বিডি ঢাকা ডেস্ক
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) তুঘলকি কাণ্ড চলছে। উন্নয়ন প্রকল্প ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ করকে তৎপর প্রধান প্রকৌশলী মো. আলি আখতার হোসেন। আর এই কাজ করতে যেয়ে জনপ্রতি লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না। মৃত ব্যক্তিদেরও পিছনের তারিখ দেখিয়ে চাকরি স্থায়ী করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাকরির শেষ সময় এসে প্রধান প্রকৌশলী ক্ষমতার ব্যবহার করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর পেছনে দপ্তরের আরও কিছু কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
এলজিইডি সূত্র বলছে, অধিদপ্তরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, মাস্টাররোল, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে ৩৩৯১ জনকে রাজস্বখাতে আত্তীকরণে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১৪৬০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে শূন্য পদে ও অবশিষ্ট ১৯৩১ জনকে পর্যায়ক্রমে পদ খালি হওয়া সাপেক্ষে নিয়মিত করতে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে, যা নজিরবিহীন বলে জানিয়েছেন দপ্তরটির কর্মকর্তারা। তারা বলেন, এর আগে কোন সংস্থা প্রধান এমন উদ্যোগ নেননি। তার এই কাজে যেসব কর্মকর্তারা বাধা দিয়েছেন তাদেরকেও বদলি করা হয়েছে। অনেককে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে প্রশাসন শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফ উদ্দিনকে ৫ আগস্ট অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেককেই দেওয়া হচ্ছে হুমকি।
কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেখানে উন্নয়ন প্রকল্প হতে রাজস্বখাতে স্থানান্তর/নিয়মিতকরণ সংক্রান্ত সিভিল আপিল নম্বর ৪৬০/২০১৭ এর রায়ের পর্যবেক্ষণ উপেক্ষা করা হয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণের ৬নং পয়েন্টে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন কতৃক সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ও যথাযথ নিয়োগ বিধি অনুসরণ করতে হবে, যা এক্ষেত্রে করার সুযোগ নেই।
তারা বলছেন, অনিয়ম ও বৈষম্যমূলক এই নিয়োগ বাস্তবায়ন হলে জ্যেষ্ঠতা জটিলতায় পড়বেন অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা দৈনিক জনকণ্ঠ কে জানান আগামী অক্টোবরে প্রধান প্রকৌশলী জনাব আলী আখতার হোসেন অবসরে যাবেন, এর আগে তিনি বৈষম্যমূলক এই নিয়োগ বাস্তবায়ন করে যেতে চান এবং এর জন্য তিনি আর্থিক সুবিধাও নিয়েছেন বলে আমরা জেনেছি।
এছাড়াও সম্প্রতি একটি অফিস আদেশ জারি করে এলজিইডি। সেখানে ৪২ জনকে ব্যাকডেট দেখিয়ে স্থায়ীকরণ করা হয়েছে। অধিকাংশ কর্মচারীর স্থায়ীকরণ ২০১২ সাল বলা হলেও এই অফিস আদেশ ৮ আগস্ট প্রকাশ করা হয়। আর প্রধান প্রকৌশলী সাক্ষর করেন ৩১ জুলাই। এরমধ্যে মুন্সীগঞ্জের উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. কামরুজ্জামান রেজাউল করিম মৃত্যবরণ করলেও ভূতাপেক্ষ দেখিয়ে ১৩ জুন ২০১৩ সালে চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়। আর এই স্থায়ীকরণের সাক্ষরও চলতি বছরের ৩১ জুলাই করা হয়েছে।
তথ্য ঘেটে দেখা যায়, ২০১১ থেকে ২০২০ এই নয় বছরে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সর্বমোট ৩০৯২ জনের চাকরি রাজস্বভুক্ত করা হয়েছে।
হঠাৎ করেই এক জনবল আত্তীকরনের বিষয়ে এলজিইডি প্রধান প্রকৌশলী মো. আলি আখতার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, একটি বোর্ড সিটিংয়ের মাধ্যমে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিষয়টি দেখছেন প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠির বিষয়ে তিনি জানান, চিঠির অর্থ এই নয় যে সবাই আত্তীকরণ হয়ে রাজস্বখাতে যুক্ত হয়ে গেছেন। এরপরও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয় রয়েছে। তবে আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই।