রাজশাহী প্রতিনিধিঃ উদুর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে। রাজশাহী মহানগরীতে সেই ওয়াকফ লিল্লাহ সম্পত্তিতে স্কুল উচ্ছেদ করে জবরদখল কারীরাই এবার মামলা করেছে জনস্বার্থে আবেদনকারী এ্যাড: মোঃ নিজাম উদ্দীন ও স্কুল কমিটির সদস্য সহকারী অধ্যাপক মোঃ আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে। অথচো এই ওয়াকফ লিল্লাহ সম্পত্তি জবর দখল করে সেখানে থাকা শিশুদের একটি স্কুল উচ্ছেদ করেছে এইসকল অসৎ ব্যক্তিরা। বর্তমানে সেই সম্পত্তিতে তারা ১৩টি দোকান ঘর নির্মান করে অন্যত্র ভাড়া দিয়েছে এবং ভাড়াটিয়াদের কাছে মোটা অংকের জামানত নিয়ে দখলকারীরা।
এ্যাড: মোঃ নিজাম উদ্দিন জানান, মহানগরী বোয়ালিয় থানার আহম্মদপুর এলাকায় অবস্থিত হযরত শাহ্ সুফি ইসমাইল হোসেন ওয়াকফ লিল্লাহ স্টেট সম্পত্তিতে ২০০৫ সালে একটি প্রতিষ্ঠিত স্কুল ছিলো। যাহার নাম: হযরত খাজা শাহ্ সুফি (রহঃ) বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় ছিলো। সেই স্কুল উচ্ছেদ করে দোকান ঘর নির্মান করে। আর এই জবর দখলের কাজটি করছেন ওই সম্পত্তির মোতাওয়াল্লীর আত্মীয় স্বজন।
এ নিয়ে (৫ সেপ্টেম্বর) জনস্বার্থে ওয়াকফ জমি জবরদখল মুক্তকরণের জন্য আইনজীবী মোঃ নিজাম উদ্দীন স্বপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।
পরবর্তীতে ওয়াকফ প্রশাসক লোকাল ওয়াকফ পরিদর্শকের মাধ্যমে তদন্ত স্বাপক্ষে একটি তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। সেই রিপোর্ট প্রেক্ষিতে ওয়াকফ প্রশাসক রাজশাহী জেলা প্রশাসককে অবৈধ দখরঘর উচ্ছেদ করে পূর্বের প্রতিষ্ঠিত স্কুলকে জমি বুঝিয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
এই আদেশের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে অবৈধ দখলকারীরা আবেদনকারীদের ফাঁসাতে নানা ধরনের চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন। এরই জেরে এ্যাড: মোঃ নিজাম উদ্দিনের নামে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, রাজশাহী সিটি করপোরেশান (রাসিক) কৃর্তক কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্থকরণ প্রকল্প আওতায় আসায় কিছু জমি অধিগৃহিত হয়। বাকি জমি স্কুলের নামে অর্থাৎ ওয়াকফ লিল্লাহ‘র জমি হিসেবেই ছিলো। কিন্তু বর্তমান মোতাওয়াল্লীর আত্মীয়-স্বজন স্কুলের জমি অবৈধভাবে জবরদখলপূর্বক সেখানে প্রায় ১৩টি দোকান-ঘর নির্মাণ করেন।
শুধু তাই নয়, মাজার শরীফে যে অর্থ ভক্ত-আশেকানরা দান করেন তারও কোনো হিসেব থাকে না। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হযরত শাহ শুফী ইসমাইল হোসেন চিস্তি ১৯৫০ সালে নগরীর আহম্মদপুর এলাকায় একটি খানকাহ শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে পৈত্রিক সম্পত্তি ভাই-বোন ও নিজের মধ্যে বন্টন করে তার প্রাপ্ত অংশের ১৪ শতাংশ অংশ নিয়ে খানকাহ শরীফের হযরত শাহ শুফী ইসমাইল হোসেন চিস্তি নামে দলিল করে ওয়াকফ লিল্লাহ প্রতিষ্ঠা করেন।
শুফী ইসমাইল হোসেন চিস্তির ৪ ছেলে ও ৭টি মেয়ে ছিলেন। ১১ জনকে নিয়ে একটি কমিটি করে যান। সেই কমিটির কাজ হলো মোতাওয়াল্লীদের সাহায্য সহযোগিতা করবেন। আবার মোতাওয়াল্লী নির্বাচিত হবেন আমার পুত্রের সন্তানদের মধ্যে থেকে। তবে তাদের মধ্যে বয়োজৈষ্ঠতা, সততা ও যোগ্যতা ভিত্তিতে নির্বাচিত হবেন।
তিনি ১৯৬৯ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করলে খানকাহ শরীফের কাছেই তার মাজার নির্মিত হয়। ইতিমধ্যেই তার ভক্ত আশেকান বা ভক্তরা লিল্লাহ এষ্টেস্টের নামে ১৯৮৯ সালে ইসমাইল হোসেন চিস্তির মাজারের পাশেই ০.১১৫৬ শতাংশ জায়গা ক্রয় করে দেন। তবে ওই সময় তার সেজো ছেলে শামসুজ্জোহা চিস্তি মোতাওয়াল্লী ছিলেন। অন্যান্য সব পুত্রই মারা যান। শুধু তিনিই বেঁচে ছিলেন।
ইসমাইল হোসেন চিস্তির সর্বশেষ ছেলে ১৯৯৯ সালে মারা যান। পরবর্তীতে ২০০০ সালে তার বড় ছেলের ছেলে অর্থাত পোতা ড. আব্দুল খালেক মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত হন। অত:পর তিনি ২০০৫ সালে তার দাদার নামেই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
এ ব্যপারে হজরত খাজা শাহ্ সুফি ইসমাইল হোসেন চিশতী (রহ:) নামে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন প্রামানিক বলেন, ওয়াকফ লিল্লাহ জমির উপর নির্মিত স্কুলটিতে অসহায়, গবির ও পথশিশুদের বিনা খরচে শিক্ষা দেয়া হতো। স্কুলটি ২০০৫ সাল ৯৬জন ছাত্র/ছাত্রী নিয়ে স্কুলটি যাত্রা শুরু করে। পরে স্কুলটির সুনাম মহানগরীজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কিছু অসাধু লোকজন নিয়ম নিতির তোয়াক্কা না করে গায়ে জোরে স্কুলের স্থাপনা উচ্ছেদ করে দোকান ঘর নির্মান করে। এতে শিক্ষার আলো থেকে ছিটকে পড়ছে অসহায়, গবির ও পথশিশুরা।
এ ব্যপারে ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে ওয়াকফ প্রশাসকের দপ্তরে ও শিক্ষা মন্ত্রানালয়ে পৃথক দুটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মোতায়াল্লী মো. সিরাজুল ইসলামের নির্দেশ অমান্য করে দোকানঘর করছেন এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, মোতায়াল্লী দুই ভাই নাসির ও গোলাম রসুলকে তিনটি দোকানঘর করেছে। স্কুলের জায়গা দখল, মোতায়াল্লী মো. সিরাজুল ইসলামের নির্দেশ অমান্য, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এসব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান।