রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৮ পূর্বাহ্ন

বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও মন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি টি এইচ খান আর নেই

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২২
  • ২১০ বার পঠিত
বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও মন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি টি এইচ খান আর নেই
ফাইল ফটো
নিজস্ব সংবাদদাতা : বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও মন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি টি এইচ খান (১০২) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আজ রোববার বিকেল ৫টায় রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আগামীকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রবীণ এই আইনজ্ঞের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে মরহুমের লাশ তাঁর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার ঔটি গ্রামে দাফন সম্পন্ন হবে।
বিচারপতি টি এইচ খানের মৃত্যুতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বিচারপতি তাফাজ্জাল হোসেন (টি এইচ) খানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
গত ২১ অক্টোবর ছিল বিচারপতি টি এইচ খানের ১০২তম জন্মদিন। করোনাকালীন অনেকটা পারিবারিকভাবে বরেণ্য এই ব্যক্তির জন্মদিন পালন করা হয়েছিল। জন্মদিন পালনের ঠিক দুই মাস ২৫ দিন পরই তিনি চলে গেলেন।
এদিকে আজ ভোরে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়।  তাঁর ছেলে সিনিয়র সাংবাদিক ও সিনিয়র আইনজীবী আফজাল এইচ খান বলেন, ‘বেলা ৫টায় আব্বা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।  তাঁকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আজ ভোরে রাজধানীর কল্যাণপুরে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বার্ধক্যজনিত জটিলতাসহ নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন।
আফজাল এইচ খান জানান, এর আগে তাঁর বাবাকে অসুস্থ অবস্থায় বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে গত ৯ ডিসেম্বর ভর্তি করা হয়। এরপর অবস্থার উন্নতি হলে ৬ জানুয়ারি বাসায় নেওয়া হয়।
 সাবেক মন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি টি এইচ খান আর নেইদেশবরেণ্য ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই আইনবিদ ১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলাধীন ঔটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪০ সালে বিচারপতি টি এইচ খান ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন এবং ১৯৪২ সালে তৎকালীন কলকাতা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ অনার্স-এ ভর্তি হন। ১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং ১৯৪৬ সালে এমএ পাস করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন।
১৯৫১ সালের ১৪ মার্চ বিচারপতি টি এইচ খান হাইকোর্টের আইনজীবী হন। আইন পেশা ছাড়াও তিনি প্রথম জীবনে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও আইন বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।
বিচারপতি টি এইচ খান ১৯৬৮ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ১৯৭৩ সালের জুলাই মাস থেকে পুনরায় আইন ব্যবসায় ফিরে আসেন। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর আইন, শিক্ষা, ধর্ম, ভূমি ও রাজস্ব এবং ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদের নেতৃত্বে নতুন সামরিক আইন জারি করা হয়। তখন তিনি আবার আইন পেশায় ফিরে যান। ১৯৮৬ সালে এরশাদের নির্বাচনে বিরোধীতা করায় গ্রেপ্তার হন।
বিচারপতি টি এইচ খান ১৯৯২ সালে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। এই পদে তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিএনপির প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান।
১৯৯২ সালে বিচারপতি টি এইচ খান সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কমিশনের মেম্বার এবং একই বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দান করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের দ্বিতীয় বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৯৫ সালে বিচারপতি টি এইচ খান এশিয়া জোন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ১৯ জুন মাস পর্যন্ত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে বিচার কাজ পরিচালনা করেন।
আইনজীবী ফোরামের শোক
বিচারপতি টি এইচ খানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সদস্য সচিব ফজলুর রহমান এবং সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া ও সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল।  এক শোক বার্তায় তারা মরহুমের বিদেহী আহ্বার শান্তি কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
সুপ্রিম কোর্ট বারের শোক
বিচারপতি টি এইচ খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল গণমাধ্যমে দেওয়া এক শোক বার্তায় বলেন, বিচারপতি টি এইচ খানের মৃত্যুতে আইন অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com