সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৫ পূর্বাহ্ন

অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে ঝিমিয়ে পড়া অভিযানে গতি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ৬৬ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

দায়িত্ব নেয়ার পরপরই স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি এবং অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে নিজের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রীর সেই কথার প্রতিফলন ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এদিকে রাজধানীর বাড্ডার সাতাকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঝিমিয়ে পড়া অভিযানে যেন গতি সঞ্চার করছে।

১৬ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। লাইসেন্সবিহীন অবৈধ সেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, স্বাস্থ্য খাতে অনেক সমস্যা রয়েছে, বিষয়টি আমিও জানি। এরই মধ্যে আমি বলেছি, দুর্নীতির বিষয়ে আমি কোনো ছাড় দেব না। তেমনি অনুমোদনবিহীন হাসপাতাল-ক্লিনিকের ব্যাপারেও ছাড় দেয়া হবে না। বিষয়টি আমি এক দিনে পারব না। কিন্তু আমি যে বার্তাটি দিতে চাই তা হলো- এই অননুমোদিত ক্লিনিক, হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবশ্যই নেয়া হবে; আমি নিজেও লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালের ভুক্তভোগী সুতরাং আমি কখনই এ বিষয়ে ছাড় দেব না। কিন্তু আমার একার পক্ষে এবং রাতারাতি সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। আমি সবার সহযোগিতা চাই।

জানা যায়, বিভিন্ন সময় অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বেশ কিছু দিন এই অভিযান চললেও পরবর্তীতে তা গতি হারায়। ২০২০ সালে এমন অভিযানে নেমেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু মালিকপক্ষের চাপে অভিযান আলোর মুখ দেখেনি। ফলে অবৈধ অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। ২০২২ সালের ২৫ মে আকস্মিক ঘোষণা দিয়ে অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা

প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে অভিযান অব্যাহত রাখার সুপরিশ করেছিলেন সাধারণ মানুষ থেকে বিশিষ্টজন। এমনকি এ কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছিল বাংলাদেশ বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতিও। ওই সময় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাসহ বন্ধ করে দেয়া হয়। লাইসেন্স নবায়নের সময়ও বেঁধে দেয়া হয় কিছু প্রতিষ্ঠানকে। তবে পরবর্তীতে সেই অভিযানের গতি কমে এলে আবারো সক্রিয় হয়ে ওঠে অবৈধ সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুর ব্যাপকতা বাড়ার সুযোগ নিয়ে আবার দৌরাত্ম্য বাড়লে অবৈধ সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আবারো অভিযানে নামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সেটিও ঝিমিয়ে পড়ে।

প্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী, বুধ ও বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, যশোর, গোপালগঞ্জ, রংপুরসহ দেশের বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালিয়ে লাইসেন্সবিহীন, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগে সারাদেশে প্রায় ১৫০টি সেবা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও সিলগালা করে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশের লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, যশোর, গোপালগঞ্জ, রংপুরসহ দেশের বেশ কিছু জায়গায় লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কতগুলো অবৈধ প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে তার সুনিদিষ্ট কোনো তথ্য নেই অধিদপ্তরের কাছে।

প্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জে ১১টি হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন। নোয়াখালী সদর ও সোনাইমুড়ি উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ১৫টি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও দন্ত চিকিৎসালয় সিলগালা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও সনদ নবায়ন না করায় একটি বেসরকারি হাসপাতাল সিলগালা করে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। খুলনায় গল্লামারী এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পেয়ে দুটি হাসপাতালকে ১ লাখ টাকা ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। যশোরের পালবাড়ী ও ঘোপ সেন্ট্রাল রোড এলাকায় ৪টি ক্লিনিক সিলগালা করে বন্ধ এবং অন্য ৪টি ক্লিনিককে জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ১১ জেলার সিভিল সার্জনকে ৩ দিনের মধ্যে অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেয়ার নির্দেশ দেন। বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিনে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় লাইসেন্সবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ শতাধিক হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়। ছোটখাটো ত্রæটি পাওয়ায় বেশ কিছু ক্লিনিককে সতর্কও করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব ভোরের কাগজকে বলেন, বিপুলসংখ্যক বেসরকারি ক্লিনিক নিবন্ধনের আওতায় আনার জন্য সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা যথাযথ নজরদারি কাঠামো তৈরি হয়নি। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিষয়গুলো তদারকি করলেও নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চালানো এবং নজরদারির জন্য তাদের প্রয়োজনীয় লোকবলও নেই। তাই সার্বিকভাবে বিষযগুলোর দিকে নজর না দিয়ে শুধু অভিযান চালিয়ে ভালো ফল পাওয়া যাবে না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, অভিযান চালিয়ে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো বন্ধ করলে সমস্যার সমাধান হবে না। বেসরকারি খাতে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে নিরবচ্ছিন্ন তদারকি প্রয়োজন। এটি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ও সংঘবদ্ধ প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com