বিডি ঢাকা ডেস্ক
গোপালগঞ্জ সদরে মধুমতী নদীর মানিকহার সেতুর নিচে কচুরিপানার স্তূপ জমা হওয়ায় নৌযান চলাচল করতে পারছে না। এতে পাঁচটি জেলার সঙ্গে নদীপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ১৫ দিন ধরে এ অবস্থার কারণে বাগেরহাট, পিরোজপুর, নড়াইল, বরিশাল ও খুলনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। তাই কচুরিপানার স্তূপ পরিষ্কার করে নৌ পথ সচল করতে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গত শুক্রবার বিকেলে উপজেলার উরফি ইউনিয়নের মানিকহার ব্রিজ এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ছয় ভাগে ছয় গুচ্ছ পিলারের মাধ্যমে মধুমতী নদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। প্রতিটি গুচ্ছে ফাঁকা ফাঁকা ছয়টি করে মোট ৩৬টি পিলার রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ সেট পিলারের অবস্থান নদীর পানিতে।
এসব পিলারের ফাঁকে ফাঁকে কচুরিপানা ঢুকে আটকে গেছে। জমতে জমতে তা স্তূপে পরিণত হয়েছে। ব্রিজের নিচ থেকে স্তূপগুলো বিস্তৃতি লাভ করেছে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায়। বিশাল এ এলাকায় শুধু কচুরিপানা আর কচুরিপানা। চলাচল করতে না পেরে নদীতে নোঙর করে আছে অসংখ্য নৌকা, ট্রলার ও কার্গো।
ব্রিজ সংলগ্ন মানিকহার হাটে বসে কথা হয় বরিশালের সবজি চারা ব্যবসায়ী শাওন মোল্লার (৩৫) সঙ্গে। তিনি বরিশাল ও পিরোজপুর থেকে নৌকায় করে লাউ, কুমড়া, শিম, বেগুন ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন সবজির চারা এনে গোপালগঞ্জে বিক্রি করেন। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘এখন শীতের সবজির চারা বিক্রির ভরা মৌসুম চলছে। কিন্তু কচুরিপানার কারণে নৌকা গোপালগঞ্জ শহর ও আশপাশের গ্রামের হাটবাজারে নিতে পারছি না। এতে ব্যবসার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আমি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই।’
স্থানীয় উরফি গ্রামের গাজী ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘এ নদী দিয়ে আমাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য, নির্মাণসামগ্রী কম খরচে পরিবহন করতে পারি। গোপালগঞ্জ থেকে খুলনায় এক ট্রাক পণ্য পরিবহনে গড়ে ১০ হাজার খরচ হলেও ট্রলারে লাগে ১২ হাজার। কিন্তু ট্রাকের চেয়ে ট্রলারে অন্তত তিন গুণ বেশি পণ্য নেওয়া যায়। ফলে পণ্য পরিবহনে খরচ কমে যায় কমপক্ষে আড়াইগুণ।’ কিন্তু নদীতে কচুরির স্তূপ জমে যাওয়ায় তাদের দৈনন্দিন কাজ-কর্ম ব্যাহত হচ্ছে।
কার্গো চালক বশির মিয়া (৪৫) বলেন, ‘এই নদী দিয়ে আমরা ধান, চালসহ বিভিন্ন পণ্য খুলনা ও বরিশালে পরিবহন করি। কিন্তু মানিকহার ব্রিজের নিচে জমা কচুরিপানার স্তূপের ওপর দিয়ে কার্গো চালাতে পারছি না। তাই মানিকহার ঘাটে কার্গো নোঙর করে বসে আছি। এতে আমাদের জীবন-জীবিকা অচল হয়ে পড়েছে। আমাদের জীবিকা সচল রাখতে দ্রুত কচুরিপানা পরিষ্কার করার দাবি জানাচ্ছি।’
উরফি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মিজানুর রহমান বলেন, গুচ্ছ পিলারের ওপর ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে পিলারের ফাঁকে ফাঁকে কচুরি ঢুকে এ অবস্থার সৃষ্টি করে। এমনকি কচুরির স্তূপের ওপর দিয়ে এখানে ঘুরতে আসা উৎসুক জনতা চলাচলও করেন।
দুই বছর আগেও এ অবস্থা হয়েছিল। তখন সরকারি উদ্যোগে এটি অপসারণ করা হয়। এখন আবার একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এতে নৌপথে চলাচলকারীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। আমরা এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই।
উরফি ইউপির চেয়ারম্যান মনির গাজী বলেন, জেলার প্রধান নদী মধুমতী দিয়ে পাঁচ জেলায় প্রতিদিন অন্তত ২০০ নৌকা, ট্রলার, কার্গোসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান চলাচল করে। কিন্তু কচুরিপানার কারণে ১৫ দিন ধরে নৌ পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পণ্য পরিবহন ও নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রিজেরও ক্ষতি হচ্ছে।
বিষয়টি ভিডিও করে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসিন উদ্দীনকে পাঠাই। তিনি বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জনস্বার্থে কচুরিপানার স্তূপ অপসারণ করে দ্রুত নৌ চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এই জনপ্রতিনিধি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রিফাত জামিল বলেন, বিষয়টি আমি লিখিত ও মৌখিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কচুরি অপসারণে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার প্রয়োজন। টাকা বরাদ্দ বা অনুমোদন পেলেই আমরা এটি শুরু করতে পারব। কাজ শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই সব কচুরিপানা অপসারণ করা সম্ভব হবে বলে জানান ওই প্রকৌশলী।