রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ অপরাহ্ন

দুপুরের খাবার এক টুকরা পাঙ্গাশ মাছ মোরেলগঞ্জ হাসপাতালের দৈন্যদশা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৬ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির দৈন্যদশা। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। একাধিক পদে জনবল সংকট, অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও নেই ড্রাইভার, নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি অকেজো অবস্থায় ২ বছর ধরে কাদা মাটিতে পানগুছি নদীর তীরে পানিতে ডুবে পড়ে রয়েছে। ভর্তি থাকা রোগীরা দুপুরের খাবার ভাতের সঙ্গে পাচ্ছেন এক টুকরা পাঙ্গাশ মাছ ও পেঁপে সবজি। কর্তৃপক্ষের নেই কোনো নজরদারি।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা খাবারের লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুরের খাবার নিচ্ছেন। জনপ্রতি এক টুকরা পাঙ্গাশ মাছ ও পেঁপে সবজি। সকালে পেয়েছে ছোট একটি পাউরুটি, একটি কলা ও একটি ডিম সঙ্গে চিনি।

সানকিভাঙ্গা গ্রামের বৃদ্ধ আবুল বাশার (৭২), বারইখালী গ্রামের ছোবাহান খান (৭০), আকবর হাওলাদার (৪৫), নাসির হাওলাদার (৪৮) এরকম ভর্তি থাকা রোগীরা আক্ষেপ করে বলেন, বয়স্ক মানুষ সকালে নামমাত্র পাওয়া রুটি, কলা একটি ডিম তাতে কি পেট ভরে। দুপুরে ভাতের সঙ্গে এক টুকরা পাঙ্গাশ মাছ ও সবজি পেয়েছি। সরকারিভাবে একজন রোগীর খাবারে কত টাকা বরাদ্দ? আপনারা জানেন? কর্মকর্তা ডাক্তার শর্মী রায়কে বলেছি উত্তরে পেয়েছি যা পেয়েছেন তাই খেতে হবে।

এ রকম নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোরেলগঞ্জ উপজেলার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। গত এক সপ্তাহ ধরে আবহাওয়াজনিত কারণে নিউমোনিয়া, জ্বর, শ্বাসকষ্টজনিত ও ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু সাবিহা (৬ বছর),  আরবিন (৯ মাস), রাফসান (১ বছর), তাহমিনা (১ বছর), নুসরাত (৬ মাস),   ওমর  (৫ মাস)। এ ছাড়াও বৃদ্ধসহ ৩৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে।

পুরুষ ওয়ার্ডের নোংরা অপরিচ্ছন্ন ল্যাট্রিন, মূল ফটকের দরজায় নেই ছিটকানি। মহিলা ওয়ার্ডে একটি ফ্যান নষ্ট, গরমে শিশু রোগীদের ভোগান্তি চরমে অভিযোগ রয়েছে রোগীদের। অপরদিকে খাবারের তালিকায় নি¤œমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের বহনকৃত অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে ড্রাইভার না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে বেশি টাকায় ভাড়ায় যেতে হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সে রোগীদের।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি বছরের পর বছর ধরে অকেজো অবস্থায়। ২০১৮ সালের শেষদিকে নৌপথে রোগীদের দ্রুততম সময়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছানোর জন্য সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উপকূলীয় মোরেলগঞ্জে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ প্রদান করে। ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি এখন অকেজো অবস্থায় নদীর চড়ে ফেলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অফিস সহকারী ৩টি পদ, পরিসংখ্যান পদে ১ জন, জুনিয়র মেকানিক্স পদে ১ জন, স্টোর কিপার ১ জন, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার ২ জন, নাইটগার্ড ২ জন, আয়া ৩ জন, ওয়ার্ডবয় ও সুইপার পদে ১০ জন, এ পদগুলো দীর্ঘ বছর ধরে শূন্য রয়েছে। এ ছাড়াও হেল্থ অ্যাসিস্ট্যান্ট পদের এইচআই, এ এইচআই, এইচ এ ৮২ জনের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছে মাত্র ৩১ জন।

এ সম্পর্কে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শর্মী রায় বলেন, নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি ২০২২ সালে একবার মেরামত করে সচল করা হয়েছিল। স্থানীয় পর্যায়ে মেকানিক্স না থাকায় অকেজো অবস্থায় রয়েছে অ্যাম্বুলেন্সটি। সরকারিভাবে তেল ও ডাইভারের বরাদ্দ নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। একজন রোগীর খাবারে প্রতিদিন বরাদ্দ রয়েছে ১৭৫ টাকা, নিম্নমানের খাবারের বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার বলা সত্ত্বেও কোনো কর্ণপাত করছেন না। মামলা থাকায় (আইনি জটিলতায়) টেন্ডার প্রক্রিয়ায় নতুন করে ঠিকাদার পরিবর্তন করা যাচ্ছে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com