আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে তিন বছরের জন্য নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে দশমবারের মতো সভাপতি হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হ্যাটট্রিক করেছেন ওবায়দুল কাদের। ১৯৮১ সালের ১৩তম সম্মেলনে সভাপতি পদে নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। তিনি দশমবারের মতো দলটির নেতৃত্ব দেবেন। ২০১৬ সালের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। বর্তমান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ওবায়দুল কাদের এবার তৃতীয়বারের মতো দলটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন।
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলটির ২২তম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতি-সম্পাদকসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। সম্মেলনে নির্বাচনী অধিবেশনে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুক সভাপতি পদে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন। পরে সমর্থন করেন দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার। পরে সমর্থন করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুন। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে গঠিত তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনের প্রধান ও দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন সভাপতি পদে শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক পদে কাদেরের নাম কাউন্সিলরদের বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করেন। এরআগে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরুর পর ৮ বিভাগের ৮ জন কাউন্সিলর বক্তব্য রাখেন। এসময় সংশোধিত ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র উপস্থাপন করা হয়। কোষাধ্যক্ষের প্রতিবেদনও উপস্থাপন করা হয়। এগুলো কাউন্সিলরদের কণ্ঠভোটে পাস হওয়ার পর দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সমাপনী বক্তব্য রাখেন। পরে বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে। এ সময় নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করা হয়। পরে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচিত নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
উপদেষ্টা পরিষদের আগের কমিটিতে যারা ছিলেন তারা বহাল রয়েছেন। তবে যুক্ত হয়েছেন সভাপতিমণ্ডলী থেকে বাদ পড়া নুরুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুল মান্নান খান ও রমেশ চন্দ্র সেন, হাবিবুর রহমান সিরাজকে।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেলেন যারা
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হয়েছেন-বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও সিমিন হোসেন রিমি।
চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আগে যারা ছিলেন তারাই বহাল রয়েছেন। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন-ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও ডা. দীপু মনি।
সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন-আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সুজিত রায় নন্দী।
কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন-এইচ এন আশিকুর রহমান।
সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য যারা হলেন-অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান।
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে বহাল রয়েছেন ড. শাম্মী আহমেদ।
আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু। কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর। মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস। শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা। শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান। সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা। উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান। শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং উপ-প্রচার সম্পাদক পদ আপাতত খালি থাকবে। এ দুটি পদের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। এছাড়া যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। সম্মেলনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়নি। এগুলো নির্বাচিত করতে প্রেসিডিয়াম সভায় নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।
এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের আগের কমিটি বিলুপ্ত হয়ছ। অতীতের নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় অধিবেশনে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব করা হয়। তার ওপর ভিত্তি করে শীর্ষ এই দুই পদে নেতৃত্ব নির্বাচন করেন কাউন্সিলররা। পরে দলের অন্য পদগুলোয় নেতৃত্ব নির্বাচনের সর্বময় ক্ষমতা দলীয় প্রধানের হাতে অর্পণ করা হয়। তিনি দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া ৮১ সদস্যের কমিটির বাকি সদস্যদের নাম পরবর্তীকালে ঘোষণা করা হবে।
স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড: আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য মনোনীত করা হয়। দ্বিতীয় অধিবেশনে নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি শেখ হাসিনা বোর্ডের সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। গঠনতন্ত্র মোতাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই। বাকি সদস্যরা হলেন, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, কাজী জাফর উল্যাহ, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, ওবায়দুল কাদের, মো. রাশিদুল আলম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
সংসদীয় বোর্ড: আওয়ামী লীগের গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতার কারণে সম্মেলনে নতুন কমিটি গঠনের সঙ্গে সঙ্গে দলটির সংসদীয় বোর্ড গঠন করা হয়। এ বোর্ড সংসদীয় আসনগুলোতে মনোনয়ন দেয়। ২২তম সম্মেলনে নবনির্বাচিত সভাপতি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। সংসদীয় বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়েছেন শেখ হাসিনা। সদস্যরা হলেন, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, কাজী জাফর উল্যাহ, রমেশ চন্দ্র সেন, ওবায়দুল কাদের, মো. রাশিদুল আলম, ডা. দীপু মনি।