ভারতের কিংবদন্তি অভিনেতা, বলিউডের ‘ট্র্যাজেডি কিং’ দিলীপ কুমার আর নেই; তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। মুম্বাইয়ের পিডি হিন্দুজা হাসপাতাল অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চ সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় তার মৃত্যু হয়। খবর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের। শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ২৯ জুন থেকে এই হাসপাতালে
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি ছিলেন দিলীপ কুমার। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন ভুগছিলেন তিনি। মাসখানেক আগেও একবার তাকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল।
হিন্দুজা হাসপাতালে দিলীপ কুমারের চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করা ড. জলিল পারকার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি আমাদের প্রিয় অভিনেতা দিলীপ সাবের মৃত্যু ঘোষণা করছি।’
এদিকে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমারের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দিলীপ কুমারকে স্মরণ করে টুইট করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
নরেন্দ্র মোদি টুইটে লিখেছেন, ‘দিলীপ কুমারজি ভারতীয় চলচ্চিত্র আপনাকে কিংবদন্তি হিসেবেই মনে রাখবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম আপনার অভিনয়ে মুগ্ধ। ওর মৃত্যু সাংস্কৃতিক জগতের অপূরণীয় ক্ষতি। পরিবার, আত্মীয়স্বজনদের প্রতি সমবেদনা রইল।’
দিলীপ কুমারের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘গভীরভাবে শোকাহত। অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার জন্য নতুনরা মনে রাখবে ওকে।’
রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ‘দিলীপ কুমারজির পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং অনুরাগীদের প্রতি সমবেদনা রইল। ভারতীয় সিনেমায় তার অসামান্য অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে হিন্দি সিনেমা শাসন করা দিলীপ কুমার ভারতের মতো বাংলাদেশেও ছিলেন দারুণ জনপ্রিয়। একটি বয়সের দর্শকদের হৃদয়ে এখনো উজ্জ্বল তার স্মৃতি। বলিউডের এই ‘বিষাদের মহানায়ককে’ শেষবার পর্দায় দেখা গেছে ১৯৯৮ সালে ‘কিলা’ সিনেমায়।
দিলীপ কুমারের জন্ম ১৯২২ সালে অবিভক্ত ভারতের পেশোয়ারে। বর্তমানে স্থানটি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনওয়ালার অন্তর্ভুক্ত। তার পারিবারিক নাম ইউসুফ খান।
পাঠানদের অন্যতম গোত্র আওয়ান পরিবারের সন্তান তিনি। তারা ছিলেন ১২ ভাইবোন। বাবার নাম লালা গুলাম সরোয়ার। বাবা ছিলেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। ফলের জমজমাট ব্যবসা ছিল তার। পেশোয়ার ও মহারাষ্ট্রের দেওলালিতে ছিল নিজস্ব বাগান।
দিলীপ কুমার লেখাপড়া করেন দেওলালির বিখ্যাত বার্নস স্কুলে। ত্রিশ দশকের শেষ দিকে ইউসুফ খানের পরিবার স্থায়ীভাবে মুম্বাইয়ে বসবাস শুরু করে। চল্লিশের দশকের শুরুতে দিলীপ কুমার পুনেতে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেন। তিনি একটি ক্যান্টিন চালাতেন এবং স্থানীয় বাজারে শুকনো ফল সরবরাহ করতেন।
১৯৪৩ সালে আওধ মিলিটারি ক্যান্টিনে সেসময়ের প্রখ্যাত নায়িকা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা দেবিকা রানীর সঙ্গে পরিচয় তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। দেবিকা রানীর ভীষণ ভালো লেগে যায় এই সুদর্শন তরুণকে। তিনি ছিলেন বোম্বে টকিজের অন্যতম মালিক। বোম্বে টকিজের পরবর্তী সিনেমা ‘জোয়ার ভাটা’ মুক্তি পায় ১৯৪৪ সালে। আর সেই সিনেমায়ই রুপালি পর্দায় আবির্ভাব ঘটে দিলীপ কুমারের।
দিলীপ কুমার বাংলাদেশে এসেছিলেন নব্বইয়ের দশকে। সেসময় এ দেশের ভক্তদের ভালোবাসায় প্লাবিত হন তিনি। তার ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হন এ দেশের ভক্তরা।
দীর্ঘ অভিনয়জীবনে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। সবচেয়ে বেশি পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও তার নাম রয়েছে।
ফিল্মফেয়ার আটবার পেয়েছেন সেরা অভিনেতার পুরস্কার। মনোনীত হয়েছেন ১৯ বার। ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ১৯৯৩ সালে। ১৯৮০ সালে মুম্বাই শহরের সাম্মানিক শেরিফ পদটি অলংকৃত করেন তিনি।
চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য পেয়েছেন ভারত সরকারের সম্মাননা পদ্মভূষণ ও দাদাসাহেব ফালকে। পাকিস্তান সরকার তাকে ভূষিত করেছে ‘নিশান-এ-ইমতিয়াজ’ সম্মাননায়।