বিডি ঢাকা ডেস্ক
দেশে প্রতি তিন শিশুর একজন বা প্রায় ২ কোটি শিশু প্রতিদিন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ২০৫০ সাল নাগাদ দেশের মোট ৯৯ শতাংশ বা ৩ কোটি ৫৫ লাখ শিশু প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হবে। এ সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি। ২০২০ সালে মাত্র ২৬ লাখ শিশু, যা দেশের মোট শিশুর ৫ শতাংশ, এই ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছিল।
এমন বাস্তবতায় দেশজুড়ে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় জাতীয় নীতিমালা বা গাইডলাইন প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে সহায়তা করছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ। রোববার রাজধানীর এক হোটেলে গাইডলাইনটি প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চলমান তাপপ্রবাহ, বন্যা, নদী ভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিবেশগত অভিঘাতে পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে শিশুরা। শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে উচ্চতাপজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিতে জাতীয় গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গত কয়েকদিনে যে পরিমাণ তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল তাতে জনগণকে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল। তাপপ্রবাহ যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে তখনই আমরা এ নীতিমালা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। এটি সময়োপযোগী একটি নির্দেশিকা যা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের এ নীতিমালার আলোকে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের ক্ষতি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে এটি শিশুদের নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ২০২১ সালে চালু হওয়া ইউনিসেফের ‘সুস্থ শিশুর জন্য সুস্থ পরিবেশ’ শীর্ষক বৈশ্বিক কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৈরি এ জাতীয় নীতিমালা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে অরক্ষিত জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেবে।
ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাপমাত্রা প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধিতে অপরিণত শিশু জন্মের ঝুঁকি ৫ শতাংশ বাড়ে। তাপপ্রবাহ না থাকা সময়ের তুলনায় তাপপ্রবাহের সময়ে এ হার ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর অর্থ, তাপপ্রবাহের সময়ে অপরিণত শিশু জন্মের ঝুঁকি অনেক বেশি। অর্থাৎ তাপপ্রবাহ যত বেশি এবং যত তীব্র হবে ঝুঁকি তত বাড়বে। বাংলাদেশে অপরিণত শিশুজন্মের হার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (১৬ দশমিক ২ শতাংশ) এবং তাপপ্রবাহে এটি আরও বাড়ে।
ইউনিসেফের হিট ফ্রেমওয়ার্ক এ নীতিমালা বা গাইডলাইনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো-গরমজনিত চাপ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখা। গরমজনিত চাপের লক্ষণগুলো সহজেই শনাক্ত করা। নিজেকে ও অন্যদের সুরক্ষার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া। কারও মধ্যে গুরুতর লক্ষণ দেখা গেলে তাকে অবিলম্বে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত মানুষের জন্য অনেক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে। এ নির্দেশাবলীর লক্ষ্য হলো, জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো এবং গরমজনিত স্বাস্থ্য উদ্যোগে মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা। বৃহত্তর কমিউনিটি ও জনসাধারণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা। একাজে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, গণমাধ্যম ও তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠনের মাধ্যমে এ নীতামালা বা গাইডলাইন সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে।