যশোর সংবাদদাতা : টাকার নোটের সাত শতাংশ নমুনায় করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) একদল গবেষক। সোমবার (১০ মে) যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশের ব্যাংকনোটে করোনাভাইরাসের আরএনএর উপস্থিতির বিষয়ে এক গবেষণাপত্রের সূত্র ধরে অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের গবেষক দল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত ব্যাংক নোটে ভাইরাসের আরএনএর উপস্থিতি পেয়েছেন। গবেষক দল ব্যাংক নোটে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভাইরাসের এন-জিনের উপস্থিতি এবং ৮-১০ ঘণ্টা পর্যন্ত ওআরএফ জিনের স্থায়িত্ব শনাক্ত করতে পেরেছেন। এই গবেষণাপত্রটি ইতিমধ্যেই একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) একদল গবেষক কম খরচে করোনাভাইরাস শনাক্তে ‘সাইবারগ্রিন পদ্ধতি’ উদ্ভাবন করেছে। এতে ১৪০ টাকায় করোনা শনাক্ত করা যাবে।
সোমবার যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও জিনোম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন নতুন এ উদ্ভাবনের ঘোষণা দেন। তার দাবি, এই পদ্ধতিতে করোনা শনাক্ত করতে প্রতি নমুনার জন্য বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ১৪০ টাকার মত খরচ হবে।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পরীক্ষা করে দেখা গেছে- সাইবারগ্রিন পদ্ধতিতে করোনা শনাক্তের সেনসিটিভিটি প্রচলিত অন্যান্য কিটের সমপর্যায়ের। এই গবেষণাটি প্রিপ্রিন্ট আকারে medrxiv সার্ভারে পাওয়া যাচ্ছে এবং একটি পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। সরকারের সহায়তা পেলে আমরা এই গবেষণাকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজে এবং কম খরচে করোনা শনাক্তের কাজটি আমাদের দেশে করতে সক্ষম হবো।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, বায়ো-ইনফরমেটিক্স টুলের মাধ্যমে আমরা দেখেছি বর্তমানে সংক্রমণশীল করোনার বিভিন্ন ধরণ শনাক্ত করা সম্ভব। শতাধিক নমুনা পরীক্ষা করে এর কার্যকারিতা যাচাই করা হয়েছে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সংক্রমণশীল নতুন ধরণ আমাদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কার সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, যশোর সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এবং সাম্প্রতিক সময়ে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের গবেষক দল সাম্প্রতিক নমুনাগুলো থেকে ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টগুলো হোল জিনোম সিকুয়েন্সিং এবং স্পাইক প্রোটিনের সিকুয়েন্সিং এর মাধ্যমে চিহ্নিত করেছেন। ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকুয়েন্স জিএসআইডি ডাটাবেজে জমা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল থেকে ভারত থেকে আসা ১৬ জনের নমুনা যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে পাঠানো হয়, যার মধ্যে তিনজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। পজিটিভ তিনজনের মধ্যে দুজনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরণ শনাক্ত করা হয়েছে। ভারতীয় এ ধরনটি বি ১.৬১৭.২ নামে পরিচিত, যার মধ্যে স্পাইক প্রোটিনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মিউটেশন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সেলিনা আক্তার, পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শিরিন নিগার, বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাসান মো. আল-ইমরান, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শোভন লাল সরকার ও গবেষক তনয় চক্রবর্তী প্রমুখ।