সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০৭ অপরাহ্ন

পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৭ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

 

সারাবিশ্বে প্লাস্টিকের ব্যাবহার ব্যাপক।২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী পুরো পৃথিবীতে একবছরে ৪৬০ মিলিয়ন টনের প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হয়েছে যারমধ্যে কেবলমাত্র ৯% প্লাস্টিক রিসাইকেল হচ্ছে। গবেষকদের মতে ২০৬০ সাল নাগাদ প্লাস্টিক পণ্যের পরিমাণ ১.২ বিলিয়ন টন এ পৌঁছে যাবে। বেশিরভাগ প্লাস্টিক হলো পলি-ইথিলিন, পলিপ্রোপিলিন, পলিস্টাইরিন বা পিভিসি মনোমারের পলিমার। যখন প্লাস্টিক ভেঙে, ক্ষয়ে, বিদীর্ণ হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়, যদি এই কণার ব্যাস ৫মি.মি. এর ছোট হয় তখন তাকো মাইক্রপ্লাস্টিক বলে।বিশ বছর আগে আমরা ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক’ শব্দের সাথে পরিচিত হই।এই মাইক্রোপ্লাস্টিক শুধু সমুদ্রের তলদেশ মারিয়ানা ট্রেঞ্চে পৌছায়নি পৌঁছে গেছে মাউন্ট এভারেস্টেও।খাদ্য শিকলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে এক জীবের দেহ থেকে অন্য জীবে।এখন মানবশরীরের রক্তের মধ্যেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে।

প্রাণীকুলের মাঝে সবচেয়ে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে মাছ ও ঝিনুকের দেহে।এছাড়াও এটি সমুদ্র তীরবর্তী বসবাসরত প্রাণীদের দেহেও বেশি পরিমাণ পাওয়া গেছে তাদের যকৃত,পাকস্হলী,অন্ত্র ও মাংসপেশিতে।গৃহপালিত পশু যেমনঃ কুকুর, বিড়ালের মধ্যেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

আমাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যাবহার্য নানাবিধ জিনিস যেমনঃ খাদ্য,কসমেটিকস, ড্রিংকস,খাদ্যের প্যাকেট ইত্যাদি থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের দেহে শ্বাসপ্রশ্বাস, গলাধঃকরণ ও ত্বক সংস্পর্শের মাধ্যমে প্রবেশ করে।চাকা ও রাস্তার ঘর্ষণে বাতাসে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে।এছাড়া প্লাস্টিকের কাটিং বোর্ড,বোতলের পানি,সমুদ্রের মাছ,হিমালয়ের গোলাপি লবন,আপেল এমনকি গাজর থেকেও মানবদেহে সরবরাহ হয় এই প্লাস্টিকের।গবেষণায় দেখা গেছে, চা তৈরির জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিকের তৈরি টি-ব্যাগ থেকে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানোপ্লাস্টিক নির্গত হয়, যা শরীরে প্রবেশ করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।তাছাড়া কাগজের তৈরি কাপ কিংবা ওয়ান টাইপ কাপেও প্লাস্টিকের স্তর থাকে। এক কাপ গরম পানিতে এই ধরনের একটি টি-ব্যাগ ডুবানোর সময় প্রায় ১১.৬ বিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ৩.১ বিলিয়ন ন্যানোপ্লাস্টিক মুক্তি পায়। এই কণাগুলি এতই ক্ষুদ্র যে মানবদেহের কোষে প্রবেশ করতে সক্ষম।বিশেষ করে নাইলন এবং পলিপ্রোপিলিনের মতো উপাদানে তৈরি টি-ব্যাগগুলো এই সমস্যার জন্য দায়ী।

গবেষকরা জানিয়েছেন, এই প্লাস্টিক কণাগুলি দেহে প্রদাহ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বিপাকীয় জটিলতা,ইমিউনিটি ডিসওর্ডার, নিউরোটক্সিসিটি এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করতে পারে। এটি দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সার ও প্রজনন সমস্যার মতো গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।প্লাস্টিকের কণার কারণে মূলত কোলন ও ফুসফুসে ক্যান্সার সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

সমাধান হিসেবে,পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্যের ব্যাবহার সম্পুর্ণভাবে পরিহার করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা প্লাস্টিক-মুক্ত চা ব্যাগ বা লুজ-লিফ চা ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। বায়োডিগ্রেডেবল চা ব্যাগ এবং ফিল্টার করা পানি ব্যবহার করেও এই ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব। যেসব ক্ষেত্রে পলিথিনের ব্যাবহার আছে সেসব ক্ষেত্রে পলিথিনের বিকল্প জিনিস ব্যাবহার বৃদ্ধি করতে হবে। যেমনঃ প্লাস্টিকের কাপের পরিবর্তে স্টিল, বাঁশ অথবা পচনশীল পদার্থের তৈরি কাপ, পাটের ব্যাগ বা কাগজের মোড়ক ব্যাবহার করা অর্থাৎ প্লাস্টিকের বিকল্প জিনিস ব্যাবহার করতে হবে। সমুদ্রের জলে প্লাস্টিক প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেমনঃএকবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বোতল, ব্যাগ, স্ট্রো ইত্যাদি ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। পরিবর্তে বারবার ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ, বোতল, স্ট্রো ইত্যাদি ব্যবহার করুন।প্লাস্টিকের বর্জ্য যতটা সম্ভব পুনর্ব্যবহার করুন।অর্থাৎ জীবনের সকল ক্ষেত্রে পলিথিন ব্যাবহার বন্ধ করতে হবে।

যেহেতু আমাদের বর্তমান ইন্টেরিম সরকার পলিথিন ব্যাগ ব্যাবহার নিষিদ্ধ করেছে তাই সকলকেই উচিৎ এই আইন মেনে চলা এবং প্লাস্টিক উৎপাদন নিয়ন্ত্রণেও কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।প্লাস্টিকের বিকল্প উপকরণ উৎপাদন ও ব্যবহারে উৎসাহিত করা।প্লাস্টিক দূষণ একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা এবং এর সমাধানের জন্য সবার যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আমরা সকলেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবেলায় অবদান রাখতে পারি।মনে রাখবেন প্লাস্টিকের ব্যাবহার কম করেই পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ রোধ করা সম্ভবপর হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com