তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি : নিয়মিত অফিসে না আসা, কথায় কথায় গণমাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলার হুমকি, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমুলক আচরণ, দিনের পর দিন বিভিন্ন ফাইল আটকে রাখা, পৌর নির্বাচনে অযোগ্য প্রার্থীকে সুযোগ দিয়ে সহায়তা ও সরকারি মোবাইল ফোন না ধরাসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়েন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। স্থানীয়রা জানান, মাঠপর্যায়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ইউএনওর এসব বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এলাকার মানুষ। আর এটাই নাকি তানোর ‘বিতর্কিত’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো বদলি হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে, ইউএনও বলছেন তিনি বদলি আদেশ চেয়ে নিয়েছেন। তাই কর্তৃপক্ষ গত ১৪ মার্চ তাকে নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলাতে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করেছেন। ১৫ মার্চ সোমবার ইউএনও বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এখনো অফিসিয়াল কোনো চিঠি আসেনি। তবে, ইন্টারনেটে বদলির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। কিন্তু তাকে রিলিজ দেয়া হয়নি। ফলে তিনি আগামী বেশ কয়েকদিন এখানে থাকছেন। প্রসঙ্গত, গত ৩০ জানুয়ারী রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর নির্বাচনে তথ্য গোপন করে হলফনামা দাখিল করেন আ’লীগের বহিস্কৃত নবনির্বাচিত মেয়র সাইদুর রহমান। এরপরও তাকে নির্বাচনে সুযোগ দেন ইউএনও। এনিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত পরাজিত মেয়রপ্রার্থী আমির হোসেন ওরফে আমিন ১২ জনকে প্রতিপক্ষ করে রাজশাহীর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে মামলা করেন। মামলায় ইউএন, ইসি ও ডিসিকেও প্রতিপক্ষ করা হয়। মূলত এই মামলারও সূত্র ধরে তিনি বদলি হতে পারেন বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। তানোর প্রেসক্লাবের সহকারী ক্যাশিয়ার জাকির হোসেন টুটুল জানান, ইউএনওর কাছ থেকে সেবাবঞ্চিত হয়েছেন উপজেলাবাসী। অনুমতি ছাড়া সাধারণ মানুষকে তিনি অফিসে ঢুকতে দেন না। ফলে সেবা নিতে আসা মানুষকে ঘন্টার ঘন্টা ধরে বাইরে বসে থাকতে হয়। সরকারি ফোনও রিসিভ করেন না। গণমাধ্যমকর্মীদের এড়িয়ে চলেন। অনেক সাংবাদিকের ফোন নম্বর ব্ল্যাক লিস্টে রেখেছেন। এতে করে সাংবাদিক মহল তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ইউএনওর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এই জনবিচ্ছিন্ন ইউএরওর বদলির খবর পেয়ে উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খাদেকুন্নবী বাবু চৌধুরী জানান, ইউএনওর আচরণ সুবিধাজনক নয়। তাঁর অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে সম্মান হারানোর ভয়ে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া উপজেলায় যান না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের খবরও তার কানে এসেছে। আগেও অনেক ইউএনও ছিল কিন্তু এমন ইউএনও চোখে পড়েনি। এবিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলেন, ইউএনও সবার সঙ্গে রূঢ আচরণ করেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি কোনো ফোন ধরেন না। ধরলেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। শুধু তাই নয় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানসহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে তাঁর কোনো সমন্বয় নাই। তিনি অফিসে বসেন না। সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হন। বিভিন্ন বিষয়ে তার হঠকারী সিদ্ধান্তে উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন কেমন যেন এক বিভ্রান্তকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিল। এব্যাপারে রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল জলিলের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি।