শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামে আজ নৌকা-ধানের শীষের লড়াই

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২১
  • ৪৬৯ বার পঠিত

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচন আজ। নানা উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনার এ ভোটে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ও ধানের শীষের ডা. শাহাদাত হোসেনের মধ্যে।

সবকটি কেন্দ্রে এবারই প্রথমবার ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। একদিন আগেই প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের নিয়ে নতুন পদ্ধতির এ ভোটগ্রহণ কার্যক্রম শেখাতে ‘মক ভোটিং’-এর ব্যবস্থা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মেয়র পদে কোনো প্রার্থী দেয়নি। পাশাপাশি কোনো প্রার্থীকে সমর্থনও দেয়নি দলটি।

মঙ্গলবার দলটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জনানো যাচ্ছে যে, আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কোনো পক্ষকেই সমর্থন করেনি।’

এদিকে চসিক নির্বাচনে ৫৭ শতাংশ ভোটকেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসাবে চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। অর্থাৎ ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪১০টিই ঝুঁকিপূর্ণ।

বাকি ৩২৫টি কেন্দ্রকে ‘সাধারণ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোটা নগরীতে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।

পাশাপাশি নির্বাচনি কেন্দ্রে সরঞ্জাম পাঠানোসহ সম্পন্ন হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। ইসি আশা করছে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর একটি নির্বাচন উপহার দিতে পারবে তারা।

তবে তফসিল ঘোষণার পর থেকে মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে যে উত্তাপ-উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে-সেই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনের দিনে স্বাভাবিকভাবেই উত্তাপ একটু বেশিই ছড়াবে-এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

আর এ কারণেই সাধারণ ভোটাররাও আজকের ভোট নিয়ে রয়েছেন গভীর উৎকণ্ঠায়। এবারের নির্বাচনে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ ভোটারের মধ্যে নতুন ৮০ হাজার ভোটার প্রথম ভোট দেবেন। তারাই মেয়র নির্বাচনে বড় ‘ফ্যাক্টর’ হবেন বলে মনে করছেন অনেকেই।

মঙ্গলবার প্রচারবিহীন দিনে নিজ নিজ বাসায় থেকে নির্বাচনে জয়ের কলাকৌশল ঠিক করার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের নানা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বলছেন, ‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে মুখিয়ে আছেন ভোটাররা।’

অন্যদিকে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন সুষ্ঠু ভোট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার অভিযোগ- ‘ভোট ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে সরকার।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কিংবা উত্তাপ-উত্তেজনা থাকলেও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ নেই।

তারা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা, গেলেও ঠিকমতো ভোট দিতে পারবেন কিনা- এ নিয়ে রয়েছেন গভীর সংশয়ে। বিগত নির্বাচনেও ভোটের আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্ট ও প্রতিনিধিরা বাসাবাড়িতে গিয়ে ভোটার নম্বর, নামধাম সংবলিত ‘ভোটার স্লিপ’ দিয়ে আসতেন।

যাতে ভোটের দিন কেন্দ্রে গিয়ে নাম-নম্বর খুঁজে পেতে সমস্যা না হয়। কিন্তু এবার সেই ধরনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি কোনো প্রার্থীর মধ্যেই। তাই ভোটকে কেন্দ্র করে উৎসব-আমেজ বলতে যা বোঝায়, তা নেই বলেই মনে করছেন তারা।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার মো. হাসানুজ্জামান মঙ্গলবার বলেন, ‘আমরা একটি উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করতে যারা চেষ্টা করছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের দিন কমিশন আরও কঠোর থাকবে। যাতে কোনো পক্ষ কোনোভাবেই নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে। আমি ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাই।’

মেয়র প্রার্থী যারা : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপি মনোনীত ডা. শাহাদাত হোসেন ছাড়াও আরও পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আবুল মনজুর, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী। এছাড়া কাউন্সিলর পদে ৪০টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫৭ নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ কাউন্সিলর পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. হারুন উর রশীদ। অন্যদিকে ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুজনিত কারণে এ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ভোট হবে না। তবে মেয়র ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হবে। সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়ে চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

সাধারণ ছুটি নেই, দুই ইপিজেডে ছুটি : প্রতিবার ভোটে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও এবার তা করা হয়নি। তাই যারা অফিস-আদালত করবেন, তাদের অনেকেই ভোটকেন্দ্রে না-ও যেতে পারেন। এতে ভোটার উপস্থিতিও কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে অফিস-আদালতে সাধারণ ছুটি না থাকলেও চট্টগ্রামের দুটি বৃহৎ ইপিজেড বা রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা সিইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডে অবস্থিত কারখানাগুলোয় সিটি নির্বাচন উপলক্ষ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। দুই ইপিজেডে অপারেশনে থাকা ১৭০টি কারখানায় ২ লাখ ৭০ হাজারের মতো কর্মী চাকরি করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

নতুন ৮০ হাজার ভোটারই ফ্যাক্টর : চসিক নির্বাচনে ভোটার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ এবং নারী ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন। তবে এর মধ্যে নতুন ভোটার প্রায় ৮০ হাজার, যারা এবারই প্রথম ভোট দেবেন। নতুন ভোটাররাই এবারের ভোটে মেয়র-কাউন্সিলর নির্বাচনে ফ্যাক্টর হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে। চসিক নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন ৭৩৫ প্রিসাইডিং অফিসার, ৪ হাজার ৮৮৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং ৯ হাজার ৭৭২ পোলিং অফিসার। এছাড়াও অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হিসাবে ১৬ হাজার ১৬৩ ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তার নতুন তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য ৪১ ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্র এবং ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের জন্য প্রায় ১৬ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা চূডান্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই স্টেডিয়ামে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে প্রিসাইডিং অফিসাররা নিজ নিজ কেন্দ্রের জন্য ৭০ ধরনের নির্বাচনি সামগ্রী গ্রহণ করেন।

গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী একই বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটির ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে ২১ মার্চ প্রথম দফায় চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন স্থগিত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ১৪ জুলাই পুনরায় চসিক নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এ সময়ে চসিকের প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু হলে নির্বাচন কমিশন ২৭ জানুয়ারি সিটি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com