বিডি ঢাকা ডেস্ক
ঢাকার দোহারের সীমান্তবর্তী ইমামনগর থেকে নবাবগঞ্জের বান্দুরা ইউনিয়নের নয়ানগর পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার ও ইছামতি নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছের এলাকাবাসী। সম্প্রতি এলাকাবাসীর ব্যানারে মানবন্ধন শেষে বিক্ষোভ ও মৌন মিছিল করেন তারা। সকল ব্যস্ততা ফেলে সবকিছু ভুলে একটি ব্রিজ ও রাস্তাটি পাঁকাকরণের দাবিতে একট্টা হয়েছিলেন এলাকার ৫ শতাধিক নানা বয়সী মানুষ। স্থানীয়রা জানান, নবাবগঞ্জের বান্দুরা ইউনিয়নের নয়ানগর থেকে দোহারের ইমামনগর যাওয়ার রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গা। স্বাধীনতার পরবর্তী বারবার সরকার পরিবর্তন হলেও এ রাস্তাটি উন্নয়নে তেমন কোন ভূমিকা রাখেনি কোন জনপ্রতিনিধিরা। রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০/১২ হাজার মানুষ যাতায়াত করতে হয় পায়ে হেঁটে। রাস্তাটি ভাঙ্গা হওয়ায় সহজে কোন যানবাহন পাওয়া যায় না এখানে। ফলে অর্থনৈতিকসহ নানা ভাবে পিছিয়ে পড়েছে কৃষি প্রধান এ গ্রামটি। এছাড়া স্থানীয় ইছামতি নদীতে সেতু না থাকায় বিভিন্ন স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে দীর্ঘপথ ঘুরে গন্তব্যস্থলে যেতে হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগীদেরকে। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে দুর্ভোগ বেড়ে যায় বহুগুণ।
তারা আরো জানান, শিক্ষার্থী ও সাধারন মানুষরা যাতে নয়ানগর থেকে হাসনাবাদ বান্দুরা সহজে যেতে পারেন সে লক্ষ্যে এলাকাবাসী ইছামতি নদীতে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচলের ব্যবস্থা করেন। তবে সেই বাঁশের সাকো এখন গলার কাঁটা হয়েও দাঁড়ায়। অনেকেই এ বাঁশের সাকো পার হতে গিয়ে হাত-পা ভেঙ্গেছে। আবার অনেকেই এ সাঁকো দিয়ে পার হতে গিয়ে সাঁতার না জানার কারনে মারাও গেছে।
নয়ানগর এলাকার বাসিন্দা সুরভী রোজারিও বলেন, নির্বাচন হলে সবাই প্রতিশ্রুতি দেয় রাস্তাটি পাঁকা হবে আর ইছামতি নদীতে নয়ানগর-হাসনাবাদ তালতলায় একটি ব্রিজ হবে। প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা ভোট নিয়ে গেলেও কেউ কথা রাখেনি। বৃদ্ধ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা এ সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে পারে না। রাতে কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিবো সেই উপায়ও নেই। টাকা দিলেও গাড়ি পাওয়া যায় না। কি দুর্ভোগে যে আছি তা আমার একমাত্র নয়ানগরবাসীই জানে।
ইমামনগর এলাকার শেখ সাদিয়া জানান, নয়ানগর এলাকায় কোন মানুষ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পরে। রাস্তা খারাপ হওয়ায় এ এলাকায় কোন যানবাহন সহজে প্রবেশ করেনা। এছাড়া সড়ক ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ঠিকমত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা।
নয়ানগরের শাহাদাত খান, আবুল হোসেন ও বাবু জানান, এক সপ্তাহ আগে চিকিৎসার অভাবে আমাদের এখানে একজন মারা গেছে। অসুস্থ হয়ে গেলেও রাস্তা খারাপ হওয়ায় কোন গাড়ি পাইনি তাকে হাসপাতালে নিতে। গত ২৫ নভেম্বর গর্ভবতি এক মহিলা ব্রিজ পাড় হতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেখানেই তার গর্ভপাত হয়ে যায়। এরআগেও এর রকম ঘটনা ঘটেছে। নবাবগঞ্জের মত এলাকায় এখনও এমন এলাকা আছে কেউ ভাবতেও পারবে না। আমাদের সকলের প্রাণের দাবি একটি ব্রিজ।
স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল খান বলেন, প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষ এ রাস্তাটি দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। রাস্তাটি এতই খারাপ কোন গাড়ি চলাচল করতে পারে না। কেউ যদি অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে কাধে করে তাকে হাসপাতালে নিতে হয়। বাঁশের সাকোটি ভাঙ্গ তাই বয়স্করা যাতায়াত করতে পারে না। বান্দুরা বাজার, স্কুল ও গির্জায় নদী পাড় হয়ে যেতে সময় লাগে ৫ মিনিট। কিন্ত এখন আমাদের প্রায় ৩০/৪০ মিনিট রাস্তা ঘুরে যেতে হয়।
স্থানীয় সামসুল বলেন, যে সরকারই আসুক না কেন আমাদের এখানে কাজ করে না। নয়ানগর-হাসনাবাদ তালতলা একটা ব্রিজের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আবেদন করতাছি সরকারের কাছে কিন্ত কোন কাজই হচ্ছে না। ঐপাশে ৪টা স্কুল আছে, গত বর্ষায় নৌকা ডুবে শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। যত দ্রুত সম্ভব ব্রিজটা করার আবেদন আমাদের।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া স্কুল শিক্ষার্থীরা জানান, ভাঙ্গ বাঁশের সাকো দিয়ে যাতায়াত করতে তাদের অনেক ভোগান্তি পোঁহাতে হয়। স্কুলের সময় অনেক মানুষ চাপ পড়ে, তাই অনেক সময় স্কুলে যেতে দেরি হয়ে যায়। তাছাড়া মাঝে মাঝেই তারা পড়ে গিয়ে আহত হয়।
দ্রুত হাসনাবাদ থেকে নয়ানগর ইছামতি নদীর উপরের সেতু নির্মাণ ও রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানান এলাকাবাসী।