বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন

অবশেষে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার বন্ধ,শীঘ্রই বন্ধ হচ্ছে ভিডিও স্ট্রিমিং এ্যাপ ভিগো, টিকটক ও লাইকি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২১
  • ২৪৬ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ : অবশেষে পাবজি, ফ্রি ফায়ারের মতো ‘বিপজ্জনক’ ইন্টারনেট গেমের লিঙ্ক বন্ধ করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি। এছাড়া টিকটক, বিগো লাইভ ও লাইকির মতো এ্যাপসহ আরও কিছু এ্যাপ বাংলাদেশে বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংস্থাটি। যদিও এসব এ্যাপগুলোর লিঙ্ক বন্ধ করলেও বিকল্প উপায়ে ভিপিএন দিয়ে চালানো যায়। এজন্য এ্যাপগুলোর কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানানোর কথা জানিয়েছে বিটিআরসি। এর আগে গত জুলাই মাসে ‘ডিজিটাল আসক্তি’ শিরোনামে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক একটি পত্রিকা। এরপর পাবজি-ফ্রি ফায়ার গেমসহ লাইকি, বিগোর মতো ভিডিও স্ট্রিমিং এ্যাপ বন্ধের দাবি উঠে বিভিন্ন মহলে। এ বিষয়ে রিটও দায়ের করা হয়। এরপর ‘ক্ষতিকারক’ অনলাইন গেমের সব ধরনের লিঙ্ক বা ইন্টারনেট গেটওয়ে তিন মাসের জন্য বন্ধের নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত।

জানা গেছে, দেশে তরুণদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় ফ্রি ফায়ার, পাবজি, ক্লাস অব ক্ল্যানস, মাইন ক্র্যাফট, কাউন্টার স্ট্রাইক গেøাবাল অফেনস, কল অব ডিউটি ওয়ার জোনের মতো সহিংসতাপূর্ণ গেম। এসব গেমে অস্ত্রের ব্যবহার, মেরে ফেলা ও বোমাবাজি রয়েছে। সহিংসতাপূর্ণ গেম মানুষের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের দুটি গবেষণায় দুই ধরনের ফলাফল দেখা যায়। একটিতে দেখা যায়, যাদের মধ্যে সহিংসতাপূর্ণ মনোভাব থাকে, তারা এসব গেম খেলে সহিংস আচরণ করতে পারে। আরেকটি গবেষণায় বলা হয়, এ ধরনের ভিডিও গেম সাময়িক সময়ের জন্য হলেও সহিংস আচরণ উস্কে দিতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও অনলাইন গেম আসক্তিকে মানসিক সমস্যা হিসেবে গ্রহণ করেছে।

দেশে ইন্টারনেট গেম কতটা ‘বিপজ্জনক’ তার একটি গবেষণা করেছে দেশের একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। এতে দেখা যায়, দেশে ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ বিভিন্ন ডিজিটাল গেম খেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দিনে দু-তিন ঘণ্টা গেম খেলে কাটানোর প্রবণতা রয়েছে। দেশে তরুণদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় ফ্রি ফায়ার, পাবজি, ক্লাস অব ক্ল্যানস, মাইন ক্র্যাফট, কাউন্টার স্ট্রাইক গেøাবাল অফেন্স, কল অব ডিউটি ওয়ার জোনের মতো সহিংসতাপূর্ণ গেম। এসব গেমে অস্ত্রের ব্যবহার, মেরে ফেলা ও বোমাবাজি রয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিন রাজধানীর পল্লবীর ১১ নম্বর বাউনিয়া বাঁধ ঘুরে দেখা যায়, সুরভী স্কুল, আইডিয়াল হাইস্কুল ঘিরে এ-বøক, ই-বøক ও ডি-বøকে ৫০টির মতো ফ্রি ফায়ার গেমস খেলার দোকান গড়ে উঠেছে। প্রত্যেক দোকানে ২৫-৩০টি মোবাইল রয়েছে। ফ্রি ফায়ার খেলার জন্য এসব মোবাইল ঘণ্টা অথবা প্রতি গেম হিসাবে ভাড়া দেয়া হয়। অনেক শিক্ষার্থী খেলার টাকা জোগাড় করতে না পেরে বাসা থেকে টাকা চুরি করে। টিফিন কিংবা জামা-কাপড় কেনার কথা বলে এ টাকা দিয়ে ফ্রি ফায়ার গেমস খেলে। এ জন্য মাঝেমধ্যে ভুক্তভোগী পরিবার ও ভিডিও গেমস দোকান মালিকরা বাগবিতÐায় জড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। গত দুদিন আগে বাউনিয়া বাঁধ এলাকার ভিডিও গেমসের সবচেয়ে বড় দোকান মালিক জুলহাসের সঙ্গে এক ভুক্তভোগী পরিবারের বচসা হয়। একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জাহিদ বলেন, আমার সন্তান ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। স্কুল বন্ধ থাকায় এলাকায় গড়ে ওঠে ফ্রি ফায়ার গেমসের দোকান। সেখানে সারাক্ষণ টাকা দিয়ে গেমস খেলে। বাসার আলমারি থেকে টাকা নিয়ে গেমসের দোকানে যায়। দোকানদারকে নিষেধ করলে বলে আমি কি আপনার সন্তানকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসছি। চারদিকে গেমসের দোকানের ছড়াছড়ি। ছেলেকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। দোকানগুলো বন্ধ থাকলে আমরা অভিভাবকরা উপকৃত হতাম। প্রয়োজনে আপনারা রাতে এসে দেখতে পারেন কিভাবে বাচ্চারা গেমস খেলে সময় নষ্ট করছে। কামাল নামে স্থানীয় বাসিন্দা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফ্রি ফায়ার গেমস নিয়ে একটি মন্তব্য করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘সাবাধান হয়ে যান যারা ফ্রি ফায়ার নিয়ে বিজনেস করছেন। ছোট ছোট বাচ্চাদের কাছে মোবাইল ভাড়া দিয়ে ফ্রি ফায়ার খেলা বন্ধ করুন। আদেশ ক্রমে বাউনিয়া বাঁধ যুব সমাজ।’

দেশে ইন্টারনেট গেমের ‘বিপজ্জনক’ দিক তুলে ধরে গত জুলাই মাসে ‘ডিজিটাল আসক্তি শিরোনামে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জনকণ্ঠ। এরপর পাবজি-ফ্রি ফায়ার গেমসহ লাইকি, বিগোর মতো ভিডিও স্ট্রিমিং এ্যাপ বন্ধের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহলে। দেশের শিশু-কিশোর, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এসব গেম ও অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং এ্যাপের ‘বিরূপ প্রভাব’ তুলে ধরে গত ১৯ জুন বিবাদীদের কাছে উকিল নোটিস পাঠিয়েছিলেন সুপ্রীমকোর্টের দুই আইনজীবী। তাতে সাড়া না পেয়ে তারা গত ২৪ জুন হাইকোর্টে ওই রিট আবেদন করেন। এরপর গত ১৬ আগস্ট পাবজি-ফ্রি ফায়ার গেমসহ লাইকি, বিগোর মতো ভিডিও স্ট্রিমিং এ্যাপ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। ওইদিন এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে দেশের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি ফায়ার, লাইকি, বিগো লাইভের মতো গেম ও এ্যাপের সব ধরনের লিঙ্ক বা ইন্টারনেট গেটওয়ে নিষিদ্ধ বা অপসারণ বা বøক করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। আদালত অনলাইন গেম-এ্যাপ নিয়মিত তদারকি এবং এ বিষয়ে নির্দেশিকা (গাইডলাইন) তৈরি করতে বিশেষজ্ঞ ও কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, সে বিষয়েও রুল দিয়েছেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগসচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, শিক্ষাসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, স্বাস্থ্যসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিবাদীদের আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি’র ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমকে (ডট) এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার বন্ধ হয়ে গেছে। অন্য ‘ক্ষতিকর’ এ্যাপগুলোও বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কতগুলো এ্যাপ বন্ধ করা হবে জানতে চাইলে ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, টিকটক, বিগো লাইভ ও লাইকির মতো এ্যাপসহ আরও কিছু এ্যাপ বাংলাদেশে বন্ধের প্রক্রিয়া তারা শুরু করেছেন। এখন এ্যাপগুলোর লিঙ্ক বন্ধ করলেও ভিপিএন দিয়ে চালানো যায়। এসব বন্ধ করার মতো সক্ষমতা আমাদের নেই। এসব এ্যাপের কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েও আমরা বন্ধ করার অনুরোধ জানাব। বিটিআরসির এক কর্মকর্তা জানান, আগে কোন এ্যাপ বা ওয়েবসাইট বন্ধ করতে হলে ইন্টারনেট গেটওয়ে, ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল অপারেটরদের নির্দেশনা দিতে হতো। এখন ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকম নিজেই সেটা করতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ বলেন, ‘ক্ষতিকর গেম বন্ধ করা সম্ভব। গেম খুব রিয়েল টাইম হতে হয়। বন্ধ করা হলে চোরা পথে খেলতে গেলে গতি কম পাওয়া যাবে। এতে কেউ উৎসাহী হবে না।’ তিনি বলেন, এ্যাপ বন্ধ করা কঠিন। বন্ধ করলেও বিকল্প পথ খোলা থাকে।

জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ক্ষতিকর অনলাইন গেম পাবজি ও ফ্রি ফায়ার বন্ধের কার্যক্রম শুরু করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-বিটিআরসি। বৃহস্পতিবার থেকেই তিন মাসের জন্য এই অনলাইন গেমগুলো বন্ধ করা হয়েছে। তিনি জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী রুলের বিভিন্ন পক্ষ ও মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে, শিশু-কিশোরদের জন্য ক্ষতিকর অনলাইন গেমের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে আপাতত শুধু পাবজি ও ফ্রি ফায়ার বন্ধ হচ্ছে বলে জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com