গ্রামীণ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশ আমাদের সবার কাছেই পরিচিত একটি বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতা ও সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে গ্রাম পুলিশ বিশেষ অবদান রাখলেও কষ্টে ভরা জীবন গ্রাম পুলিশের। সার্বক্ষণিক গ্রামীণ জনসাধারণের সেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখলেও এ সকল গ্রাম পুলিশের ভাগ্যের নেই তেমন একটা পরিবর্তন। স্বল্প বেতনে চলে এদের জীবন সংসার। দ্রব্যেমূল্যের আকাশচুম্বী ঊর্ধ্বগতির কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৬৩ জন গ্রাম পুলিশ। ইউনিয়নের কোথাও সমস্যা দেখা দিলে সেখানেই ছুঁটে যান এরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান এ সকল গ্রাম পুলিশেরা বেতন পায় ৬ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে সরকার থেকে ৩ হাজার ২৫০ ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পায় ৩ হাজার ২৫০ টাকা। এই টাকাও তারা নিয়মিত পান না বলে অভিযোগ করেন গ্রাম পুলিশেরা। এই টাকা পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয় মাসের পর মাস। তবে প্রশাসন বলছেন সরকারের অংশ নিয়মিতই পায় তারা।
আরো জানা যায়, এই ৬ হাজার ৫০০ টাকা বেতন তারা ২০১৬ সাল থেকে পান । এরপর দ্রব্যেমূল্যের দাম বাড়লেও বাড়েনি তাদের বেতন। ২০১৬ সালের আগে গ্রাম পুলিশ বেতন পেতেন ৩ হাজার ৫০০টাকা। ২০০৯ সালে এদের বেতন ছিল ১ হাজার ৪০০টাকা।
মাসের পর মাস অপেক্ষা করার পর তারা বেতন তুলতে পারেন। মাসিক বেতন ছাড়া তারা অন্যান্য সুযোগের মধ্যে শুধু মাত্র দুটি ঈদে তারা বেতনের সমপরিমাণ টাকা বোনাস পান। এ ছাড়া তাদের আর কোন সুযোগ নেই।
এ সকল গ্রাম পুলিশরা ইউপি সচিবকে জন্ম-মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করে প্রদান করা, ইউপি ভবন ও বিভিন্ন সড়কে রাত্রিকালীন সময়ে দায়িত্বপালন, গ্রাম আদালত, গ্রামে কোন সংস্থার কর্মসূচী চলাকালীন ও সড়ক দুর্ঘটনার স্থানে তাৎক্ষণিক দায়িত্ব পালন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বাল্য বিয়ে সংক্রান্ত তথ্য প্রদান, অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর সংবাদ থানায় জানানো, মাদকদ্রব্য ও জুয়া প্রতিরোধে অভিযান চালানোয় সহযোগিতাসহ অগণিত দায়িত্ব পালন করে থাকেন এসকল গ্রাম পুলিশ সদস্যরা।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বিধান বিশ্বাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, বালিয়াকান্দির সাতটি ইউনিয়নে ৭০ জন গ্রাম পুলিশ থাকার কথা থাকলেও বর্তমান বালিয়াকান্দিতে ৬৩ জন গ্রাম পুলিশ রয়েছে। এ সকল গ্রাম পুলিশ সদস্যরাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সরকার নির্দেশিত কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে থাকেন। ২০১৬ সাল থেকে এরা ৬ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পান।
৩০ বছর ধরে গ্রাম পুলিশে কর্মরত থাকা বালিয়াকান্দির ইসলামপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুল কাদের দু:খ প্রকাশ করে বার্তা২৪.কমকে বলেন, জীবনটাই কাটিয়ে দিলাম গ্রামের মানুষের সেবায়। সেই তুলনায় আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন নেই। ২ শ টাকা থেকে চাকরী শুরু করে ২০২২ সালে বেতন এসে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫০০টাকায়। এ টাকা দিয়ে কি হয়? ছেলে মেয়েরা নতুন জামা চাইলে, ভালো কিছু খাবার খেতে চাইলে দিতে পারি না। বাবা হিসাবে এর থেকে আর কষ্টের কি হতে পারে।
বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মো: হাফিজুর রহমান কান্না-জড়িত কণ্ঠে বার্তা২৪.কমকে বলেন, চাকরী জীবন প্রায় শেষ। কিন্তু জীবনে কিছুই করতে পারলাম না। সরকারি চাকরীর ক্ষেত্রে পোষ্য কোঠা থাকলেও আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কোন কোঠা ব্যবস্থা নেই। এই শেষ জীবনে সরকারের কাছে আমাদের দাবি- আমাদের চাকরীটা যেন জাতীয়করণ করা হয় এবং আমাদের ছেলেমেয়েদের চাকরীর ক্ষেত্রে কোঠা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) মো: মাহাবুর রহমান শেখ বার্তা২৪.কমকে বলেন, গ্রাম পুলিশেরা অনেক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বর্তমান সরকার আসার পরই এই বাহিনীর বেতন কয়েক ধাপে বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রাম পুলিশ তাদের বেতনের সরকারি অংশ নিয়মিতই পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বেতনের অংশ তহবিলে আসার পরপরই তারা পেয়ে ক্ষমতায় যান।