বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২০ অপরাহ্ন

 সহকর্মীদের অশ্রুসিক্ত নয়নে ক্যাপ্টেন নওশাদকে সহকর্মীদের বিদায় : বনানী কবরস্থানে দাফন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ২০৮ বার পঠিত

অনলাইন নিউজ : সহকর্মীদের অশ্রæসিক্ত নয়নে চিরবিদায় জানানো হয়েছে ককপিটে অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়া ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুমকে। ভারতের নাগপুর থেকে সকালে দেশে আসা তার মরদেহ বৃহস্পতিবারই দাফন করা হয়েছে। বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে তার মায়ের কবরে। বিমানের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে এই দাফন সম্পন্ন করা হয়। এদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের পাশে অপেক্ষমাণ পাইলটদের মাঝে অবতারণা হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। সহকর্মীরা তাদের ক্যাপ খুলে বীরের মর্যাদায় তাকে সালাম জানান। এ সময় তার স্বজনদের মধ্যে ছিলেন দুবোন, এক মেয়ে ও অন্যরা।

এদিন সকাল থেকেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত হন বিমানের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। নাগপুর থেকে আগত উড়োজাহাজটির অবতরণের অপেক্ষায় ছিলেন। সারিবদ্ধভাবে সহকর্মী পাইলটরা। উড়োজাহাজ সামনে আসতেই মাথার ক্যাপ খুলে শ্রদ্ধা জানান পাইলটরা। তাদের চোখে জল। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে বিমানের এই ফ্লাইট অবতরণ করে। মুহূর্তেই উড়োজাহাজটি থেকে নামানো হয় তার মরদেহবাহী কফিন। সেই কফিনও কাঁধে তুলে নিলেন সহকর্মী পাইলটরা। মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব মোঃ মোকাম্মেল হোসেন। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পক্ষে ফুল দেন সংস্থার চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রæপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল, বিমানের পরিচালক জিয়াউদ্দিন আহমেদ, মোঃ মাহবুব জাহান খানসহ বিমানের কর্মকর্তারাও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি প্রতিনিধি দলও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এরপর পাইলটরা নওশাদের মরদেহের সামনে আসেন। ক্যাপ খুলে, স্যালুট দিয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানায়। তাদের অনেককেই চোখ মুছতে দেখা যায়। সবশেষে পাইলট নওশাদকে বহনকারী কফিনটি একটি ফ্রিজিং ভ্যানে তোলা হয়। এরপর ভ্যানটি তার বাসার উদ্দেশে রওনা দেয়।

ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মোহাম্মদ মাহবুব আলী সাংবাদিকদের বলেন, পাইলট নওশাদের অকাল মৃতুু্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। ওনার মৃত্যু আমাদের বিমান পরিবারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় তার মৃত্যু একটা ভিন্ন মাত্রা বহন করে। তিনি বলেন, যে মুহূর্তে এই ঘটনা ঘটে, তখন বাপা, বিমানের এমডির সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত, যুক্তরাষ্ট্র যেখানে চিকিৎসা ভাল হবে। পৃথিবীর যে কোন জায়গায় উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পাইলট নওশাদ শুরুতেই সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ছিলেন। তিনি কোমায় ও লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। ওনার চিকিৎসার বিষয়ে কোন ধরনের ত্রæটি করা হয়নি।

মরদেহ আসার পর প্রথমে উত্তরার নিজ বাসায় প্রথম জানাজা হয়। তারপর দুপুরে বিমানের প্রধান কার্যালয়ে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে বনানী কবরস্থানে নিয়ে তাকে মায়ের কবরেই চির সমাহিত করা হয়।

আলোচিত এই পাইলটের অকাল মৃত্যুতে চরম শোকার্ত বাপার সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বলেন, এ শোক আমার একার নয়। গোটা পাইলট কমিউনিটির। আমরা তাকে ভুলতে পারব না। অনেক মিস করব, বিমানও তাকে মিস করবে। তিনি দুই দশকের বেশি চাকরি করেছেন বিমানে। অনেক অধ্যাবসায়ের পর দক্ষ পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ আজকের এই পর্যায়ে পৌঁছান। তার এভাবে চলে যাওয়া আসলেই মেনে নেয়ার মতো নয়।

উল্লেখ্য, ২৭ আগস্ট ওমানের রাজধানী মাস্কাট থেকে ১২৪ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে ভারতের রায়পুরের আকাশে থাকাকালে হুট করে হার্ট এ্যাটাক করে নিথর হয়ে পড়েন ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম। তখনই ককপিটের কন্ট্রোল নেন সঙ্গে থাকা ফার্স্ট অফিসার মোস্তাকিম। মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করে ক্যাপ্টেন নওশাদকে ও যাত্রীদের নিয়ে উড়োজাহাজটি দ্রæত নাগপুরের ড. বাবা সাহেব অম্বেদকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হন ফার্স্ট অফিসার মোস্তাকিম। নাগপুরের একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন নওশাদ। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ আগস্ট মারা যান নওশাদ।

ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম ১৯৭৭ সালের ১৭ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে পাইলট হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ২০০০ সালের ১৩ নবেম্বর ক্যাডেট পাইলট হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে কাজে যোগদান করেন এবং প্রশিক্ষণ শেষে ২০০২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এফ-২৮ এর ফার্স্ট অফিসার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি ২০০৬ সালের ১৪ মে এয়ারবাস-এ-৩১০ উড়োজাহাজের ফার্স্ট অফিসার এবং ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বোয়িং ৭৭৭ এর ফার্স্ট অফিসার হন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি বোয়িং ৭৩৭ এর ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন এবং মৃত্যুর পূর্ববর্তী পর্যন্ত তিনি এ পদেই কর্মরত ছিলেন। তারা বাবা আব্দুল কাইয়ুমও একসময় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ক্যাপ্টেন ছিলেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় কোরিয়ান এয়ার এবং সৌদি এয়ারলাইন্সেও দায়িত্ব পালন করেন সিনিয়র এই পাইলট। ৬ মাস আগে নওশাদের বাবা আব্দুল কাইয়ুম মারা যান। ছয় মাসের ব্যবধানের বিমানের দুই মেধাবী পাইলটের চলে যাওয়ায় সহকর্মীরা সত্যিই গভীর শোকাহত। তাদের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন বাপার সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com