নিউজ ডেস্ক : দেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেছেন, আমাদের সামাজিক পরিস্থিতি খুব খারাপ। যেকোনো বয়সের নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এটা ভাবিয়ে তোলার মতো, দুশ্চিন্তার মতো।
আজ মঙ্গলবার বাইশ বছর আগে নেত্রকোনোর মদন উপজেলায় পাঁচ বছরের একটি শিশু ধর্ষণের মামলায় একজন আসামির যাবজ্জীবন সাজা বাতিল করে মৃত্যুদণ্ড দিতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানিকালে এমন মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি বলেন, কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তার বিচার হওয়াটাই মূখ্য বিষয়। অপরাধ সংঘটিত হলে তার বিচার হবে না-এমন পরিস্থিতির যেন সৃষ্টি না হয়। বিচারহীনতা যাতে না থাকে। যেকোনো অপরাধের বিচার হতেই হবে। সেজন্য যেকোনো অপরাধের বিচার হওয়াকেই বড় করে দেখা হয়।
আদালত এক রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে আসামি হুমায়ুন কবিরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখেন। আদালত বলেন, তাকে গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণের পর থেকে এই সাজা কার্যকর হবে। হাইকোর্ট ওই আসামিকে বয়স বিবেচনায় নিম্ন আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
শুনানিকালে আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিতে আবেদন জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পাঁচ বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণ করেছে। এর চেয়ে জঘন্য অপরাধ হতে পারে না। এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের সামাজিক পরিস্থিতি খুব খারাপ। যেকোনো বয়সের নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এটা ভাবিয়ে তোলার মতো।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সমাজে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে। সাজা হ্রাস করার বিষয়টি নিয়ে এখন নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। এ সময় আদালত বলেন, এই আসামি দোষী। এটা নিয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নাই। শুধু সাজা আরোপ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বয়স কম হলে এবং আগে কোনো অপরাধের রেকর্ড না থাকলে সে ক্ষেত্রে সাজা কমানোর বিষয়ে আপিল বিভাগের বেশ কিছু রায় রয়েছে।
জানা যায়, নেত্রকোনার মদন উপজেলায় ১৯৯৯ সালের ৫ জুলাই পাঁচ বছরের একটি শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হুমায়ুন কবির নামের ২৪/২৫ বছরের এক যুবককে আসামি করে মামলা হয়। এ মামলায় নেত্রকোনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে পলাতক আসামি হুমায়ুন কবিরকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এই মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। এই ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেন। রায়ে আসামির বয়স বিবেচনায় সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। আজ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন।