বিডি ঢাকা ডেস্ক
নাব্যতা সংকটে বাগেরহাটের মোংলা নদীর একমাত্র ফেরিঘাট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই বন্ধ থাকছে। ফলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন গুরুতর অসুস্থ রোগী ও ব্যবসায়ীসহ ভুক্তভোগী নানা পেশার মানুষ। দিনে-রাতে দুইবার জোয়ারের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে এ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী ট্রাক, পিক আপ, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন ও চালকদের।
বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মোংলা নদীর দক্ষিণ (পুরোনো মোংলা) ও উত্তর (বাসস্ট্যান্ড) পাড়ে দুটি ফেরিঘাট নির্মাণ শেষে ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরি চালু করা হয়। এ ফেরি চালুর পর মোংলা নদী পারাপারে দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফেরি চালুর ৫ থেকে ৬ বছর যেতে না যেতেই নদীতে অব্যাহতভাবে চর পড়তে থাকায় এর স্বাভাবিক চলাচল দারুণভাবে ব্যাহত হতে থাকে। বর্তমানে অবস্থা আরো ভয়াবহ।
ফেরির মাস্টার (চালক) সোহরাব হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে নদীর দক্ষিণ পাড়ের (পুরোনো মোংলা) প্রায় মধ্যবর্তী এলাকা পর্যন্ত ভাটার সময় চর জেগে উঠছে। আর এ কারণে ২৪ ঘণ্টার ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টাই পানির অভাবে ফেরি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ফেরিঘাটের পন্টুন ও বেইলি সেতু কয়েক দফায় নদীর দিকে ৩০০ ফুট বাড়ালেও অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। শীতকালে এ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নেয়।’
সরেজমিনে মোংলা ফেরিঘাটে দেখা যায়, ঘাটে ৩০টিরও বেশি গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। ফেরিটি ঘাটের সামনে জেগে ওঠা চরে আটকে আছে।
ইউনিভার্সেল ফুডসের পণ্য সরবরাহকারী পাবনা থেকে আগত আলমগীর হোসেন বলেন, ‘রবিবার ভোর থেকে এখানে বসে আছি। ফেরির চালক জানিয়েছেন, সন্ধ্যায় জোয়ার আসলে ফেরি ছাড়া যাবে। কখন পাবনা পৌঁছাব জানি না।’
মোংলা বন্দর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইমান হোসেন বলেন, ‘গুরুতর অসুস্থ রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা নিয়ে যেতে হয়। ভাটির সময় ফেরি না চলায় গুরুতর অসুস্থ ও মুমূর্ষু রোগীসহ তাদের স্বজনদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ঘাটে জোয়ারের অপেক্ষা করতে হয়।’
মোংলা উপজেলা মৎস্য আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি ওলিয়ার রহমান বলেন, ‘দ্রুত পচনশীল ও জরুরি পণ্য নিয়ে সময়মতো ফেরি পার হতে না পারায় তা অনেক ক্ষেত্রেই নষ্ট হয়ে পড়ছে। জোয়ারে পুরো নদী না ভরা পর্যন্ত ফেরি চলাচলের উপযোগী হয় না। এতে আমরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।’
পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম স¤পাদক ও মোংলা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুর আলম শেখ বলেন, যাত্রী পারাপারে বিকল্প হিসেবে খেয়া নৌকা থাকলেও পণ্য পরিবহনে মোংলার ব্যবসায়ীদের ফেরি ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। মাত্র ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ফেরি চালু থাকার কারণে উপজেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কার্যক্রমের মালামাল পরিবহনেও ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে।
বাপার যুগ্ম সম্পাদক নুর আলম শেখ আরো বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনকে (বিআইডব্লিউটিসি) নিয়মিত নদীর খনন অব্যাহত রাখতে হবে। এ ছাড়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণই এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।