বিডি ঢাকা ডেস্ক
চিনি আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে কেজিপ্রতি ১১ টাকার বেশি। অথচ তারপরেও দেশের বাজারে এ পণ্যটির দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। এছাড়া ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রেও দাম কিছুটা বেড়েছে। এদিকে দাম বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দিচ্ছেন পরিশোধনকারী মিল মালিকরা ।
সরকার গত সপ্তাহেই আমদানি করা চিনিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাত্র ১৫ শতাংশ করেছে। এতে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনির শুল্ক ১১ দশমিক ১৮ টাকা এবং পরিশোধিত চিনির শুল্ক ১৪ দশমিক ২৬ টাকা কমার কথা। কিন্তু খুচরা বাজারে কয়েক দিন আগের ১২৫-১৩৫ টাকার বদলে এখন চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২৮ থেকে ১৩৫ টাকায়।
ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘শুল্ক কমানোর সুফল ভোক্তাদের দেওয়ার কথা বলে মিলাররা নিজেরা নেয়। সরকার শুল্কছাড় দিলে তারা নতুন অজুহাত দাঁড় করায়। ১৪-১৫ বছর ধরে তারা একই কায়দায় মুনাফা লুটছে।’
এক্ষেত্রে পাইকারি বিক্রেতারাও বলছেন, মিলাররা দাম কমাচ্ছে না বলেই বাজারে চিনির দাম বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার তদারকির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১২৭-১৩৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে তা ছিল ১২৫-১৩৫ টাকা।
খুচরা চিনি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি কয়েক দিন আগে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১২৫ টাকায় বিক্রি করলেও বর্তমানে ১২৮ টাকায় বিক্রি করছেন।
এ সস্পর্কে পুরান ঢাকার বাণিজ্যকেন্দ্র মৌলভীবাজারের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী হাজি আবুল হাসেম বলেন, সরকার যে পরিমাণ শুল্ক কমিয়েছে, তাতে প্রতি কেজি চিনিতে দাম ১০-১২ টাকা কমার কথা। কিন্তু মিলগুলো দাম কমাচ্ছে না। পরিবেশক পর্যায়েই প্রতি কেজি ১২০-১২১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিল থেকে প্রতি কেজি চিনির দাম ১২১ টাকা চাওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম ট্যারিফ কমিশন থেকে নির্ধারণ না করায় ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ ও দ্বিধায় রয়েছেন। দাম কমবে না বাড়বে, তা দ্রুত নিশ্চিত করা উচিত।’
শুল্ক কমানো হলেও চিনির দাম কমবে না বলে সোজা জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রহমান। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি। উচ্চমূল্যের ডলার, জাহাজভাড়া, বন্দরে কনটেইনার দেরিতে ছাড়ায় লোকসান, মিলে পরিশোধনের ব্যয় মিলিয়ে যে খরচ হচ্ছে, তাতে দাম কমবে না।’ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান চিনি আমদানি কমিয়ে দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বছরে চিনির চাহিদা ২০ লাখ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১৫ লাখ ২৫ হাজার টন। সম্প্রতি চোরাই পথেও বিপুল পরিমাণ চিনি দেশে এসেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
এদিকে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম যাতে না বাড়ে, সে জন্য সরকার আমদানিতে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে। কিন্তু তিন-চার দিনের ব্যবধানে খোলা ভোজ্যতেলের দাম কিছুটা বেড়েছে। টিসিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল রাজধানীর বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৫২-১৫৬ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে তা ছিল ১৫১-১৫৫ টাকা। রাইস ব্র্যান অয়েল গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৯০-১৯৫ টাকায়, এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৮০-১৯০ টাকা।
পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা এ সম্পর্কে বলেন, প্রতি মণ (৩৭ কেজি ৩২০ গ্রাম) সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৫০ টাকায় এবং পাম তেল ৫ হাজার ৭০০ টাকায়। কিন্তু মিলে দাম চাওয়া হচ্ছে সয়াবিন তেল ৬ হাজার ১০০ টাকা এবং পাম তেল ৫ হাজার ৮০০ টাকা।
ভোজ্যতেলের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে টি কে গ্রুপের পরিচালক সফিকুল আতহার বলেন, ‘খোলা তেলের দাম একটু বাড়তে পারে। তবে বোতলের দাম বাড়েনি।’
সফিকুল আতহারের ভাষ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম গত দুই মাসে ১৮ শতাংশ বেড়েছে। তাদের পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর দাবি ছিল। কিন্তু সরকার শুল্কছাড় দিয়ে বর্তমান দাম বহাল রাখতে বলছে। এ কারণে আগের বেশি দামে আমদানি করা তেল এখন তারা কমে বিক্রি করছেন।
তেল ও চিনির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ অনুবিভাগ) দাউদুল ইসলাম বলেন, ‘দাম নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে সচিব মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’