বিডি ঢাকা ডেস্ক
বাংলাদেশের জলাভ‚মি ও বিলাঞ্চলের এক বিরল অথচ আকর্ষণীয় জলচর পাখি গ্লোসি আইবিস (Glossy Ibis), এর বৈজ্ঞানিক নাম Plegadis falcinellus, এবার দেখা গেল রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি বিলের একটি ডোবায়।
সম্প্রতি তোলা ছবিগুলোতে পাখিটির ঝলমলে সৌন্দর্য ধরা পড়েছে। এর আগে জয়পুরহাটের গৌরিপাড়া এলাকায় এই প্রজাতির পাখির বাসা বাঁধার ঘটনা দেশের পাখিপ্রেমী ও পরিবেশবিদদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
গ্লোসি আইবিস একটি মাঝারি আকারের পাখি, যার দৈর্ঘ্য ৪৮ থেকে ৬৬ সেন্টিমিটার এবং ডানার বিস্তার ৮০ থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সরু, বাঁকা ঠোঁট এবং মাথায় পালক থাকে। প্রজননকালে এদের গাঢ় খয়েরি ও সবুজ-মেরুন রঙের পালক সূর্যালোকে ঝলমলে দেখায়। অবিবাহিত অবস্থায় পালক তুলনামূলকভাবে ম্লান থাকে।
গ্লোসি আইবিস সাধারণত বিল, খাল, হ্রদ, নদী ও লবণাক্ত জলাভ‚মিতে বিচরণ করে। এরা সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে খাবার খায় এবং রাতে গাছের ডালে বিশ্রাম নেয়। গৌরিপাড়া এলাকায় বাঁশঝাড়ের ওপর এদের বাসা বাঁধার খবর পাওয়া গেছে, যা স্থানীয়দের জন্য একটি নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা।
গ্লোসি আইবিস মূলত জলজ পোকামাকড়, শামুক, কাঁকড়া, ছোট মাছ, ব্যাঙ ও ব্যাঙের লার্ভা খেয়ে থাকে। এরা মাটির নরম স্তরে ঠোঁট দিয়ে খুঁড়ে খাবার খুঁজে বের করে। শীতকালে খাদ্য সংকট বাড়লে এদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন দেখা যায়।
গ্লোসি আইবিস সাধারণত মে থেকে জুলাই মাসে প্রজনন করে। এরা ৩ থেকে ৪টি ডিম দেয়, যা উভয় পিতা-মাতা ২০ থেকে ২৩ দিন পর্যন্ত ইনকিউবেট করে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পর, পিতা-মাতা আরও ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ পর্যন্ত তাদের লালন-পালন করে। গৌরিপাড়ায় এই পাখির কলোনি গঠনের ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত ঘটনা।
গ্লোসি আইবিস বাংলাদেশের বিলুপ্তির পথে থাকা পাখির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। তবে গৌরিপাড়ায় এদের প্রজনন সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাওয়ায় সংরক্ষণ উদ্যোগের জন্য আশার আলো দেখা গেছে। স্থানীয় জনগণ ও পাখিপ্রেমীদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বনবিভাগের কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে এই প্রজাতির সংরক্ষণ সম্ভব।
গ্লোসি আইবিসের মতো বিরল প্রজাতির পাখির প্রজনন ও বাসা বাঁধার ঘটনা আমাদের পরিবেশের সুস্থতা ও জীববৈচিত্র্যের সমৃদ্ধির প্রতীক। এই ধরনের ঘটনা আমাদের প্রকৃতির প্রতি আরও দায়িত্বশীল হতে উদ্বুদ্ধ করে।