সিলেট সংবাদদাতা : সিলেট জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। জেলার সবগুলো উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সড়ক ডুবে যাওয়ায় উপজেলা ও জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে অনেক এলাকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, অনেক সরকারি কার্যালয়েও ঢুকেছে বন্যার পানি।
এ দিকে সুরমা নদীর তীর উপচে পানি ঢুকে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে সিলেট নগরীর বেশ কিছু এলাকা। সুরমার তীরঘেঁষা শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, ছড়ারপাড়, কালিঘাট, তালতলা, কাজিরবাজার, শেখঘাট, লালাদিঘির পাড় এলাকার প্রায় সব বাসার নিচতলায় এখন পানি।
বন্যার পানিতে শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়ির জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হচ্ছে। নগরীতে জনদুর্ভোগ এখন চরমে। নগরীর বন্যাকবলিত মানুষের জন্য খোলা হয়েছে ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র।
মঙ্গলবার নগরীর বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মানুষের দুর্ভোগের চিত্র। তারা জানান, নগরীতে এভাবে বন্যার পানি সচরাচর ঢুকতে দেখা যায়নি। সর্বশেষ ২০০৪ সালে নগরীর অনেক এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল। এরপর প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও এবারের মতো সুরমা উপচে নগরী বন্যাকবলিত হয়নি।
সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, তালতলা, শেখঘাট, লালাদিঘির পাড়, জামতলা এলাকার প্রধান সড়ক ও গলিপথগুলো বন্যার পানিতে ডুবে আছে। সোমবার রাতেই অনেকের বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকেছে। এ অবস্থায় অনেকে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। বাসার আসবাবপত্র ভিজে নষ্ট হয়েছে।
শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা সেলিম আহমদ জানান, তিনি পরিবার নিয়ে একটি বহুতল ভবনের নিচতলায় থাকেন। সোমবার রাতে তার বাসায় পানি ঢুকতে শুরু করে। মঙ্গলবার সকালে কোমর সমান পানিতে থই থই করছে পুরো বাসা। স্ত্রী-সন্তানদের অন্যত্র পাঠিয়ে তিনি বাসার আসবাবপত্র রক্ষার চেষ্টা করছেন।
তিনি জানান, ফ্রিজসহ অনেক মূল্যবান জিনিস ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
ছড়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা কনিকা দাস জানান, সোমবার রাত থেকেই পানিবন্দী অবস্থায় বাসায় রয়েছেন। মঙ্গলবার পানি আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগে তাদের দিন কাটছে।
কালিঘাট এলাকার ব্যবসায়ী বাবলু মিয়া জানান, পানি ঢুকে তার দোকানের চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আলুসহ অনেক পণ্য নষ্ট হয়েছে। তার দোকানে মঙ্গলবার বিকেলেও ছিল হাঁটুসমান পানি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জেলার বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে এবং পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সিলেট নগরীর বন্যা আক্রান্ত মানুষের জন্য ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
আশ্রয়কেন্দ্রগুলো হলো- ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিরাবাজারস্থ কিশোরী মোহন বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের চালিবন্দর রামকৃষ্ণ উচ্চবিদ্যালয় ও চালিবন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাছিমপুরস্থ আবদুল হামিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বুরহান উদ্দীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহজালাল উপশহরস্থ তেররতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মির্জাজাঙ্গালস্থ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাজিরবাজার স্কুল, মনিপুরি রাজবাড়ি আশ্রয়কেন্দ্র ও মাছুদিঘি আশ্রয়কেন্দ্র, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাসিটুলা স্কুল, ইউনিসেফ স্কুল, কানিশাইল স্কুল, জালালাবাদ স্কুল, বেতের বাজার কাউন্সিলর কার্যালয়ের ৪তলা ভবন এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।