বিডি ঢাকা ডেস্ক
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকায় গভীর নলকূপের সাহায্যে দীর্ঘদিন ধরে পানি উত্তোলনের ফলে যখন ভূগর্ভের পানির সংকট দেখা দিচ্ছে, যে কারণে কিছু এলাকায় যখন বোরো আবাদ নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে তখন নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিএমডিএ’র ২৫০ কোটি টাকার ‘বরেন্দ্র এলাকার খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প’। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ।
জমিতে সারা বছর নিরবচ্ছিন্ন সেচ দিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়বন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় বেশ কিছু খাল ও খাড়ি পুনর্খনন করা হয়েছে এবং এ কাজ এখনো চলমান রয়েছে। মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি তুলে সেইসব খালে ও খাড়িতে সংরক্ষণ করা হবে এবং সোলার বিদ্যুতের মাধ্যমে ৯৮টি সেচ পাম্প দিয়ে সেই পানি কৃষকের জমিতে সরবরাহ দেয়া হবে।
বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলা গোবরাতলা ইউনিয়নের গণির মোড় এলাকায় মহানন্দা নদীতে ১টি পন্টুন স্থাপন করে পন্টুনের ওপর ৮টি প্রতিটি ৫ কিউসেক ক্ষমতার সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প দিয়ে মোট ৪০ কিউসেক পানি উত্তালন করা হবে। ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ২টি এবং ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ২টি মোট ৪টি ভূগর্ভস্থ ৪৫০-৫০০ মি.মি. ডায়া এমএস পাইপের মাধ্যমে তেঘড়িয়া-মির্জাপুর খাড়িতে পানি সরবরাহ করে সংরক্ষণ করা হবে। খালে ৩০টি সোলার পাম্প স্থাপন করে খালের উভয় পাশে পানি সেচের মাধ্যমে ৫৭০ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হবে। এছাড়া ওই এলাকায় ৪০টি গভীর নলকূপ দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে বালিপাথর নির্গত হয়ে প্যাক্টআপ হওয়ায় সেচ কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প দিয়ে সরাসরি ওই গভীর নলকূপ এলাকায় ৬০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হবে। তাছাড়া ৭ কিলোমিটার তেঘড়িয়া খাল পলি পড়ে ভরাট হওয়ায় পুনঃখনন করা প্রয়োজন হচ্ছে। ওই এলাকায় সেচের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে ফসল উৎপাদন করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এক ফসলি জমি তিন ফসলি জমিতে পরিণত হবে। ফলে প্রায় ৯৩৬০ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ’র চাঁপাইনবাবগঞ্জ রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আল মামুনুর রশীদ বলেন, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর এলাকায় প্রকল্পের কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়েছে এবং গোমস্তাপুরের কাজ এরই মধ্যে ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার গোবরাতলার কাজটি ২০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের ধাইনগর অংশের পানি সরবরাহ আগামী এক মাসের মধ্যেই শুরু হবে। এছাড়া অন্য দুটির কাজ শেষ হতে আরো মাস ছয়েক লাগবে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় সবমিলিয়ে ২ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন।
তিনি বলেন— এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়ন, নাচোল উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন ও গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর, রাধানগর ও পার্বতীপুর ইউনিয়নে এবার বোরো আবাদা না করে গমসহ সেচ কম লাগে এমন ফসল চাষাবাদ করতে কৃষকদের বলা হয়েছে। কারণ, এইসব অঞ্চলের ভূগর্ভের পানি অনেক নিচে নেমে গেছে। এই ভূগর্ভের পানির বিষয়টি মাথা রেখেই ‘বরেন্দ্র এলাকার খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প’টি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষে বরেন্দ্র অঞ্চলের পানির সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে।
এদিকে মহানন্দায় রাবার ড্যামে পানি সংরক্ষণ শুরু হওয়ায় ভূউপরিস্থ পানিরও অনেকটা সমাধান হচ্ছে।