারি নামে একটা নার্সারিও রয়েছে। হক নার্সারি ও গোল্ডেন ম্যাংগো বাগানের ম্যানেজার সাব্বির আহমেদ জানান, গোল্ডেন ম্যাংগো একটি সুস্বাদু আম এতে সঠিক পরিচর্যা করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। গাছ সম্পর্কে তিনি জানান, এবার গোল্ডেন ম্যাংগো গাছে চাহিদা ব্যাপক। প্রতিটি গোল্ডেন ম্যাঙ্গো গাছের চারা আকারভেদে ১৩০ টা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি-সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, ভিয়েতনাম গোল্ডেন ম্যাংগো একটি বিদেশি জাতের আম। তবে এই আম চাষ করার জন্য সরকারি ছাড় প্রদানকারী সংস্থা থেকে এখনও ছাড় দেওয়া হয়নি। তবে এনামুল হক বিদেশ থেকে জাত এনে ব্যক্তি উদ্যোগে চাষাবাদ করছেন। গোল্ডেন কালারের একটি আম যার নাম বারি আম-১৩ উদ্ভাবন করেছেন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। কিন্তু আমটি এখনো বাজারে চাষাবাদ করার জন্য ছাড় দেওয়া হয়নি। তবে গোল্ডেন ম্যাঙ্গো অসময়ে উৎপাদিত আম। বারোমাসী আম হলেও বড় পরিসরে এই আম চাষাবাদ করা সম্ভব না।