দেশের অন্যতম প্রাচীন ও সর্ব বৃহৎ রামরাই দীঘি বা রাণীসাগর অতিথি পাখিদের আগমনে মুখরিত। পাখি দেখতে দর্শনার্থীদের ভীড়। পুরো জলাশয় সেজেছে নতুন সাজে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাখি ও জলাশয়ের প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর । প্রতিবছর শীত এলেই এসব পাখি এখানে এসে প্রকৃতিকে সাজায় নতুন সাজে।
এক কথায় বলা যায় এটি হল অতিথি পাখিদের একটি অভয়ারণ্য। ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার রাজা টংকনাথের রাজবাড়ির পরেই এটিও একটি পর্যটন কেন্দ্র রামরাই দীঘি। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির সমাগম হয়েছে এখানে। পাখিদের কলকাকলিতে পুরো এলাকা মুখরিত। পাখি প্রেমি ও সৌন্দর্য পিপাসুরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মন্ডিত রামরাই দিঘী পর্যটন কেন্দ্র’র পাখিগুলোকে দেখার জন্য ছুটে আসেন। রামরাই দিঘি বা রাণীসাগরে এখনো প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে অতিথি পাখির দল। পাখিদের মুহুর্মুহু কলতানে পুরো দিঘি এলাকা পরিণত হয়েছে পাখির স্বর্গরাজ্যে। সন্ধ্যা নামলেই দিঘিপাড়ের লিচু বাগানে আশ্রয় নেয় এসব পাখি। ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় খাবারের সন্ধানে রামরাই দিঘিতে ভিড় জমায় তারা। পাখিদের এই মুহুর্মুহু কলতানের টানে প্রতিদিনই দুরদুরান্ত থেকে রামরাই দিঘিতে ছুটে আসছেন পাখিপ্রেমী পর্যটকরা ।
এ দেশের নদ-নদী, হাওর-বাওড়ের ভালোবাসার টানে লক্ষ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে রামরায় দিঘিতে আসে তারা। আত্মীয়দের সঙ্গে যেমন আত্মার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, এখানকার ভূপ্রকৃতির সঙ্গেও তেমনি আত্মীয়তার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে এসব অতিথি পাখির। প্রচন্ড শীতের কারণে সাইবার অঞ্চল থেকে আসা এ পাখিগুলো সারাদিন রামরাই দীঘি বা রাণীসাগরে আহার করে সন্ধ্যা হলে আশপাশের জলাশয়গুলোতে আশ্রয় নেয়। সকাল হলেই আবার রাণীসাগরে ফিরে এসে খাবার সংগ্রহ করে। উপজেলা শহর থেকে ৪ কিমি দূরে উত্তরগাঁও গ্রামের নিকটেই বরেন্দ্র অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তর জলাশয় রামরাই দিঘীর অবস্থান। শহর থেকে যে কোন যানবাহনে ১০ থেকে ১৫ টাকা ভাড়া নেয়।
যেতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিটের রাস্তা। সরেজমিনে কথা হয় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে আসা তন্নীর সাথে। তিনি প্রতিবেদককে জানান, শুনেছিলাম রাণীসাগরে অনেক পাখি আসে। তাই দেখতে এসেছিলাম। এখানে এসে মনটা ভরে গেল। পুকুরের চারিদিকের শত শত লিচু গাছ দেখতে বেশ মনোরম। পুকুরের নীচ থেকে পাড়ের দিকে তাকালে মনে হয় আকাশের সাথে মিশে আছে। আরো কথা পীরগঞ্জ থেকে আসা সুমি আকতার ও নেকমরদ এলাকার ঘনেশ^র চন্দ্রের সাথে তারা জানায়,আমাদের এখানে যে অতিথি পাখি আসছে তার নাম ছোট সরালি। শীতের শুরু থেকে বহু মানুষ আসছেন এসব অতিথি পাখি দেখার জন্য। অনেক সময় অনেক পাখি শিকারিরাও আসেন পাখি শিকারের উদ্দেশ্যে, আমরা সবসময় তাদের নিরুৎসাহিত করি কারণ অতিথি পাখিরা আমাদের দেশে আসে অতিথি হয়ে। এ রামরায় দিঘীকে যেন সরকারি ভাবে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়।
পুকুরের পশ্চিম পাড়ে হোসেনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়। কথা হয় চেয়ারম্যান মতিউর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, প্রতি বছর দুর দুরান্তের লোকজন এখানে পাখিগুলো দেখতে আসে। কাউকে পাখি শিকার করতে দেওয়া হয়না। রামরাই দিঘীকে পুরোপুরিভাবে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান জানান, রামরাই দিঘি রাণীশংকৈলের জন্য একটি অহংকার। এটি রাণীশংকৈলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে রাখছে। এই ছোট সরালি জাতের অতিথি পাখি আমাদের এই রামরাই দীঘিতে প্রতি শীতকালেই আসে। এটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে কাঠের সাকো, রেস্ট হাউজ, বসার ভ্রমন পিপাসুদের জন্য বসার বেঞ্চ সহ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।