বিডি ঢাকা স্টাফ রিপোর্টার
হযোগীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া এবং আড়াই লাখ টাকা আত্মসাতের প্রতিশোধ নিতে তিনটি হত্যাসহ ৮ মামলার আসামি আখের আলীকে (৩৮) গলা কেটে হত্যা করে তারই সহযোগী কালা মানিক ওরফে বাচ্চু মিয়া (৫৫)। হত্যাকাণ্ডের পর খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে আত্মগোপন করে থাকা কালা মানিককে গ্রেফতার করেছে বগুড়ার নন্দীগ্রাম থানা পুলিশ। আখের আলীকে হত্যার কারণ এবং দায় উল্লেখ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন বাচ্চু।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এসব তথ্য জানিয়েছেন নন্দীগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন।
এর আগে গত ২২ আগস্ট সকাল ১০টায় নন্দীগ্রাম থানা পুলিশ ওমরপুর এলাকায় ধান ক্ষেত থেকে আখের আলীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে। আখের আলী বগুড়া সদরের সাবগ্রাম ইউনিয়নের চান্দপাড়া গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। ভাবির সঙ্গে পরকীয়ার কারণে আপন বড় ভাই রাশেদ হত্যাসহ তিনটি হত্যা মামলা ছাড়াও ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে আরও ৫টি মামলা ছিল আখের আলীর নামে।
জানা যায়, আখের আলী হত্যার পর পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অনুসন্ধান করে জানতে পারে ২১ আগস্ট রাতে আখের আলী খুন হওয়ার আগ পর্যন্ত কালা মানিক তার সঙ্গেই ছিল। এরপর থেকেই পুলিশ কালা মানিককে সন্দেহের তালিকায় রেখে তদন্ত নামে। তদন্তকালে পুলিশ জানতে পারে, জেলখানায় আখের আলীর সাথে পরিচয় হয় কালা মানিকের। সেখানেই তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে সখ্য। ৬ মাস আগে জামিনে বের হন আখের আলী। আর গত দুই মাস আগে জামিনে বের হন কালা মানিক। আখের আলী জামিনে বের হয়েই কালা মানিকের ৩য় স্ত্রীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। কালা মানিক জামিনে বের হয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পেরে কৌশলে আশ্রয় নেয় আখের আলীর বাড়িতে।
সেখানে অবস্থান করে তারা বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি ও ছিনতাই করতেন। ডাকাতি করা টাকার ভাগ থেকে আড়াই লাখ টাকা আখের আলীর কাছে রাখতে দেয় কালা মানিক। কিছুদিন পর আখের আলী সেই টাকা আত্মসাৎ করে। এ নিয়ে আখের আলীর উপর ক্ষোভ বাড়তে থাকে কালা মানিকের। পরিকল্পনা করে তাকে খুন করে প্রতিশোধ নেয়ার। সেই অনুযায়ী ২১ আগস্ট কালা মানিক আখের আলীকে জানায়, নন্দীগ্রামে একটি দোকানের সিন্দুক ভাঙ্গতে পারলে নগদ টাকা এবং সোনার গহনা পাওয়া যাবে।
সেই রাতে আখের আলী তার এক বন্ধুর মটর সাইকেল নিয়ে কালা মানিকসহ নন্দীগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সিন্দুক ভাঙ্গার জন্য কালামানিক সঙ্গে একটি চাপাতি ও লোহার শাবল সাথে নেন। রাত ১০টার দিকে তারা নন্দীগ্রাম উপজেলার ওমরপুর বাজারের কাছে মহাসড়কের ধারে একটি বাগানে অপেক্ষা করতে থাকে। একপর্যায় কালা মানিক তার হাতে থাকা লোহার শাবল দিয়ে আখের আলীর মাথায় আঘাত করে। আখের আলী দৌড়ে ধান ক্ষেতে পড়ে গেলে সেখানেই চাপাতি দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে কালা মানিক। এরপর মটরসাইকেল ও আখের আলীর মোবাইল ফোন ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
নন্দীগ্রাম থানার ওসি জানান, কালা মানিক ওরফে বাচ্চুকে টার্গেট করেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে জানতে পারে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায় তার অবস্থান। সেখানে পুলিশের একটি টিম পাঠানোর পর ৭ দিন ধরে অভিযান চালিয়ে কালা মানিককে গ্রেফতার করা যায়নি। কালা মানিক অবস্থান পরিবর্তন করে খাগড়াছড়ি দুর্গম পাহাড়ে অবস্থান নেয়।
পরবর্তীতে নন্দীগ্রাম থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে একটি টিম খাগড়াছড়ি সদর থানাধীন দাতকুপিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে জানতে পারে যে, কালা মানিক ওই গ্রাম থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে কালাপাহাড় নামক টিলায় অবস্থান করছে। ১২ সেপ্টেম্বর ভোরে কালা মানিককে ওই টিলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পরে ঘটনাস্থলে নিয়ে এসে হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি মাংস কাটা চাপাতি এবং একটি লোহার রড উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার কালা মানিক ওরফে বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে নন্দীগ্রাম থানায় ধর্ষণের পর হত্যা মামলা ছাড়াও শাজাহানপুর ও শিবগঞ্জ থানায় ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাই এর মামলা রয়েছে।