বিডি ঢাকা ডেস্ক
ঘূর্ণিঝড় রিমালের জলোচ্ছ্বাসে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বাগেরহাটের শরণখোলার রায়েন্দা ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক। দুমড়েমুচড়ে গেছে গ্যাংওয়ে। জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডবে এক প্রকার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে রায়েন্দা ফেরিঘাটটি। বিধ্বস্ত হয়েছে ঘাটের পাশে গড়ে ওঠা বহু দোকাপাট।
গত ২৬ মের পর থেকে বন্ধ রয়েছে শরণখোলার রায়েন্দা ও মঠবাড়িয়ার বড়মাছুয়া রুটের এই ফেরি চলাচল। এতে দুর্ভোগে পড়েছে বলেশ্বর নদের দুই পারের হাজার হাজার যাত্রী। পারাপার হতে পারছে না কোনো যানবাহন। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় তিন কিলোমিটার প্রশস্ত প্রমত্তা বলেশ্বর নদ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়া নৌকায় পারাপার করতে হচ্ছে যাত্রীদের।
২০২১ সালের ১০ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় শরণখোলার রায়েন্দা ও মঠবাড়িয়ার বড়মাছুয়া ফেরিঘাট। এই ফেরি চলাচল কেন্দ্র করে দুই উপজেলার মধ্যে তৈরি হয় এক সেতুবন্ধ। তা ছাড়া ফেরি চালু হওয়ার পর থেকে মঠাবাড়িয়া, পাথরঘাটা, শরণখোলা ও মোংলা বন্দরের সঙ্গেও যাত্রী ও মালবাহী যানবাহন চলাচলে দক্ষিণাঞ্চলেও সৃষ্টি হয় এক নতুন দিগন্ত। তা ছাড়া ফেরিকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলার ঘাটের দুই পারে গড়ে ওঠে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় বহু মানুষের। কিন্তু রিমালের আঘাতে ঘাটটি বিধ্বস্ত হওয়ায় এখন সব কিছুই বন্ধ হয়ে গেছে। ফেরিঘাটটি দ্রুত মেরামতের দাবি তুলেছেন বলেশ্বর নদের দুই পারের বাসিন্দারা।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবুল হোসেন ও মোতালেব হোসেন জানান, ফেরি চলার কারণে তাঁদের নতুন আয়ের পথ তৈরি হয়েছিল। তাঁরা এই ঘাটে এবং ফেরিতে বাদামসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করতেন।
তাঁদের মতো আরো অনেকেই এই ঘাটে ব্যবসা করতেন। এসব বিক্রি করে তাঁদের সংসার চলে। কিন্তু ফেরি বন্ধ হওয়ায় তাঁদের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসাও আগের মতো চলছে না।
রায়েন্দা ঘাটের ব্যবসায়ী দুলাল হাওলাদার, রায়হান হাওলাদার ও আরিফ হোসেন জানান, ফেরি চালু হওয়ায় ঘাটের সংযোগ সড়কের দুই পাশে দোকান তুলে ব্যবসা শুরু করেন তাঁরা। এতে যাত্রীদের সুবিধার পাশাপাশি তাঁদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। কিন্তু ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে তাঁদেরসহ ঘাটের আরো ১০ থেকে ১২টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য সব বন্ধ হয়ে গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘাটে গিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা এত দিন বেশ নিরাপদে ফেরিতে চলাচল করে আসছিলেন। কিন্তু ফেরি বন্ধ হওয়ায় তাঁরা দুর্ভোগে পড়েছেন। এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়া নৌকায় পার হতে হচ্ছে তাঁদের। প্রবল ঢেউয়ে মাঝ নদীতে খেয়া নৌকায় নারী-শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। দ্রুত ঘাট মেরামত করে ফেরি চালু করার দাবি জানান তারা।
খেয়ার পরিচালক ওহিদুজ্জামান ডালিম জানান, ঘাট না থাকায় মালামাল নিয়ে খেয়ায় ওঠানামা করতে কষ্ট হচ্ছে যাত্রীদের। যেখানে-সেখানে খেয়া ভেড়াতে হচ্ছে। ফেরিঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা।
ফেরির ইজারাদার ফারুক তালুকদার জানান, তিনি ১২ লাখ টাকায় সরকারের কাছ থেকে ফেরিঘাটের ইজারা নিয়েছেন। ঘূর্ণিঘড়ে রায়েন্দাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ফেরি বন্ধ হয়ে গেছে। দ্রুত ঘাট মেরামত করা না হলে তিনি চরম লোকসানে পড়বেন।