রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৪ অপরাহ্ন

আজ বাঙালির প্রেরণার প্রতীক অমর একুশে ফেব্রুয়ারি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ১৪৩ বার পঠিত
আজ বাঙালির প্রেরণার প্রতীক অমর একুশে ফেব্রুয়ারি
ফাইল ফটো

অনলাইন নিউজ : বাঙালির প্রেরণার প্রতীক অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ । ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পেরিয়ে এলো জাতি। প্রতিটি বাঙালির বুকে বাজছে আলতাফ মাহমুদের সুরে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সেই চির অম্লান কবিতা : ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি।’

একুশে ফেব্রুয়ারি জাতির জীবনে চিরভাস্বর একটি দিন। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের মতো মৃত্যুঞ্জয়ী ভাষাসৈনিকের রক্তে রাঙানো দিনটি দেশে ‘মহান শহিদ দিবস’ আর সারা বিশ্বে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বহু ভাষায় জ্ঞানার্জন: সংকট এবং সম্ভাবনা’। বিশ্বের সব জাতিসত্তার ভাষা রক্ষার দিন হিসাবে জাতিসংঘ বেছে নিয়েছে ১৯৫২ সালের বাঙালি জাতির ভাষার জন্য লড়াইয়ের দিনটিকে।

রবিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর থেকেই শোক ও শ্রদ্ধার প্রতীক সাদাকালো পোশাকে, খালি পায়ে, শিশিরসিক্ত পথ মাড়িয়ে আবালবৃদ্ধবনিতা সমবেত হতে শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশের স্কুল-কলেজে, জেলা ও থানা প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারি শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে দেশের সর্বস্তরের জনগণ। পাড়া-মহল্লায় শিশু-কিশোরদের নিজ হাতে গড়া শহিদ মিনারও আজ সেজে উঠেছে ভবিষ্যত্ প্রজন্মের কাছ থেকে পাওয়া ফুলেল শ্রদ্ধায়।

আজ বিশ্ব জুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গত কয়েক বছর ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী :শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উত্স। এ চেতনাকে ধারণ করে পৃথিবীর নানা ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগসূত্র স্থাপিত হোক, গড়ে উঠুক নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য বিশ্ব; এ কামনা করি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালির মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়েছিল।

কর্মসূচি :২১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ছুটির দিন। এ দিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষাশহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: দলটির কর্মসূচির মধ্য রয়েছে, আজ ভোর সাড়ে ৬টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারা দেশে সংগঠনের সব শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহিদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়া ২২ ফেব্রুয়ারি বিকাল সাড়ে ৩টায় দলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জেপির বিবৃতি ও কর্মসূচি:দিবসটি উপলক্ষ্যে জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আত্মহুতি দিয়েছিলেন শহিদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউদ্দিনসহ নাম জানা ও অজানা অনেকেই। সুমহান ভাষা আন্দোলন ছিল প্রকৃতপক্ষে বাঙালি জাতীয়তাবাদীর উন্মেষের সূচনালগ্ন, মহান একুশের শিক্ষা ছিল সকল প্রকার শোষণ, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার, মহান একুশের শিক্ষা ছিল মাথা নত না করার। আমরা একুশের এই মহান লগ্নে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সব ভাষাশহিদ ও ভাষাসৈনিকদের। আমরা তাদের এই আত্মত্যাগ কোনো দিন ভুলব না।

নেতৃদ্বয় আরো বলেন, আজ এই দিবসটি কেবল বাংলাদেশে নয় আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। এবারের একুশে ফেব্রুয়ারি এসেছে এমন একসময়ে, যখন জাতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুজিব শতবর্ষ পালন করছে। তাই এবারের একুশ পালনে যোগ হবে নতুন মাত্রা। নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশ থেকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা ও অপসংস্কৃতি চর্চার বিরুদ্ধে মহান একুশের শপথ গ্রহণ করবে এবং আমাদের ভাষা সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে সমৃদ্ধতর করার দীপ্ত প্রত্যয় ঘোষণা করবে।

দলটির কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে: একুশের প্রথম প্রহরে ভাষাশহিদদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, সকাল ৬:৩০ মিনিটে দলের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং অর্ধনমিত রাখা। সকাল ৭টায় আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহিদদের কবর জিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ এবং পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। এছাড়া বাদ জোহর সব মসজিদ ও অন্যান্য উপাসনালয়ে তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com