বিডি ঢাকা ডেস্ক
জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে হয়রানিমূলক প্রি-পেইড মিটার স্থাপন বন্ধ করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ। অবিলম্বে গণবিরোধী প্রি-পেইড মিটার স্থাপন বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেন তারা।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে কলেজ রোড-সংলগ্ন নেসকো ভবনের সামনে রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন—রাজনীতিবিদ আমিন উদ্দিন বিএসসি, এবিএম মসিউর রহমান, নূরে আজম দীপু, মেহেদী হাসান তরু, রেদোয়ান ফেরদৌস, অ্যাডভোকেট নরেশ চন্দ্র সরকার, সমাজকর্মী স্বপন চন্দ্র রায়, কবি ও লেখক আহমেদ মওদুদ, শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সংগঠক সবুজ রায়, নিপীড়নবিরোধী নারী মঞ্চের সংগঠক সুলতানা আক্তার প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মতামতকে তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচারী কায়দায় নেসকো কর্তৃপক্ষ রংপুরে প্রিপেইড মিটার স্থাপন অব্যাহত রেখেছে। প্রিপেইড মিটার পদ্ধতিতে গ্রাহকদের আগাম টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ ক্রয় করতে হবে। যতক্ষণ প্রিপেইড কার্ডে টাকা থাকবে ততক্ষণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে। যা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এই প্রিপেইড মিটার গ্রাহকদের নতুন করে হয়রানি ও দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে।
বক্তারা আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছিল। রেন্টাল-কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। যার খেসারত জনগণকে এখনো দিতে হচ্ছে। সারা দেশের মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবার আওতায় নিয়ে আসার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। অথচ সেটির পরিবর্তে একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। গণশুনানি ব্যতীত নেসকো কর্তৃপক্ষ একতরফাভাবে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে না। ডিমান্ড চার্জ ও সার্ভিস চার্জের নামে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। এসব বন্ধ করতে হবে।
বিদ্যুৎ খাতের বিগত সরকারের অনিয়ম দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রিপেইড মিটারে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি। এই মিটার স্থাপনের নামে বিদ্যুৎ বিভাগে ঘাপটি মেরে থাকা পতিত আওয়ামী দোসররা আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন। তারা প্রিপেইড মিটার স্থাপনের আড়ালে বাণিজ্য করে নিজেদের পটেক ভারী করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। জনগণের স্বার্থবিরোধী এই প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ করা না গেলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে মানুষ ভুল বুঝবে। তাই অবিলম্বে গণবিরোধী প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধে সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টাকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে আগামীতে রংপুরবাসী বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।
নেসকো রংপুর সার্কেল-১-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসনাত জামান বলেন, গণশুনানি অচিরেই করা হবে। তা ছাড়া জেলার সমন্বয় সভা ও বিভাগীয় কমিশনার এবং সিটি কর্পোরেশনের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। প্রিপেইড মিটারের ভালো দিক রয়েছে, তবে অনেকে হয়ত ভালোভাবে বিষয়টি জানেন না, যার কারণে গ্রাহক পর্যায়ে নেতিবাচক আলোচনা হচ্ছে।
এর আগে, গত ২৬ ডিসেম্বর বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থরক্ষা কমিটি এবং সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহক পৃথকভাবে মানববন্ধন করে। গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষায় চার দফা দাবি উপস্থাপন করে গত ১৭ ডিসেম্বর নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সে সময়ে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে গণশুনানির আশ্বাস দিলেও তার আগেই প্রিপেইড মিটার সংযোগ স্থাপন শুরু করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।