বিডি ঢাকা অনলাইন ডেস্ক
রাজশাহীর তানোরে সমতল ভূমিতে বসবাসরত ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের আর্থসামাজিক ও জীবন মান উন্নয়নের লক্ষে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পে পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে। সুবিধাভোগিরা বলছেন, এ উপজেলায় সমতল ভূমিতে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষের আর্থ সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র অসহায় মানুষের বাড়িতে গরু, ছাগল, ভেড়া ও হাঁস-মুরগি পালনে আগ্রহ বেড়ে গেছে। গত এক থেকে দেড় বছরের মাথায় কৃষিনির্ভর এ উপজেলার অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান উল্লেখযোগ্য।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, অত্র প্রকল্পের আওতায় প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে ১৬৪টি পরিবারের মাঝে সংকর জাতের বকনা গরু বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। এভাবে এ উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১২৩টি। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪১টি পরিবারকে বকনা গরু প্রদান করা হয়েছে। প্রদানকৃত এসব প্রত্যেক পরিবারকে ১৫০ কেজি দানাদার খাদ্য, গৃহনির্মাণ উপকরণ এবং ঔষুধ বিতরণ ছাড়াও দুই দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়াও এই প্রকল্পের মাধ্যমে অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ৪০০টি পরিবারের মাঝে ৮০০টি ভেড়ী প্রদান করা হয়।
সুবিধাভোগি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তানোর উপজেলার কলমা পূর্বপাড়া গ্রামের সন্তেস কর্মকার বলেন, বিগত দেড় বছর আগে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে বিনামূল্যে বকনা গরু তাঁকে প্রদান করা হয়েছে। সঙ্গে গরু লালন-পালন বিষয়ে দুই দিন প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। সেইসাথে ৫০ কেজি করে গো-খাদ্য তিন বার দেয়া হয়েছে। সরকারের দেয়া বকনা গরু এভাবে লালন-পালনে গত দু’মাস আগে ওই গরুর বকনা বাছুর হয়। বর্তমানে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লিটার দুধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শুধু সন্তেস কর্মকার নয়, বিতরণকৃত অনেকের বকনাগুলোর মধ্যে প্রায় ১৩২টি বা”চা প্রসব করেছে। প্রতিদিন প্রত্যেক গরু প্রায় সাড়ে ৩ লিটার দুধ দিচ্ছে । এই দুধ খেয়ে পরিবারের সদস্যরা পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছে। এতে মেধা বিকাশে সহায়তা পাচ্ছে বলে জানান কলমা ইউপির চোরখৈর গ্রামের মায়নো টুডুসহ আরও অনেকে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র বলছে, বিতরণকৃত বকনাগুলির মধ্যে প্রায় ৩৬টি বকনা দ্বিতীয়বার গর্ভধারণ করেছে। এভাবে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিটি সুফলভোগী পরিবার ৩টি করে গরুর মালিক হয়ে যাবে। যে নৃ-গোষ্ঠী পরিবারগুলি দু’বেলা ভাতের জন্য সংগ্রাম করেছে, তাদের মুখে এখন বকনা, ছাগল ও ভেড়ী লালন-পালনে হাসি ফুটেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০০টি পরিবারের মাঝে ৮০০টি ভেড়ী ও গৃহনির্মাণ উপকরণ ছাড়াও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আরও ৩৪৬টি পরিবারের মাঝে দুটি করে ভেড়ী ১৪৬টি পরিবারের মাঝে মহিষ অথবা সংকর জাতের বকনা, ৪৭৮টি পরিবারে দুটি করে ছাগল এবং ২০টি করে হাঁস অথবা মুরগি ৭৯৬টি পরিবারে প্রদান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পটি যদি সঠিক ভাবে সম্পন্ন করা যায় তাহলে পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারগুলির ভাগ্য অনেক পরিবর্তন হবে।
এব্যাপারে তানোর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে আধুনিক পদ্ধতিতে পালন, ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ছাড়াও স্বাস্থ্যসম্মত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে কাজ অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ভিশন অনুযায়ী দেশে দুধ, মাংস ও ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদা পূরণপূর্বক মেধাবী, স্বাস্থ্যবান ও বুদ্ধিদীপ্ত জাতি গঠন করা। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে তানোর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জনবল সংকটেও আধুনিক-লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং সম্প্রসারণ সম্পর্কিত কাজ করে যা”েছ। ফলে জাতীয় পর্যায়ে সম্পাদিত প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কার্যাবলি ও সাফল্যতে প্রসংশিত হচ্ছে ।