শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৭:৫২ পূর্বাহ্ন

আতঙ্ক নিয়েই আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছে পরিবারগুলো

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৩৪ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মিসহ সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হামলা জোরদার হওয়ার পর থেকে মিয়ানমার থেকে দলে দলে পালিয়ে আসছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি, মিয়ানমার সেনাবাহিনী, পুলিশ, শুল্ক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সদস্যরা। শেষতথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৩৩০ জনকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যরা বাংলাদেশে প্রবেশ করা শুরু করে। প্রথমে তারা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করেন। এরপর থেকেই কক্সবাজার-মিয়ানমার সীমান্তেও আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের নয়াপড়া নামক স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি অবিস্ফোরিত মর্টারশেল উদ্ধার করা হয়েছে। ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড নয়াপাড়ায় এলাকায় এই অবিস্ফোরিত মর্টারশেলটি দেখতে পায় শিশুরা খেলাধুলা করার সময়। পরে স্থানীয়রা বিজিবি ও পুলিশকে খবর দিলে পরিত্যক্ত মর্টারশেলটি উদ্ধার করে বিজিবির হেফাজতে নিয়ে যায়।

স্থনীদের ধারণা, মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীবাহিনী পালিয়ে বাংলাদেশে বিজিবির কাছে আশ্রয় নিতে আসার সময় অর্ধেক রাস্তায় এই মর্টারশেলটি ফেলে গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি বন্ধ হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা পরিবারগুলো বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাতের মধ্যেই ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা লোকজন নিজেদের বাড়িতে ফিরে গেছে। অনেকে আবার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে অবস্থান করেছেন। এসব পরিবারগুলো ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে এসেছেন। তার কারণ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা বা সুযোগ-সুবিধা নেই এবং সীমান্তে অস্থিরতার কারণে যে পাঁচটি স্কুল বন্ধ করা হয়েছিল সেগুলিও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে।

ধুমধুম-তুমব্রু এলাকার বাসিন্ধা মো. আরিফল ইসলাম বলেন, বর্তমানে আমাদের পাশ্ববর্তী সীমান্তে কোন গোলাগুলি হচ্ছে না। কিন্তু তারপরও স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক কাজ করছে। কিছু কিছু মানুষ বাড়িতে ফিররেও অনেক গ্রামবাসী বাড়িঘর ছেড়েছে অন্য জায়গাতে অবস্থান করছেন। বর্তমানে জনমানবশূন্যের কারণে ঘুমধূমের বাজার এখন অনেকটাই ফাঁকা বলে জানান তিনি।

এদিকে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলি থামায় পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকলেও সীমান্তের ওপারে চাকমা-তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের প্রায় চারশ জন মিয়ানমারের নাগরিক এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কিছু লোক এখনো সীমান্তে নো ম্যানস ল্যান্ডের কাছে জড়ো হয়ে অবস্থান করছেন। ওই অবস্তায় তারা সুযোগ বুঝে বাংলাদেশের এপারে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্ধা ও জনপ্রতিনিধিরা।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা থেকে উখিয়ার থাইংখালী সীমান্তের ওপারের দেড় কিলোমিটার দূরের গুলির বিকট শব্দ ভেসে আসছে। এতে গুলির বিকট শব্দে কাঁপছে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত এলাকা।

এছাড়া গত ৬ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার থাইংখালীর রহমতেরবিল সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসে ১৩৭ জন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী (বিজিপি)। তবে ঘুমধুম তুমব্রু গোলাগুলির শব্দ কিছুটা থামলেও উখিয়ার থাইংখালী, টেকনাফের হোয়ইাক্ষ্যং সীমান্তে থেমেথেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে জাানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্ধারা। ঘুমধুম তুমব্রু ছাড়াও মিয়ানমার-কক্সবাজারের সীমান্তদিয়ে গত বুধবার থেকে এপর্যন্ত পালিয়ে এসেছে আরও ৬৩ জন বর্ডার গার্ড পুলিশ বা বিজিপি সদস্য। এ নিয়ে দেশটি থেকে ৩৩০ জন নিরাপত্তারক্ষী বাংলাদেশে পালিয়ে এলেন। তথ্যটি নিশ্চিত করেন বিজিবির রামু জোনের সেক্টর কমান্ডার মেহেদি হাসান।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের নয়াপাড়ায় এলাকায় অবিস্ফোরিত মর্টারশেলটি উদ্ধার করে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে। মর্টারশেলটি কোথা থেকে কিভাবে আসলো সে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি ঘুমধুমের জলপাইতলী এলাকায় মিয়ানমারের ছোঁড়া মর্টারশেলের আঘাতে দুইজন বাংলাদেশী নিহত হওয়ার ঘটনায় নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ৩০২ ধারায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ মামলাটিও তদন্ত করা হচ্ছে। সর্বিক পরিস্থিতি আমাদের অনুকুলে আছে। বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ কাজ করছে। ঘুমধুম এলাকার উত্তেজনার কারণে পুলিশের জনবল বৃদ্ধি করার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তের আরাকান রাজ্যে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোর্ষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। এতে মিয়ানমার সরকারি বাহিনী বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে টিকে থাকতে না পেরে বাংলাদেশে অভ্যন্তরে আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে আসে। এ পর্যন্ত মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর ৩৩০ জন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবির কাছে আশ্রয় নিয়েছেন ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com