নিজস্ব সংবাদদাতা : গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। তিনি জানান, এক বছর হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা গ্রহণের পরও দিনে দিনে তার অসুস্থতা বেড়ে যাচ্ছে। চিকিৎসায়ও তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না।বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আদালতে মানহানির তিন মামলায় খালেদা জিয়ার হাজিরার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তিনি অসুস্থতাজনিত কারণে আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। এ কারণে তার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার সময়ের আবেদন দাখিল করেন।কিন্তু এদিন প্রয়াত ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খন্দকার আব্দুল মান্নানের (৭০) সম্মানে ঢাকার আদালতের কার্যক্রম মুলতবি রয়েছে। এ কারণে তিন মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য রোববার দিন ধার্য করেন আদালত।আবেদনে আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার উল্লেখ করেন, ‘আজ মামলার অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য ছিল। মামলার একমাত্র আসামি বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে অসুস্থতার কারণে সরকারের নির্দেশে বাসায় আছেন। খালেদা জিয়ার বয়স ৭৬ বছর চলছে। তিনি শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ। এক বছর হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা গ্রহণের পরও দিনে দিনে তার অসুস্থতা বাড়ছে। বর্তমানে করােনা মহামারি চলছে। অসুস্থতাজনিত কারণে মুক্তি পেয়েও খালেদা জিয়া নিজ বাসায়ই অবস্থান করছেন। বাসায় তার চিকিৎসা চলছে। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। সঙ্গত কারণে অসুস্থ খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হতে পারছেন না। এমতাবস্থায় অভিযােগ গঠন কার্যক্রম মুলতবি রাখার সময় প্রার্থনা করছি।’
খালেদার দুই মামলায় অভিযোগ গঠন শুনানি রোববার
ভুয়া জন্মদিন পালন ও মুক্তিযুদ্ধকে ‘কলঙ্কিত’ করার অভিযোগে মানহানির দুই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য রোববার (১৭ জানুয়ারি) দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার এ দুই মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ঢাকার আদালতের কার্যক্রম মুলতবি থাকায় কেরানীগঞ্জের নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকা মহানগর হাকিম (এসিএমএম) আসাদুজ্জামান এ দিন ধার্য করেন।
মুক্তিযুদ্ধকে ‘কলঙ্কিত’ করার অভিযোগে করা মামলায় বলা হয়, ‘২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সঙ্গে জোট করে নির্বাচিত হয়ে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি (খালেদা জিয়া) রাজাকার-আলবদর নেতাকর্মীদের মন্ত্রী-এমপি বানিয়ে তাদের বাড়ি-গাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকা তুলে দেন।’
২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির এই মামলা করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। আদালত ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।
পরের বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক মশিউর রহমান (তদন্ত) অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদন দাখিল করেন। মামলার অন্য আসামি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মৃত বলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
অন্যদিকে ভুয়া জন্মদিন পালনের মামলার অভিযোগে বলা হয়, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একাধিক জন্মদিন নিয়ে ১৯৯৭ সালে দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর এসএসসি পরীক্ষার মার্কশিট অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে একটি দৈনিকে তার জীবনী নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জন্মদিন ১৯৪৫ সালের ১৯ আগস্ট লেখা হয়। তার বিয়ের কাবিননামায় জন্মদিন ১৯৪৪ সালের ৪ আগস্ট। সর্বশেষ ২০০১ সালে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অনুযায়ী তার জন্মদিন ১৯৪৬ সালের ৫ আগস্ট।’
অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে তার পাঁচটি জন্মদিন পাওয়া গেলেও কোথাও ১৫ আগস্ট জন্মদিন পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তিনি পাঁচটি জন্মদিনের একটিও পালন না করে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর দিন জাতীয় শোক দিবসে (১৫ আগস্ট) আনন্দ-উৎসব করে জন্মদিন পালন করে আসছেন।’
২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই এ দুই মামলায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ খালেদার জামিন মঞ্জুর করেন।