বিডি ঢাকা ডেস্ক
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হল ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মেসগুলোতে থাকা শিক্ষার্থীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা করেন ক্যাম্পাস সংলগ্ন শেখপাড়া বাজার থেকে। স্থানীয়দের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর চাহিদাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে পণ্যের স্বাভাবিক দামের চেয়ে বাড়তি দাম চাইছেন ব্যবসায়ীরা। অন্য কাঁচা বাজারগুলো ক্যাম্পাসের কাছে না হওয়ায় নিরুপায় হয়ে বেশি দামেই শেখপাড়া বাজারে কেনাকাটা করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিনের শেখপাড়া বাজারের মাছ-মুরগি, শাক-সবজি, ফল ও ইফতারসামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের সঙ্গে ক্যাম্পাসের নিকটবর্তী অন্যান্য বাজারের পণ্যের দামে বড় ব্যবধান দেখা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় ও শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পৃথক মূল্য নিতেও দেখা যায়। ফলে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বাজারের ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমাফিক মূল্য নির্ধারণ করে ক্রেতাদের প্রতারিত করছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরের হরিনারায়ণপুর বাজার ও দেড় কিলোমিটার দক্ষিণের মদনডাঙ্গা বাজারের সঙ্গে শেখপাড়া বাজারের পণ্যের দামে বড় ব্যবধান রয়েছে। একইদিনে শেখপাড়া ও পার্শ্ববর্তী দুই বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাশ্ববর্তী দুই বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। একইদিনে তা শেখাপাড়ায় বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা। এছাড়া অন্য জাতের মুরগি ক্ষেত্রেও ২০ থেকে ৩০ টাকা ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে।
ক্যাম্পাসের নিকটবর্তী অন্য দুই বাজারের তুলনায় শেখপাড়া বাজারে ৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বড় আপেল বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকায়। একইভাবে কেজি প্রতি মাল্টায় ৬০ টাকা, আঙ্গুরে ৪০ টাকা, কমলায় ২০ টাকা ও বেদানায় ৫০ টাকায় বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া শেখপাড়া বাজারে প্রতি হালি লেবু ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই ধরণের লেবু অন্য বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। এছাড়া আলু, বেগুন, টমেটো, শশাসহ অন্য সবজি জাতীয় পণ্যে প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা ব্যবধান দেখা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অনেক আগ থেকে শেখপাড়া বাজারের সিন্ডিকেটগুলো কারণে বাজারের দাম ওঠা-নামা করছে। আশপাশে বেশ কয়েকটা গ্রাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ বাজারের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় সিন্ডিকেট দমানোও মুশকিল হয়ে গেছে।
শিক্ষার্থীদের বলছেন, ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী বিকল্প বাজার না থাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গঠন করে শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করছে। এমনিতেই নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাস শেষ না হতেই পকেট ফাঁকা হয়ে যায়, তার ওপর স্বাভাবিকের চেয়ে চড়া দামে কিনে আরো বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
মেসে অবস্থানকারী জোবায়ের হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আমাদের নাজেহাল অবস্থা। ক্যাম্পাস সংলগ্ন একমাত্র বাজার হওয়ায় শেখপাড়া বাজারে অত্যাধিক দাম রাখে। আমরা চাই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবে।’
শেখপাড়া বাজার কমিটির সভাপতি হাকিম মোল্লা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘অতিরিক্ত চাহিদা থাকায় আমাদের বাজারে সবকিছুর দাম অন্য বাজারের তুলনায় বেশি। বিষয়টি নিয়ে আমরাও অতিষ্ঠ। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেব।’
শেখপাড়া বাজারের বিক্রেতাদের দাবি, বেশি দামে পাইকারী পণ্য কিনতে হয় বলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। তবে অন্য বাজারগুলোর চেয়ে অধিক দামের বিষয়টি নিয়ে কোনো সদুত্যর দিতে পারেননি তারা।
তবে অপর দুই বাজারের দোকনীরা শেখপাড়া বাজারে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেন। তাদের দাবি, ক্যাম্পাস সংলগ্ন হওয়ায় শেখপাড়া বাজারে চাহিদা বেশি থাকে। এজন্য বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দামে পণ্য বিক্রি করে। অনেকে তাদের গ্রামের বাজার বাদ দিয়ে শেখপাড়া বাজারে গিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। বাজার কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে এটি সমাধান করা যায়, এ নিয়ে আমি প্রক্টরের সঙ্গে আলোচনা করব।’
বাজার তদারকির বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহ জেলার সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের বলেন, ‘শেখপাড়া বাজার নিয়ে আমাদের কাছে আগেও অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে নিয়েছি। খুব দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’