রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন

দেশে অসংক্রামক রোগের কারণে প্রতি ১০ জনে ৭ জন মারা যাচ্ছে অসংক্রামক রোগে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২২
  • ২০২ বার পঠিত
দেশে অসংক্রামক রোগের কারণে প্রতি ১০ জনে ৭ জন মারা যাচ্ছে অসংক্রামক রোগে
ফটো সংগৃহীত

অনলাইন নিউজ : দেশে অসংক্রামক রোগের কারণে অকাল মৃত্যু বাড়ছে। বিভিন্ন রোগে মারা যাওয়া ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই অসংক্রামক রোগে মারা যাচ্ছেন। অর্থাৎ মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশই মারা যাচ্ছেন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও ক্যানসারসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগে। বয়স বিবেচনায় বেশি মৃত্যু হচ্ছে ৩০- ৭০ বছর বয়সীদের। এসব মৃত্যু টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য বড় বাধা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ‘১ম জাতীয় অসংক্রামক রোগ সম্মেলন-২০২২’ এর প্রথম দিনে দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব তথ্য জানান। সম্মেলন চলবে আগামী ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।

সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আছে এমন তিনজনের একজন কিডনি রোগে ভুগছেন। তা তারা নিজেও জানে না। ১০০ জনের মধ্যে ৫০ জনই জানে না তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের অর্ধেকের বেশি জানেন না উচ্চ রক্তচাপ তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ১০০ জনের মধ্যে ৭৭ জন ওষুধ খাচ্ছে কিন্তু তাদের উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে নেই। একই অবস্থা ডায়াবেটিকসের ক্ষেত্রেও।

প্রথম জাতীয় অসংক্রামক রোগ সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক ডা. শামীম হায়দার তালুকদার বলেন, ৩৫ বছরের ওপরে ৫০ শতাংশ মানুষের উচ্চ রক্তচাপ আছে। আমাদের দেশে উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস ও ক্যানসার সহ কয়েকটি রোগে ৭০ শতাংশ মানুষ মারা যায়। যারা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রতিরোধের ওপর জোর দিতে হবে। এ প্রতিরোধের জন্য আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে অসংক্রামক ব্যাধি সংক্রান্ত যেসব সভা-সেমিনার হয় সেগুলোতে অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর দাবি করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও অর্গানাইজিং কমিটির সায়েন্টিফিক সেক্রেটারি ডা. আলিয়া নাহিদ বলেন, বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে যদি খুঁজে দেখা হয় কতজনের উচ্চ রক্তচাপ আছে, দেখা যাবে ১০০ জনের মধ্যে ৫০ জন জানে না তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে। মানুষ ফার্মেসিতে গিয়ে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে ওষুধ খাওয়া শুরু করে কিন্তু চিকিৎসকের কাছে যায় না। এ কারণে দেশে অসংক্রামক ব্যাধি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আমাদের শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত সবার মধ্যেই জ্ঞানের অভাব রয়েছে। সবাই মনে করে অসুখটা ধরা পড়ার পরে, অসুখটা হয়েছে। অসুখটা ধরা পড়া মানে তার শেষ সময়। প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে হবে এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওষুধ খেতে হবে। অর্থাৎ আমাদের অসুখটা হওয়ার আগেই ডায়াগনোসিস করতে হবে।

এই চিকিৎসা বিজ্ঞানী বলেন, ৩০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিবছর একবার করে অন্তত  স্ক্রিনিং করতে হবে। স্ক্রিনিং এর মধ্যে শরীরের ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিকস সহ রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা করতে পারলে ভালো। শরীরের মেদ, লবণ ও চিনি বেশি পরিমাণে খাওয়া, বসে বসে কাজ করা, মানসিক চাপে ভোগেন, খেলাধুলা করেন না, প্রতিদিন নিয়মিত ৩০ মিনিটের কম হাঁটাচলা করে এমন ব্যক্তিদের প্রতিবছর একবার করে স্ক্রিনিং করতে হবে। অসংক্রামক ব্যাধির মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ডিমনেশিয়া, হাটের নানা রকম অসুখ, লিভারের সমস্যা এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে।

ডা. আলেয়া নাহিদ আরও বলেন, গবেষণার মাধ্যমে আমরা দেখেছি, সবার মধ্যেই সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। মানুষ শারীরিকভাবে অসুস্থতা বোধ না করলে চিকিৎসকের কাছে যায় না। এ কারণেই অসংক্রামক ব্যাধি মানুষের ওপর ভর করছে। সাধারণ মানুষের উচিত খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা। যেমন: লবণ ও চিনি বেশি না খাওয়া ও তেল চর্বি জাতীয় খাবার ও তামাক পণ্য পরিহার করে প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি খেতে হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে সফলতা আছে, সীমাবদ্ধতাও আছে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে আমাদের সঠিক পরিকল্পনা করে, সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর দাবি করেন তিনি।

সকালের উদ্বোধন অধিবেশনে আরও বক্তব্য রাখেন পিওর আর্থের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মাহফুজুর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, সাউথ ইস্ট এশিয়া রিজওনাল এনসিডি অ্যালায়েন্সের চেয়ারপারসন ডা. মনিকা আরোরা, ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট (নির্বাচিত) অধ্যাপক ডা. আখতার হোসাইন, হেলথ ইকোনমিক ইউনিটের মহাপরিচালক ডা. শাহাদাত হোসেন মাহমুদ। এ সেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সেক্রেটারি ডা. সারওয়ার আলী।

এরপর বৈজ্ঞানিক সেশনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন বৈজ্ঞানিক সেশনের চেয়ারম্যান আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. কে জামান, আইসিডিডিআরবি নির্বাহী পরিচালক ডা. শামস এল আরেফিন, ভারতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. অরুন জোস, আইসিডিডিআরবির সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. রুবানা রাকিব, ডা. আফরিন ইকবাল, ডা. আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com