সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রোধে সব পক্ষেরই সচেতনতা দরকার : আলোচনা সভায় অভিমত ক্ষতিপূরণ দাবি বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ ৫৯৫ টাকা কেজি দরে দিনে ১ কোটি টাকার গরুর মাংস বিক্রি করেন খলিল ঢাকায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৭ বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, পল্লী বিদ্যুতের ৭ জন বরখাস্ত ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের কর্মসূচি স্থগিত ন্যাশনাল মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী ও নজরুল কলেজে হামলা- ভাঙচুর, পরীক্ষা স্থগিত বরাদ্দের মধ্যেই দিবস পালন করতে হবে : জেলা প্রশাসক চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় আবদুল ওয়াহেদ নেতৃত্বাধীন প্যানেলের

দক্ষিণাঞ্চলের ঈদযাত্রার চিত্র পুরোপুরি পালটে গেছে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৯ জুলাই, ২০২২
  • ১২১ বার পঠিত
দক্ষিণাঞ্চলের ঈদযাত্রার চিত্র পুরোপুরি পালটে গেছে
ফাইল ফটো

অনলাইন নিউজ : দক্ষিণাঞ্চলের ঈদযাত্রার চিত্র পুরোপুরি পালটে গেছে। প্রতিবছর ঈদযাত্রায় দুর্ভোগের কারণে যেখানে খবরের শিরোনাম হতো দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সেখানে এবার ফুরফুরে মেজাজে বাড়ি ফিরছেন সবাই। এক পদ্মা সেতু চোখের পলকে সব পালটে দিয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের নৌ আর সড়ক যোগাযোগের চিরচেনা দৃশ্য বদলে গেছে। পদ্মা সেতু পার হয়ে সড়কপথে ঢাকা থেকে এখন মাত্র ৩ ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে বরিশাল।

একইভাবে দক্ষিণের অন্য গন্তব্যগুলোর সঙ্গেও রাজধানীর সড়ক যোগাযোগের সময় কমেছে গড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। যাত্রী কম হওয়ায় চলছে না লঞ্চের ঈদ স্পেশাল সার্ভিস। কেবিন পেতেও খুব একটা বেগ পেতে হচ্ছে না কাউকে। এদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি পয়েন্টে নেই যানবাহনের তেমন ভিড়। আগে যেখানে ফেরির জন্য অপেক্ষা করত গাড়ি, সেখানে শুক্রবার প্রায় সারা দিন গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকে ফেরি।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় বরিশালের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে নগরীর নবগ্রাম রোডের বাসিন্দা ইমরান হাওলাদার বলেন, স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে বাসে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে অফিস ছুটি হয়। এরপর আরামবাগ থেকে বাসে উঠেছি। ঢাকা থেকে বের হতে যতটা সময়। সোয়া ৩ ঘণ্টায় বরিশাল এসেছি।

তিনি আরও বলেন, আগে তো লঞ্চে আসতাম। ঈদের অন্তত ১ মাস আগে থেকে শুরু হতো লঞ্চের কেবিন পাওয়ার লড়াই। কোনোভাবে কেবিন মিললেও লঞ্চে যেতে হতো হাজার মানুষের মধ্যে অনেকটা চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে। কিন্তু এবার সে সবের কিছুই হয়নি।

সড়কপথে বাসে বরিশালে আসা সরকারি চাকুরে বজলু হাওলাদার বলেন, ঢাকা থেকে মাওয়া, তারপর ফেরি পার হয়ে এ পারে এসে আবার বাসে বরিশাল। শুনতে সহজ মনে হলেও কষ্ট আর দুর্ভোগ যে কতটা ভয়াবহ ছিল তা শুধু জানে বরিশাল অঞ্চলের মানুষ। গতবার যে ফেরিতে ভিড়ের চাপে লোক মারা গেল তাতে আমিও ছিলাম। যারা সেই দুর্ভোগ পোহাননি তাদের কষ্টের সেই বর্ণনা বলে বোঝানো যাবে না।

ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী সাকুরা পরিবহণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, একটা শঙ্কা ছিল ঈদের আগে সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লে পদ্মা সেতুর টোলে জ্যাম হবে। এক্সপ্রেস সড়কের টোলে জ্যাম হবে সেই শঙ্কাও ছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত সেসবের কিছু হয়নি। শুক্রবারও ভালোভাবে আমাদের গাড়িগুলো নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে গেছে বরিশাল।

প্রায় একই কথা বলেন গ্রিনলাইন পরিবহণের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের মহাসড়কে ঈদযাত্রায় প্রায় প্রতিবার তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই আমরা। মাইলের পর মাইল যানজটসহ নানা জটিলতায় পড়তে হয় আমাদের। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০ হাজার যানবাহন সেতুটি দিয়ে পার হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে যাচ্ছে। ঈদযাত্রায় গাড়ির চাপ বাড়লে এ মহাসড়কেও ঝামেলা হবে এমন ভয় ছিল আমাদের। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত তেমন কোনো পরিস্থিতির মুখে পড়িনি আমরা। স্বাভাবিক গতি এবং সময়ই গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারছি যাত্রীদের।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর চাপ কমেছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি পয়েন্টেও। আগে যেখানে ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমনকি ১-২ দিন পর্যন্ত বসে থাকত যানবাহন সেখানে এখন ফেরি অপেক্ষায় থাকে যানবাহন আসার। শুক্রবারও ফেরি পয়েন্টের উভয় প্রান্তে এমন চিত্র দেখা গেছে। উভয় প্রান্তে পাঁচটি করে ঘাট ও ২১টি ফেরি প্রস্তুত থাকলেও যানবাহনের চাপ ছিল না বললেই চলে।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি পয়েন্টের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিসির ডিজিএম শাহ মোহাম্মদ খালিদ নেওয়াজ বলেন, বৃহস্পতিবার বেশ চাপ ছিল ফেরি ঘাটে। একদিনে প্রায় ৮৭ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করেছি আমরা। যানবাহনেরও প্রচুর চাপ ছিল। শুক্রবার জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত ভিড় খানিকটা কম ছিল। বিআইডব্লিউটিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ৮৭ লাখ আসলে কোনো আয়ই না। ঈদের আগে-পরে এ ফেরি পয়েন্টে এর দ্বিগুণ রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড রয়েছে।

শুক্রবার যানবাহন বেশি হওয়ার কারণ হিসাবে তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলমুখী বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুতে ঈদকেন্দ্রিক তীব্র যানজট চলছে। যে কারণে ঝামেলা এড়াতে অনেক যানবাহন ফেরি পার হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি সব ধরনের যানবাহনের ক্ষেত্রে ফেরি ভাড়া শতকরা ২০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে এ ৮৭ লাখ টাকা আয়। নয়তো আয়ের পরিমাণ আরও কম হতো। তবে এটা ঠিক যে, আগে ঈদে যে দুর্ভোগ হতো তা এবার আর নেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায়।

সড়কের মতো স্বস্তির ঈদযাত্রা এবার নৌপথেও। অন্য সময় ঈদের অন্তত ৫-৭ দিন আগে থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চ টইটুম্বুর বোঝাই হয়ে চলতে। সেখানে এবার তেমন একটা ভিড় নেই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে ১০টি লঞ্চ ছেড়ে আসে বরিশালের উদ্দেশে। বেশ ভিড়ও ছিল এসব লঞ্চে। বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট এবং সুন্দরবন নেভিগেশনের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, মূলত ডেকযাত্রীই বেশি ছিল বৃহস্পতিবার।

বৃহস্পতিবার গার্মেন্টস ছুটি হয়। এ কারণে এ ভিড়। তবে এটা ঠিক যে, এবার ঈদে আশানুরূপ যাত্রী পাইনি আমরা। এফবিসিসিআইর পরিচালক ও অ্যাডভেঞ্চার নেভিগেশনের মালিক নিজামউদ্দিন বলেন, এবার ঈদে চরম লোকসানের মুখে পড়ব আমরা। ঈদের আগে-পরে ২-৪ দিন কিছু যাত্রী হলেও টানা প্রায় ৮-১০ দিনের যে লোকসান তা সামলে উঠা যাবে না। ঈদ স্পেশাল সার্ভিস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিয়মিত সার্ভিসের ১০টি লঞ্চই বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে ছেড়ে বরিশালে এসেছে। আগে ১৭-১৮টি লঞ্চ ডবল ট্রিপ দিত। মালিকরা এভাবে লোকসানের কথা বললেও লঞ্চে ভিড় আর কেবিন পেতে তেমন একটা জটিলতা না থাকায় দারুণ খুশি সাধারণ যাত্রীরা।

শুক্রবার ভোরে লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশালে আসা দুলাল জোমাদ্দার বলেন, ঈদের আগে এত শান্তিতে লঞ্চে আসতে পারব সেটা কল্পনাতেও ভাবিনি। সবই পদ্মা সেতুর অবদান। ডেকে আসা গার্মেন্টকর্মী গুলনাহার বেগম বলেন, ভিড় থাকলেও আগের মতো করুণ অবস্থা নেই। সদরঘাটে জ্যামও খুব একটা ছিল না। এছাড়া লঞ্চের স্টাফদের ব্যবহারও পালটে গেছে। আগে যেখানে যাত্রীদের তারা মানুষ বলে গণ্য করত না সেখানে এখন ভালো ব্যবহার দিয়ে মন জয় করার চেষ্টা দেখা গেছে তাদের মধ্যে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com