বিনোদন নিউজ : ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রবীণ অভিনয়শিল্পী প্রবীর মিত্র ভারতের দিল্লির এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন; তার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করা হবে কি না, সে বিষয়ে সপ্তাহ খানেক পর চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছে পরিবার।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি তাকে দিল্লি নেওয়ার পর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়; চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সাত দিনের বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান তার পুত্রবধূ সোনিয়া ইসলাম।
অস্টিও পরোসিসসহ (হাড়ক্ষয়) বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েক বছর ধরেই চার দেওয়ালে বন্দি জীবন কাটছিল ৮১ বছর বয়সী এ অভিনয়শিল্পীর। বছর তিনে ধরে দেশের কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও উন্নতি না মেলায় উন্নত চিকিৎসার জন্য দিল্লি নেওয়া হয়েছে তাকে। সেখানে তার বোন বসবাস করেন; হাসপাতাল থেকে আপাতত বোনের বাসায় বিশ্রামে আছেন প্রবীর মিত্র।
সোনিয়া ইসলাম জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার হাড়ক্ষয় ছাড়া আর কোনো রোগ ধরা পড়েনি; চিকিৎসরা ওষুধ দিয়েছেন। তার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার লাগবে কি না-তা সপ্তাহ খানেক পর চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। কয়েক বছর আগেই অভিনয় থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন তিনি। সহশিল্পীদের মধ্যে অনেকের সঙ্গেই আর যোগাযোগ নেই তার। পত্রিকা পড়ে, টিভি দেখে সময় কাটে তার।
স্কুলজীবনে প্রথমবারের মতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে প্রহরীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রবীর মিত্র। পরবর্তীতে পরিচালক এইচ আকবরের হাত ধরে ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েছে বড়পর্দায় তার অভিষেক হয়।
প্রায় চার দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিতাস একটি নদীর নাম, দুই পয়সার আলতা, বড় ভালো লোক ছিল, বেদের মেয়ে জোসনাসহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
সবশেষ এসডি রুবেলের পরিচালনায় ‘বৃদ্ধাশ্রম’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি; তবে ছবিটি এখনও মুক্তি পায়নি। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এ অভিনয় শিল্পী আর কখনও ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন না বলে বছর দুয়েক আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন প্রবীর মিত্র।
অভিনয়ের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১৯৮২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মোহাম্মদ মহিউদ্দিন পরিচালিত Ôবড় ভালো লোক ছিলোÕ চলচ্চিত্রে অভিনয়ে জন্য পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান প্রবীর মিত্র। এরপর দীর্ঘদিনের আক্ষেপ ঘুচিয়ে ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে তাকে।
১৯৪০ সালে চাঁদপুরে জন্ম নেওয়া প্রবীর মিত্রের শৈশব কেটেছে পুরান ঢাকায়। পড়াশোনা করেন সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল ও জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)। তার তিন ছেলে, এক মেয়ে। স্ত্রী অজন্তা মিত্রকে ২০০০ সালে হারানোর পর ২০১২ সালে তার ছোট ছেলে আকাশও পরপারে পাড়ি জমান। প্রবীর মিত্রের বাবা গোপেন্দ্র নারায়ণ মিত্র ও মা অমিয় বালা মিত্র। তার দুই বোন, সরস্বতী বসু ও রমা সরকার; ভাই সুবীর কুমার মিত্র।