শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২২ অপরাহ্ন

আইভী গেলেন তৈমূরের বাড়িতে,আইভীর মাথায় তৈমূরের হাত, তৈমূরের মুখে আইভীর মিষ্টি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২২
  • ২৭২ বার পঠিত
আইভী গেলেন তৈমূরের বাড়িতে,আইভীর মাথায় তৈমূরের হাত, তৈমূরের মুখে আইভীর মিষ্টি
ফটো সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা : মাঘের কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ। সকাল হলেও সূর্যের দেখা মেলেনি। বেলা বাড়লেও নেই কোনো সাড়া-শব্দ। ব্যস্ত অফিসগামী মানুষগুলো কেউ রিকশায় আবার কেউবা সিএনজি অটোরিকশায় যাচ্ছিলেন। অফিস-আদালত সবই খোলা। চারপাশে ফুটপাথ ও দোকানপাট খোলা। পেশার মানুষগুলো সবাই ব্যস্ত। দুপুরের পর সাধারণ মানুষের দেখা মিললেও শহরে কোনো উৎসব ছিল না। বোঝার উপায় ছিল না, মাত্র এক দিন আগেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন এক উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে শোভা পেয়েছে পোস্টারে ভরা অলিগলিগুলো। সোমবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে গতকাল বিকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের বাসায় মিষ্টি নিয়ে যান তিনবারের সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। বিকাল ৫টায় তৈমূরের বাসায় প্রবেশ করার পর তখন তৈমূর ছিলেন বাড়ির ভেতরের অফিসকক্ষে। ভেতরে প্রবেশ করে আইভী তৈমূরকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন। আবেগাপ্লুত হয়ে আইভীকে জড়িয়ে ধরেন তৈমূর। চাচা-ভাতিজির এমন দৃশ্য দেখে মনে হয়নি তারা নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বী।
গতকাল সরেজমিন ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, আইভী আপা কাজে বিশ^াসী। তিনি কখনই নির্বাচনের পর আনন্দে আত্মহারা হননি। নির্বাচনে উনি (আইভী) নগরবাসীর কাছে যে ইশতেহার দিয়েছেন তা বাস্তবায়নের চিন্তায় আছেন। এলাকায় এত জনবল থাকা সত্ত্বেও সবাই চুপ কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আক্তারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনে সবাই ব্যস্ত ছিলেন। আজ একটু আরাম-আয়েশ করে ঘুমাচ্ছেন সবাই।
১৬নং ওয়ার্ডের দেওভোগ এলাকায় ডা. আইভীর বাড়ি। সকালে ওয়ার্ডের বাসিন্দারা কয়েকজন আনন্দ-উল্লাস করেন। দুপুরে আইভীর বাসায় ফুল নিয়ে যান কয়েকজন নির্বাচিত কাউন্সিলর। তখন আইভী বলেন, দুয়েকদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সবার ফুল গ্রহণ করবেন। দুপুর ১টায় ১৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সালাম মিয়া (৪৫) জানান, তিনি একটু আগে ঘুম থেকে উঠেছেন। আমাদের উৎসব নির্বাচনের দিনই। নির্বাচনের পর আর উৎসব করার চিন্তা থাকে না মাথায়। সবাই যার যার মতো কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। তিনিও যাচ্ছেন দোকান খুলতে। তিনি চাষাঢ়ায় কাপড়ের ব্যবসা করেন। রোববার নির্বাচনের ফল পাওয়ার পর অনেক রাত করে ঘুমিয়েছেন।
আইভী গেলেন তৈমূরের বাড়িতে : নারায়ণগঞ্জের বিখ্যাত মিষ্টির দোকান ‘জগদ্বন্ধু মিষ্টান্ন ভান্ডার’। তবে তা ‘সোনাই ঘোষের’ মিষ্টি নামেই বেশি পরিচিত। কারণ মিষ্টির দোকানের মালিকের নাম সোনাতন ঘোষ। বেলা ১১টার দিকে এই দোকান থেকে মিষ্টি আনিয়ে রেখেছিলেন আইভী। পীত রঙের কাতানের ওপর লাল রঙের চাদর জড়িয়ে আইভী সকাল থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন চাচার বাড়িতে যাওয়ার। গলা বসে গেছে। তারপরও সাংবাদিকদের অনুরোধে কিছু কথা বললেন। বললেন, তৈমূর আলম খন্দকারের বাড়িতে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু চাচা তৈমূর আলম খন্দকার সকালে গিয়েছিলেন আদালতে। নানাভাবে যোগাযোগ ও অপেক্ষার পর বিকাল সাড়ে ৪টায় জানা গেল চাচা তার মাসদাইরের বাসায় এসেছেন। আইভী সোনাই ঘোষের মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে রওনা হলেন তৈমূর আলম খন্দকারের বাড়িতে। সঙ্গে নিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম ও তার নির্বাচন সমন্বয়ক আদিনাথ বসুকে।
তৈমূর আলম খন্দকারের ছয়তলা বাড়ির একতলার বেশিরভাগ খালি। এক কোনায় একটি কক্ষ। সে কক্ষে তৈমূর আলম খন্দকার, তার স্ত্রী হালিমা ফারজানা তৈমূর ও মেয়ে ব্যারিস্টার মারিয়াম অপেক্ষা করছিলেন আইভীর জন্য। সেখানে প্রবেশ করতেই তারা আইভীকে সাদরে অভ্যর্থনা জানালেন। বাইরে খালি জায়গায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের ব্যবস্থা করা ছিল। একসঙ্গে বের হয়ে এসে তারা সেখানে বসলেন। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালসহ আরও কয়েকজন নেতাকর্মী এ সময় পাশে ছিলেন। শুরুতেই তৈমূর আলম খন্দকার বললেন, আইভীর সঙ্গে আমার পারিবারিক, আত্মিক ও আধ্যাত্মিক সম্পর্ক। আমার নেতা ছিলেন আইভীর বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা। আমি যখনই দোয়ার জন্য হাত তুলি তখনই আল্লাহর দরবারে আলী আহাম্মদ চুনকার জন্য দোয়া করি। মেয়র হিসেবে আমি আইভীর সার্বিক সফলতা কামনা করি। এক পর্যায়ে তিনি আইভীর মাথায় হাত দিয়ে বললেন, তার পেছনে আমি আছি। আইভী যেখানেই থাকুক, যে কাজই করুক, তার সুবিধায়-অসুবিধায় অদৃশ্য শক্তির মতো তার মাথায় আমার হাত থাকবে। নির্বাচন এটা কোনো বিষয় নয়। এটা ১৬ তারিখে চলে গেছে। অন্যান্য কোনো কথাবার্তা এখনও কোনো কাজে আসবে না। আমার শ্রদ্ধাবোধ মরহুম আলী আহাম্মদ চুনকার জন্য থাকবে, যতদিন আমি বেঁচে থাকি।
পুনরায় নির্বাচিত মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এ সময় বলেন, কয়েকদিন ধরে সাংবাদিকরা আমাদের দুজনের নিউজ টানা করে গেছেন। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা শুনলেন তৈমূর কাকার কথা। তার সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। আমি পুরো নির্বাচনে বলার চেষ্টা করেছি, রাজনীতির জায়গায় রাজনীতি। কিন্তু পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি হবে না। আগে যে রকম ছিল এখনও সেরকম থাকবে। আমি অন্তত জানি আমার তরফ থেকে এটা বিঘ্ন হবে না। কাকাও এটা জানেন। ভবিষ্যতে কাজ করতে গেলে অবশ্যই তার পরামর্শ নেব। ভবিষ্যতে কেন অতীতেও নিয়েছি। আমি যখন পৌরসভায় নির্বাচিত হয়ে আসলাম তখনও উনি আমাকে সহায়তা করেছেন। কাকাকে সঙ্গে নিয়ে হীরালাল খাল উদ্ধার করেছি। বোয়ালিয়া খালের কাজ করেছি। বিভিন্ন জায়গায় সমস্যা হলে কথা বলেছি। মুসলিম একাডেমির জায়গা ভরেছেন, সেখানে টাকা দিয়েছি। আবার কাকা আমার স্কুলের জন্য সহযোগিতা করেছেন। এ রকম পারস্পরিক সহযোগিতা তো থাকবেই। কারণ আমরা সবাই তো নারায়ণগঞ্জের মানুষ। যে যে-ই দল করি না কেন, প্রত্যেকের সঙ্গেই তো একটা সম্পর্ক আছে। নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে দলের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করাটা ইবাদতের শামিল। এই ইবাদতের কাজটা আমরা সবাই করব। আমি তার পরামর্শ অবশ্যই চাইব। যে এজেন্ডাগুলো কাকা দিয়েছেন সেগুলো বাস্তবায়নে অবশ্যই চেষ্টা করব।
ডা. আইভী তৈমূর আলম খন্দকারের স্ত্রী ফারজানা তৈমূরের দিকে তাকিয়ে বলেন, কাকা ব্যস্ত থাকলেও কাকির সঙ্গে আমার সবসময় যোগাযোগ রয়েছে। তিনি সবসময় আমার খোঁজখবর নেন। এ রাস্তা দিয়ে কবরস্থানে যাওয়ার সময় আমি কাকির খোঁজ নিয়ে যাই, কখনও দেখা করে যাই।
তৈমূরের গাড়ির চাবি ফিরিয়ে দিল পুলিশ : নাসিক নির্বাচনে তৈমূরের গাড়িচালকসহ কয়েকজনকে গ্রেফতারের অভিযোগ করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের জামিনে আনতে দিনভর আদালতে ছিলেন তৈমূর আলম। এ সময় ব্যারিস্টার মেয়েও সঙ্গে ছিলেন। আদালতের কাজ শেষ করে যান পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। সেখানে কিছু সময় পর ওসিকে নির্দেশ দেন তৈমূরের গাড়ির কাগজ ও চাবি ফিরিয়ে দিতে। এরপর বাসায় ফেরেন বিকাল ৪টা ২৪ মিনিটে। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমার নিরীহ লোকগুলোকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। আমাকে ধরুক পুলিশ। তারা তো কোনো অন্যায় করেনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com