বিডি ঢাকা ডেস্ক
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে কোটি টাকায় নির্মিত রোসাংগিরি-নিশ্চিন্তাপুর সেচ প্রকল্প দুই যুগেও আলোর মুখ দেখেনি। এতে শতশত কৃষক তাদের কয়েক হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তথ্যানুযায়ী ২০০১ সালে তৎকালীন জাতীয় সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের চেষ্টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে উক্ত প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছিল। প্রথম পর্যায়ে সাতকানিয়ার ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিন ১ কোটি টাকায় প্রায় ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেচ প্রকল্পে খালের দুইপাশে ও নিচে পাকাকরণের কাজ তিন ধাপে সম্পন্ন করে।
ওই সেচ প্রকল্পে সরকারি ক্যানেল করার আগে স্থানীয় কৃষক নিজেরা পাম্প মেশিনের মাধ্যমে হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে ড্রেনের মাধ্যমে তা জমিতে সরবরাহ করে চাষাবাদ করত। পরবর্তীতে সরকারিভাবে আরও অধিক জমি চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য উক্ত সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছিল।
দীর্ঘ ২৪ বছরে ওই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। এতে অনাবাদি থেকে যাচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের কয়েকশ’ হেক্টর ফসলি জমি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে প্রকল্পটি হালদা নদী থেকে ২৪টি পাম্পের মাধ্যেমে পানি তুলে ক্যানেলের মাধ্যমে মরা ধুরুং খালে ফেলে অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত করে রোসাংগিরি ইউপি ছাড়াও নানুপুর ইউনিয়ন, নিশ্চিন্তাপুর, সমিতির হাট ইউনিয়ন সেচের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়। তিন পর্যায়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার ক্যানেলের কাজ করার পর বাকি আধা কিলোমিটার কাজ শেষ না হওয়ায় সেচ প্রকল্পটি চালু করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া, পাম্প বসানোর জন্য অপরিকল্পিতভাবে পাম্প হাউসটি নির্মাণ করায় বর্ষা মৌসুমে পাম্প হাউসটি পানিতে নিমজ্জিত থাকে।
ঢাকা থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম এসে পাম্প হাউসটি যথাযথভাবে নির্মিত হয়নি বলে রিপোর্ট দেয় বলে সূত্রে জানা যায়। বর্তমানে পাম্প হাউসটি অসামাজিক কার্যকলাপের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলনের জন্য বসানো লোহার ২৪টি পাইপ বর্তমানে জং ধরে অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। রাতে ক্যানেলের ইট খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রোসাংগিরি ইউপি চেয়ারম্যান সোয়েব আল সালেহীন জানান, আগে স্থানীয় কৃষক নিজেরা পাম্প বসিয়ে চাষাবাদ করত। সরকারের পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে আরও অধিক পরিমাণ জমি চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ক্যানেলটি করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটি চালু করা সম্ভব হয়নি। এতে শতশত কৃষক চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে অনাবাদি পড়ে থাকছে কৃষকের জমি। সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করেও প্রকল্প চালু না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে প্রকল্পটির কাজ শেষ করে চালু করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
স্থানীয় কৃষক রেজাউল করিম, ফিরোজ মিয়া, নেছার আহমদ, ফয়েজ মিয়া, এমরান, ইদ্রিচ, কাসেম আলী জানান, আমাদের পূর্বপুরুষরা স্থানীয় হালদা নদী থেকে পাম্প মেশিনের মাধ্যমে পানি তুলে চাষাবাদ করত। যার ধারাবাহিকতায় আমরাও করেছি। সরকার সেচ প্রকল্পের যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে কৃষকরা লাভবান হবে। বিস্তীর্ণ কৃষিজমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। তবে, বর্তমানে অর্ধেকে এসে কাজ বন্ধ হওয়ায় ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো অবস্থা হয়েছে।
সরকারিভাবে পাম্প হাউস করায় আমাদের নিজেদের পানির পাম্প বসাতে পারছি না। এতে পানির অভাবে চাষাবাদ হচ্ছে না। অতিদ্রুত ক্যানেলের কাজ শেষ করে সেচ সুবিধার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতি জোর দাবি জানান তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুহাম্মদ সোহাগ তালুকদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এ প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা আছে। তাছাড়া,ফটিকছড়িতে আলাদা ৫টি উপসেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এগুলোর কাজ সম্পাদন করতে গেলে রোসাংগিরি-নিশ্চিন্তাপুর সেচ প্রকল্পের কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে এ প্রকল্পের বিষয়ে স্থানীয়ভাবে চাহিদাপত্র দিতে হবে।