বিডি ঢাকা ডেস্ক
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে চলছে সংস্কারের পালা। সংবিধান থেকে বিচার বিভাগ সর্বত্র লেগেছে সংস্কারের হাওয়া। সরকারি বিভিন্ন নিয়মনীতি ও প্রতিষ্ঠান সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে দেশের জনগণের চিন্তা চেতনারও সংস্কার প্রয়োজন। সরকার যতোই সংস্কারের রূপরেখা প্রণয়ন করুক না কেন, জনগণের মাঝে মানবিকতা, সততা ও নৈতিকতার অভাব থাকলে প্রকৃত সংস্কার কখনোই সম্ভব নয়। সে জন্য প্রথমেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে নজর দেওয়া জরুরি। আমরা অনেক বিদ্যা অর্জন করছি, অনেক ডিগ্রি হচ্ছে; কিন্তু মানবিকতা- মনুষ্যত্ববোধ তৈরি হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের সামাজিক,
রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন সম্পর্কে সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটা বড় ভূমিকা থাকে। অথচ বাংলাদেশে পুরনো ও নবপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নানা সংকটে জর্জরিত। ফলে চরমভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে নতুন ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ প্রণয়ন করে তা যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শিক্ষাখাতে পরিবর্তন আনা সময়ের দাবি। শিক্ষা ব্যবস্থা যেন সার্টিফিকেট কেন্দ্রিক না হয় সেজন্য কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
গবেষণা খাতে একটি স্মার্ট এমাউন্ট বরাদ্দ করে উচ্চশিক্ষায় গবেষণার সুযোগ তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি খেয়াল রেখে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে মনোবিজ্ঞান বা মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষকদের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা এতোটাই তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে যে- একজন শিক্ষকের ছেলে মেয়েও এখন আর নিজের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে শিক্ষকতাকে বেছে নিতে চান না। শিক্ষাখাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ, আন্ত-ক্যডার বৈষম্য নিরসন এবং
যথাযথ পদোন্নতির ব্যবস্থা তৈরি করে প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকট নিরসন এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগ ও ভর্তি প্রক্রিয়ায় দলীয় হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বমুক্ত শিক্ষাঙ্গন নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেডিকেল সেন্টার প্রতিষ্ঠা
এবং পুরনো সেন্টারগুলোকে বেহাল দশা থেকে মুক্ত করতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্র চর্চার একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম ছাত্র সংসদ। নতুন নেতৃত্ব তৈরি ও দেশ গঠনে ছাত্র সংসদ একটি সম্ভাবনার দ্বার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির নামে অপরাজনীতি বন্ধের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি চর্চার পরিবেশ তৈরির জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে, দেশের যে কোনো সংকটে যে ছাত্র সমাজ পরমায়ু বিসর্জন দিতে দুবার ভাবেনি সে ছাত্র সমাজকে একটি উৎকৃষ্ট এবং উপযুক্ত শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষাব্যবস্থা উপহার দেওয়া সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। ছাত্রদের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর বিকল্প নেই।