বিডি ঢাকা ডেস্ক
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় বেআইনিভাবে গড়ে ওঠা ১৭টি ইটভাটার বেশিরভাগেই পোড়ানো হচ্ছে বনের গাছ এবং দেশীয় গাছ-কাঠ। অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে নদীতীর ও ফসলী জমির মাটি। ফলে ধ্বংস হচ্ছে বনায়ন, ক্ষতির মুখে পড়ছে কৃষিজমি ও নদী তীর। কাঠ পোড়ানোর সৃষ্ট ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে জনস্বাস্থ্য। বন উজাড় করে বছরের পর বছর চলছে এ অবৈধ ইটভাটাগুলো। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোন তৎপরতা যেখানে দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার জাহাজমারা এলাকার ব্রিকফিল্ডের আশপাশের বাসিন্দারা জানান নানা সমস্যার কথা। ভাটাগুলোতে মাটি, গাছ এবং ইট পরিবহনের জন্য যেসব পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে গ্রামীণ সড়কগুলোও ভেঙেচুরে একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠছে বলে জানান তারা।
জাহাজমারা ইউনিয়নের হাজী কোনা গ্রামের রহিম জানান, ব্রিকফিল্ডের ধোঁয়ায় তাদের গাছগুলো মরে যাচ্ছে, সবার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে। সেই সঙ্গে পাওয়ার টিলার এবং ট্রাক্টরের কারণে সব রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে।
সরেজমিনে জাহাজমারা রেঞ্জের কাটাখালি বনের উত্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি বনায়ন প্রায় মরুভূমি। যেখানে কেওড়া গাছসহ সারি সারি বহু মূল্যবান গাছে পূর্ণ ছিল বাগানটি। যা এখন ধু ধু চর আর চর, যেটুকু আছে তাও ধীরে ধীরে বনদস্যুদের ব্যবহার করে কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী চক্র। বন উজাড় করে চর বানিয়ে ফেলা অধিকাংশ ভূমি বন্দোবস্ত ছাড়াই সিজনাল (মৌসুমি) প্রভাবশালীরা চাষাবাদ করে থাকে। আবার একই সঙ্গে চরের নদীতীর থেকে এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ট্রলি দিয়ে ব্রিকফিল্ডে জমা করা হয় ইট প্রস্তুতের জন্য। ফলে ঢেউয়ের সঙ্গে নদীতীরের সেই স্তরসমূহ ভেঙে যায় বলে উল্লেখ করেন রাজিব নামের এক শ্রমিকসহ সেখানকার বেড়িবাঁধে বাস করা কয়েকজ মানুষ। সেখানে ফিশিং বোটে কর্মরত রাজিব নামের আরেক ব্যক্তি জানান, কে বা কারা দেখতেছি অনেক আগে থেকে এখান থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার জাহাজমারা রেঞ্জ কর্মকর্তা ছাইফুর রহমান জানান, তারা বনরক্ষার জন্য রাতদিন চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত অনেকগুলো বন মামলাও দিয়েছেন।
জাহাজমারা রেঞ্জ অফিসের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ এবং ২০২৩-২৪ সালে নিঝুম দ্বীপ জাতীয়উদ্যান বিনষ্টে ৮১টি বন মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে শুধু জাহাজমারা সদর বীটে বন মামলা হয়েছে ৪০টি। এবং গত পাঁচ বছরে পুলিশ মামলা হয়েছে ৩টি।
এদিকে তমরোদ্দি ইউনিয়নের খিরোদিয়া গ্রামের এক ইটভাটার নিকটবর্তী বাসিন্দা রাসেল জানান, তাদের আমগাছসহ বিভিন্ন ফল গাছে আগে ভালো ফলন হতো। ব্রিকফিল্ডের ধোঁয়ার কারণে এখন কোনো ফল গাছে মুকুল আসছে না, সব রকমের গাছসমূহ ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। কৃষিতেও বিরূপ প্রভাব দেখা দিচ্ছে।
হাতিয়া ইটভাটা সংগঠনের সেক্রেটারি মিরাজ উদ্দিন জানান, তারা বাগানের গাছ পোড়ান না, এটা অন্যরা পোড়ায়। তিনি আরো জানান, এখানকার কোনো ব্রিকফিল্ডের লাইসেন্স নেই, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও নেই।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান এ বিষয়ে জানান, এই ব্রিকফিল্ডগুলো এবং বনায়ন ধ্বংসের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।