বিডি ঢাকা অনলাইন ডেস্ক
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার বখতিয়ারপুর ডিগ্রী কলেজ। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আঁতুরঘর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে কলেজটি। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ থেকে শুরু করে কলেজটির ভুসম্পত্তির ইজারাতেও নেয়া হয়েছে অনিয়মের আশ্রয়।
সম্প্রতি, কলেজ পরিচালনা কমিটি গঠণে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। সন্তান কলেজে না পড়লেও কমিটিতে দেখানো হয়েছে অভিভাবক সদস্য হিসেবে। শিক্ষার্থীর বাবা-মা জীবিত থাকা সত্বেও শিক্ষার্থীর ভাইকে অভিভাবক দেখিয়ে অভিভাবক সদস্য করা হয়েছে। শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে একজন মহিলা শিক্ষক রাখার কথা বিধিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও তা মানা হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাউকে কিছু না জানিয়ে গোপনে কমিটি গঠণ করা হয়েছে। ইচ্ছেমতো নিয়োগ বাণিজ্য করতেই এভাবে রাতের আঁধারে কলেজ পরিচালনা কমিটি গঠণ করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মখলেছুর রহমান।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্ণিং বডি গঠণ সংক্রান্ত বিধিমালায় উল্লেখ রয়েছে, গভর্ণিং বডি গঠণের লক্ষে তফসিল ঘোষণার নূন্যতম ৪৫ দিন পূর্বে গভর্ণিং বডি বা এডহক কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে হিতৈষী সংগ্রহের লক্ষে ৩০ দিন সময় দিয়ে অধ্যক্ষ নোটিশ জারী করবেন। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে কলেজের অনুকুলে সাধারণ ফান্ডে ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে হিতৈষী সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত হবেন। কিন্তু এসবের কিছুই করা হয়নি কমিটি গঠণের ক্ষেত্রে।
এই কলেজের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে দেখা গেছে, পদাধিকার বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতি। সদস্য সচিব হিসেবে পদাধিকার বলে ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে রাখা হয়েছে। বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দেখানো হয়েছে স্থানীয় মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যাক্তিকে। এর আগের কমিটিতেও ছিলেন তিনি। ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে সিরাজুল ইসলামকে দেখানো হয়েছে। শিক্ষাবোর্ডের প্রতিনিধি হিসেবে আয়নাল হককে দেখানো হয়েছে। এছাড়া দাতা সদস্য হিসেবে ইউনুস আলীকে দেখানো হয়েছে। প্রত্যোক কমিটিতেই ইউনুস আলীকে রাখা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিভাবক সদস্য হিসেবে আব্দুল কুদ্দুস সরকারকে দেখানো হয়েছে। অথচ তাঁর কোনো ছেলে-মেয়ে ওই কলেজে পড়েননা। একইভাবে অভিভাবক সদস্য দেখানো হয়েছে মাকিম সরকারকে। এক ছাত্রীর বাবা-মা জীবিত থাকা সত্বেও ওই শিক্ষার্থীর ভাই আব্দুল লতিফকে অভিভাবক সদস্য করা হয়েছে। শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে আব্দুর রাজ্জাক সরকার, জিয়াউর রহমান ও মফিজ উদ্দিনকে রাখা হয়েছে কমিটিতে। অথচ একজন মহিলা শিক্ষক প্রতিনিধি রাখার কথা বলা হলেও বিধি ভেঙ্গে তিন জনই পুরুষ শিক্ষক রাখা হয়েছে। কো-অপ্টেড সদস্য হিসেবে একজন চিকিৎসক রাখার কথা বিধিতে উল্লেখ থাকলেও সেটা মানা হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কলেজটির আগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ৫ মে। ওই কমিটি একটানা চার বছর পার করেছে। করোনাকালীন সময়ে ওই কমিটির মেয়াদ ৩ মাস বৃদ্ধি করা হলেও বিধি ভেঙ্গে পরপর চারবার এডহক কমিটি গঠণ করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহের গভর্ণিং বডি সংবিধি ২০১৯ মোতাবেক নির্বাচন পদ্ধতি অনুসরণ না করে গোপনে অবৈধ পন্থায় কমিটি গঠণ করা হয়েছে। বিধির ২৭ অনুচ্ছেদ এর (ক) মোতাবেক ৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধির মধ্যে কমপক্ষে একজন মহিলা শিক্ষক রাখা বাধ্যতামুলক করা হলেও তা লঙ্ঘন করা হয়েছে । অভিভাবক সদস্য নির্বাচনে বিধির ২৮ নং অনুচ্ছেদ অনুসরন করা হয়নি। অভিভাবক নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ করা হয়নি। নির্বাচনের নূন্যতম ৩০ দিন পূর্বে নির্বাচনের তফসীল কলেজের নোটিশ বোর্ডে সাঁটানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি। অভিভাবকদের ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে নোটিশ বোর্ডে দেয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য অভিভাবকদের কাছে গোপন করে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনগড়া কমিটি গঠন করেছেন।
বিধির ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে গভর্নিং বডি গঠণ ৩ এর বিধিতে বলা আছে পিতা-মাতার অবর্তমানে মনোনীত বিধিসম্মত অভিভাবক বা প্রতিনিধি নির্বাচিত হতে পারবেনা। সেক্ষেত্রে অভিভাবক সদস্য হিসেবে আব্দুল কুদ্দুস, মাকিম সরকার ও আব্দুল লতিফ বৈধ অভিভাবক নন। ২০১০ সাল থেকে দাতা সদস্য হিসেবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের আস্থাভাজন ইউনুস আলীকেই রাখা হয়। এবারের কমিটিতেও তাকে রাখা হয়েছে।
এসব অভিযোগ নিয়ে ইতিপুর্বে অভিভাবক ও এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মতামতের জন্য পত্র পাঠালেও অজ্ঞাত কারনে তার কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ করেন কলেজের কয়েকজন শিক্ষক।
এ ব্যাপারে বখতিয়ারপুর ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মখলেছুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা কলেজে ভর্তি হবার সময় যাকে বৈধ অভিভাবক দেখিয়েছেন তাদের মধ্যে থেকেই অভিভাবক সদস্য নির্বাচন করা হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, নিয়ম মেনেই কলেজের গভর্নিং বডি গঠণ করা হয়েছে। কমিটিতে জায়গা না পেয়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে কেউ অভিযোগ করে থাকতে না পারেন।