রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭ অপরাহ্ন

তানোরে বিএমডিএ’র সেচ প্রকল্প হুমকির মূখে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৮ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

রাজশাহীর তানোরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একশ্রেণীর কর্মকর্তার নেপথ্যে মদদে। অবৈধ মটর থেকে নির্বিচারে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করায় কারণে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ সেচ প্রকল্প হুমকির মূখে পড়েছে।

জানা গেছে, প্রচন্ড খরাপ্রবণ বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলের বিশাল এলাকা জুড়ে ভূ-গর্ভের পানির স্তর তলানিতে ঠেকেছে।পানির স্তর এতটাই নিচে নেমেছে যে এখন বরেন্দ্রভূমির রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আট উপজেলার ২৬টি ইউনিয়ন (ইউপি) এলাকায় ১৭০ ফুট খনন করেও পানি উঠছে না গভীর নলকূপে। এসব এলাকার হাজারও হস্তচালিত নলকূপ এক দশক আগেই অচল হয়েছে।

অব্যাহত পানি সংকট মোকাবিলা ও ভূ-গর্ভের পানির স্তর রক্ষায় নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)।এদিকে ভু-গর্ভের পানির স্তর ধরে রাখতে, সেচ নির্ভর বোরো চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত ও কম সেচ লাগে এমন ফসলের চাষাবাদ করাতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। অথচ তানোরে পল্লী বিদ্যুতের একশ্রেণীর কর্মকর্তার যোগসাজশে আবাসিক ও অবৈধ মটর থেকে নির্বিচারে সেচ বাণিজ্যে করে ভু-গর্ভ স্তরের পানি অপচয় করা হচ্ছে। এতে বিএমডিএর নেয়া ভূ-গর্ভস্থ পানি ধরে রাখার উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে, এর দায় নিবে কে? এসব কারণে কৃষিবান্ধব প্রতিষ্ঠানের ভবিষৎ নিয়ে কৃষকেরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এলাকার হাজার হাজার কৃষকের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ।

রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে অবৈধ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এসব অবৈধ মটরে সেচ বাণিজ্য করায় বিএমডি’র অধিকাংশ গভীর নলকুপ ভু-গর্ভস্ত পানির লেয়ার ফেল করায় অকেজো হয়ে পড়ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৩০টি গভীর নলকুপ অকেজো হয়ে পড়েছে। একটি গভীর নলকুপ যে পানি উত্তোলন করে তার প্রায় ৯০ ভাগ সেচ কাজে ব্যবহার ও ১০ ভাগ অপচয় হয়। অথচ একটি মটরে যে পানি উত্তোলন হয় তার মাত্র ৪০ ভাগ সেচ কাজে ব্যবহার ও প্রায় ৬০ ভাগ অপচয় হয়। ফলে অবৈধ মটরে উত্তোলন করা পানির বিপুল পরিমাণ অপচয় হওয়ায় গভীর নলকুপগুলো ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার ফেল করছে।

জানা গেছে, উপজেলায় বিএমডিএ’র ৫৩৬টি ও ব্যক্তিমালিকানা ১৬টি মোট ৫৫২টি গভীর নলকুপ রয়েছে।এছাড়াও অগভীর নলকুপ বিদ্যুৎ চালিত ৪১১টি ও ডিজেল চালিত ৫০টি, এলএলপি বিদ্যুৎ চালিত ৩টি, ডিজেল চালিত ৩৫০টি, মোট এক হাজার ৩৬৬টি সেচ পাম্প রয়েছে।

উপজেলায় আবাদযোগ্য কৃষি জমি রয়েছে ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর, সেচের আওতায় ২২ হাজার ৩৩২ হেক্টর। সেচ বহির্ভুত জমি রয়েছে এক হাজার ৬৬২ হেক্টর। একফসলী  জমি ৩৪৪ হেক্টর, দুই ফসলী ৪ হাজার ৫৪০ হেক্টর, তিনফসলী ১৯ হাজার ১০৯ হেক্টর, নীট ফসলী জমি ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর, নিবিড়তা ২৭৮ শতাংশ  ভূমি  ব্যবহার ৮২ শতাংশ। উচুঁ জমি ২০ হাজার  ৩৮৬ হেক্টর, মাঝারি উচুঁ জমি এক হাজার ৫৭৮ হেক্টর, মাঝারি নিচুঁ জমি এক হাজার ৫৫৩ হেক্টর ও নিচু জমি ৪৭৬ হেক্টর  রয়েছে।

অন্যদিকে তানোরে পল্লী বিদ্যুতের মোট গ্রাহক রয়েছে ৫২ হাজার ৪০৮ জন। এর মধ্যে আবাসিক ৪৩ হাজার ৯৭৫ জন, বাণিজ্যিক ২ হাজার ৭২৩টি,শিল্প ৫২০টি, সেচ ৮৭৮টি ও দাতব্য ৯৫৮টি এবং বিদ্যুতের মোট চাহিদা প্রায় ২৫ মেঘাওয়াট। দেড় হর্স পাওয়ার মটর থেকে বাড়ি সংলগ্ন জমিতে স্বল্প পরিসরে সেচ দেয়া যাবে, তবে তা হতে হবে গভীর নলকুপ স্কীমের বাইরে। কিন্ত্ত গভীর নলকুপ স্কীমের মধ্যে ও বাসাবাড়িতে অবৈধভাবে ৩ থেকে ৪ হর্সপাওয়ার মটর স্থাপন করা হয়েছে। আবার আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে পল্লী বিদ্যুৎ এসব অবৈধ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। সুত্র জানায়, এসব অবৈধ মটরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় রোধ করতে না পারলে, আগামিতে এই অঞ্চলে সেচ তো দুরের কথা মানুষকে খাবার পানি কিনে পান করতে হবে।

জানা গেছে, উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির দুবইল গ্রামের গোলাম রাব্বানী লেলিন, শফিকুল ইসলাম, ডামফু, জানিফ আলী, চিমনা গ্রামের জালাল, কোয়েলহাটের জালাল, তালন্দ ইউপির কালনা উত্তরপাড়া গ্রামের হাসান আলী ও জসিম, লালপুর গ্রামের জহুর মিরের পুত্র কালাম, বাধাইড় ইউপির শসানতলা গ্রামের শাহজাহান আলী, বৈদ্যপুর গ্রামের আবুল হায়াৎ, বড় বাধাইড় গ্রামের আশিকুল, লালচাঁন, রতন বর্মন ও চাঁদপুর গ্রামের সাদেক আলী বাড়িতে অবৈধ মটর স্থাপন ও পল্লী বিদ্যুতের আবাসিক সংযোগ নিয়ে সেচ বানিজ্যে করছেন। উপজেলা জুড়ে এই রকম শত শত অবৈধ মটর রয়েছে, যারা আবাসিক সংযোগ নিয়ে সেচ বাণিজ্যে করছে। আর পল্লী বিদ্যুৎ জরিমানার নামে প্রতি মাসে সংযোগ প্রতি ১৫০০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এসব অবৈধ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে সংযোগ প্রতি এক থেকে দেড় লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে পল্লী বিদ্যুতের একশ্রেণীর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা।

অথচ সেচ নীতিমলা অনুয়ায়ী  আবাশিক সংযোগ থেকে কৃষি জমিতে সেচ দেয়া হলে সেই মটরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা। আর গভীর নলকুপ স্কীমে তো মটর স্থাপনের কোনো সুযোগ নাই। তবে পল্লী বিদ্যুৎ এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে জরিমানার নামে বাণিজ্য করছে। এব্যাপারে বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী  জামিনুর রহমান

বলেন, গভীর নলকুপের কমান্ড এরিয়ায় সেচ মটর স্থাপনের কোনো সুযোগ নাই আর বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার তো প্রশ্নই আসে না এমনকি আবাশিক সংযোগ থেকে সেচ দেয়া যাবে না।এব্যাপারে রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তানোর এরিয়া ম্যানেজার (এজিএম) কামাল হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আবাশিক সংযোগ থেকে কৃষি জমিতে সেচ দেয়া যাবে না সত্য, তবে অনেকে দিচ্ছেন। তিনি বলেন,

বিএমডিএ’র গভীর নলকুপ সেচ দিতে পারছে না, তাই আমরা মটরে সংযোগ দিয়ে কৃষি উৎপাদনে ভুমিকা রাখছি, যখন পানির সঙ্কট হবে তখন দেখা যাবে, এতো আগেই ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে এতো হা হতাশ করার প্রয়োজন আছে বলে আমি করি না।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com