মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৩ অপরাহ্ন

ডিমের বাজার ঘোলাটে, আজ থেকে নতুন দাম

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১২ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

নিম্নবিত্তের আমিষ হিসেবে পরিচিত ফার্মের মুরগির ডিমের বাজার ঘোলাটে প্রায় দুই মাস ধরে। সংকট না কারসাজি, কী কারণে বাড়ছে দাম, তা নিশ্চিত নয় ভোক্তা। দামের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই এক মাস আগে বিভিন্ন পর্যায়ে ডিমের দর বেঁধে দেয় সরকার। তা না মানায় অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ফলাফল ডিমশূন্য রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের আড়ত।

আড়তদারদের যুক্তি, তাঁরা বেশি দামে খামার থেকে ডিম কিনে বেঁধে দেওয়া কম দামে বিক্রি করতে পারবেন না। তাই ডিম আনছেন না।

খামারিরা বলছেন, মুরগির খাবারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। অথচ গতকাল মঙ্গলবার ভোক্তা অধিদপ্তরে বৈঠকে আগের বেঁধে দেওয়া দামই মেনে নিলেন ডিম উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা। অর্থাৎ খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৪২ টাকা। বৈঠক শেষে তাঁরা আজ বুধবার থেকে বাজার স্থিতিশীল হওয়ার আশার কথাও শোনালেন।

তবে এই আশাবাদে আশ্বস্ত হতে পারছেন না বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, মূল্যবৃদ্ধির কারণ সুনির্দিষ্ট হলো না। ফলে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই। তাঁরা চাহিদা ও উৎপাদনের প্রকৃত হিসাব বের করার তাগিদ দিয়েছেন।

বৈঠক শেষে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, বুধবার (আজ) থেকে উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা, খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিমের দাম হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।

ডিমের আড়তদারেরা বলছেন, খামার থেকে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে ডিম আনতে হয়। তাঁরা কম দামে বেচবেন কীভাবে। কিন্তু সরকারের নির্দেশনা না মানলে ভোক্তা অধিদপ্তর জরিমানা করছে। তাই ডিম আনা বন্ধ করেছেন। সরবরাহ কম থাকলে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে লাভ নেই।

মেসার্স আনোয়ার হাজী ট্রেডার্সের আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমাদের ফার্ম থেকেই প্রতিটি ডিম ১৩ টাকা দরে সংগ্রহ করতে হতো। আনার সব খরচ আমার। প্রতি ১০০ ডিম আনতে খরচ ৩০ টাকা। তাহলে কীভাবে সরকারি দামে বিক্রি করব? এ জন্য ব্যবসা বন্ধ করে বসে আছি।’

মেসার্স কামাল ট্রেডার্সের কামাল হোসেন বলেন, অন্যরা প্রতি ১০০টি ডিম ১ হাজার ৪০০ টাকার বেশিতে বিক্রি করলেও তাঁদের কিছু বলা হচ্ছে না।

গত আগস্ট থেকেই ডিমের দাম বাড়ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, ৮ আগস্ট ডিমের দাম ছিল ডজনপ্রতি ১৫০ থেকে ১৬২ টাকা। এরপর ক্রমেই দাম বাড়তে বাড়তে প্রতি ডজন ১৭০-১৮০ টাকায় ঠেকে। এই অবস্থায় অন্তর্র্বতী সরকার ১৬ সেপ্টেম্বর ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয়। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বেঁধে দেওয়া ওই দর ছিল, উৎপাদন পর্যায়ে প্রতিটি ফার্মের ডিমের দাম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। গতকালও ওই দর বেঁধে দেওয়া হয়।

কিন্তু এত দিন ওই দর ব্যবসায়ীরা মানেননি। বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে ভোক্তা অধিদপ্তর। এতে সোমবার থেকে ডিম বিক্রি বন্ধ করে দেন তেজগাঁওয়ের আড়তের ব্যবসায়ীরা। বাজারে সংকট তৈরি হয় ডিমের।

এই পরিস্থিতিতে গতকাল ডিম ব্যবসায়ী ও উৎপাদকদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর। সেখানে গত মাসের দামই নতুন করে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেই দামেই ডিম বিক্রিতে সম্মত হয়েছেন ডিম উৎপাদনকারী খামার ও ব্যবসায়ীরা। তাঁদের আশা, এতে আজ থেকে বাজারে ডিম সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

আজ থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানান ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। বৈঠকে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ডিম উৎপাদক কাজী ফার্ম, ডায়মন্ড, প্যারাগনের মতো বড় কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা, তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক হানিফ মিয়া, সহসভাপতি হারুনুর রশিদ, কোষাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম প্রমুখ বৈঠকে অংশ নেন।

বৈঠকে সরকার-নির্ধারিত নতুন দামে ডিম কেনাবেচার জন্য সব পক্ষ রাজি হয়েছে বলে জানান মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি ১০০ ডিম ১ হাজার ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি করতে পারব। সেই হিসাবে খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় বিক্রি করতে সমস্যা হবে না বলে মনে করি।’ তিনি জানান, আজ থেকে আবার আড়তে ডিম আনা হবে।

আমানত উল্লাহ বলেন, তেজগাঁও থেকে প্রতিদিন ২০ লাখ ডিম সরবরাহ হয়। ফার্মগুলোকে তাঁরা প্রতিদিন ৩০ লাখ ডিম দিতে বলেছেন। তেজগাঁও ও কাপ্তান বাজার মিলিয়ে দিনে ৫০ লাখের মতো ডিম সরবরাহ করা গেলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।

উৎপাদন ও চাহিদা কত: কৃষি অধিদপ্তরের খামার শাখার উপপরিচালক শরিফুল হক বলেন, দেশে দিনে ডিমের চাহিদা ৫ কোটি। উৎপাদিত হয় ৬ কোটি ৪০ লাখ। কখনো এর চেয়ে একটু কমে, কখনো একটু বাড়ে। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হলেও সরবরাহে ঘাটতি কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে বন্যার কারণে উৎপাদন হয়তো কম হয়েছে। তবে তাঁরা বলেননি ঘাটতি আছে। তবে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজি না আসায় ডিমের চাহিদা বেড়েছে। তাই হয়তো কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে।

মুরগির খাবার ও বাচ্চার দাম কমলে ডিম ও মুরগির দামও কমে আসবে বলে জানান ক্ষুদ্র খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার। তিনি বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরাও কম দামে মুরগি ও ডিম খাওয়াতে চান। কিন্তু বছরের বেশির ভাগ সময়ই তাঁদের লোকসান দিতে হয়। এতে দেশীয় পোলট্রিশিল্প ধ্বংস হচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন বলেন, চাহিদা ও সরবরাহের পার্থক্যের কারণে এই সমস্যা। দেশে চাহিদা ও উৎপাদনের তথ্যে গরমিল রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন উৎপাদন আছে তিন কোটির মতো। সরবরাহ কম থাকলে দাম বাড়বেই। এত দিন তো যৌক্তিক দাম ছিল। তাহলে হুট করে কি সাপ্লাই চেইনের লোকজন খারাপ হয়ে গেল? না, সোজা কথা, সরবরাহ বাড়াতে হবে।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিদেশ থেকে আমদানি করলে স্থানীয় উৎপাদকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার ঘাটতি থাকলে স্থানীয়রা বেশি দামে বিক্রির সুযোগ নেবে। এ কারণে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ বন্ধ করতে উৎপাদকদের নির্দিষ্ট মাত্রায় সুরক্ষা দিয়ে আমদানির সুযোগ রাখা দরকার।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com