চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার সমসপুর দাখিল মাদরাসায় ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগে বিপুল পরিমাণ অর্থের বানিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, মাদরাসা সুপার ও শিক্ষক প্রতিনিধি কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া নিয়োগের চেষ্টা করছেন। মাদরাসা সুপার মো. খাইরুল ইসলাম এবং এবতেদায়ী বিভাগের জুনিয়র শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধি মো. নজরুল ইসলাম ৩ জনের কাছে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ৪ লক্ষ টাকা দিয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ও সাক্ষাৎকারে উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ায় মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন একজন নিরাপত্তাকর্মী প্রার্থী। স্থানীয় ও মাদরাসার শিক্ষক সূত্রে জানা যায়, এর আগেও প্রায় ২০ বছর আগে একটি নিয়োগ বানিজ্য করায়, তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে মাদরাসা সুপার মো. খাইরুল ইসলামকে ৬ মাসের জন্য বরখাস্ত করা হয়। এমনকি মাদরাসা ব্যবস্থাপনা কমিটিতেও রেখেছেন সুপারের নিজস্ব ঘনিষ্ঠ লোকজনদের। অন্যদিকে নিয়োগ বানিজ্যের সকল অর্থ গ্রহণ করেন মাদরাসায় ১ বিঘা জমিদাতা মৃত আব্দুল বিশ্বাসের ছেলে ও জুনিয়র শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম। এমনকি সকল প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারও নেয়া হয়েছে পৃথকভাবে ও ভিন্ন জায়গায়। এদের মধ্যে এক প্রার্থীর কাছে টাকা নিয়ে ফেরত দিয়েছেন সুপার। নাচোল সদর ইউনিয়নের শমসপুর উত্তরপাড়া গ্রামের দুরুল হোদার ছেলে কাউসার নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ পাওয়ার জন্য ১ লক্ষ টাকা দিয়েছেন সুপার মো. খাইরুল ইসলামকে। কাউসারের বাবা দুরুল হোদা মুঠোফোনে বলেন, অন্য প্রার্থীর থেকে বেশি টাকা নিয়ে আমাদেরটা ফেরত দিয়েছেন সুপার। শুনেছি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আরেক প্রার্থী সমসপুর গ্রামের মো. একরামুল হক জালালের ছেলে মো. রাসেল রানা বলেন, নিয়োগের ব্যাপারে মাদরাসা সুপার মো. খাইরুল ইসলাম এবং এবতেদায়ী বিভাগের জুনিয়র শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধি মো. নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলি। পরে সুপার ও শিক্ষক প্রতিনিধি জানান, ৭ লক্ষ টাকা হলে নিয়োগ চূড়ান্ত হবে। কয়েকদিন পর ঢাকায় যাওয়াসহ বিভিন্ন অফিসিয়াল খরচের কথা বলে আমার থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নেয় শিক্ষক প্রতিনিধি মো. নজরুল ইসলাম। আবারো ৪ লক্ষ টাকা দাবি করে মাদরাসা সুপার ও শিক্ষক প্রতিনিধি। টাকা দিয়ে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েও মাদরাসা সুপার বেশি টাকা পেয়ে অন্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দুলাহার-সোনাডাঙ্গা গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে জুয়েল রানাকে ৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করছেন মাদরাসা সুপার। আর এতে ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নারায়নপুরের তৈমুর রহমানের ছেলে মনিরুল ইসলামকেও বাদ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে আয়া পদে ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে মাদরাসার নৈশপ্রহরী মজিবুর রহমানের স্ত্রী ফরিদা বেগমকে নিয়োগ দেয়ার পাঁকা কথা হয়েছে মাদরাসা সুপার খাইরুল ইসলাম ও শিক্ষক প্রতিনিধি নজরুল ইসলামের সাথে। এবিষয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিজের কথা অস্বীকার করে শিক্ষক প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম বলেন, টাকা-পয়সা লেনদেনের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেয়। যা হয়েছে, তার সবকিছুই করেছে মাদরাসা সুপার। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলার জন্য দেখা করতে নারাজ মাদরাসা সুপার মো. খাইরুল ইসলাম। মুঠোফোনেও এবিষয়ে কথা বলতে চাননি তিনি। সমসপুর দাখিল মাদরাসার সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুর রাজ্জাক মুঠোফোনে বলেন, নিয়োগের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমি নামে সভাপতি, কাজে না। দলীয় লোকজন ও সুপার যা করে, মাদরাসায় সেটাই হয়। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল মালেক বলেন, এবিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং সঠিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেয়া হবে।