শরীয়তপুর সংবাদদাতা : পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য বানানো হচ্ছে পদ্মা সেতুর টেরাকোটা। শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিথিদের দেওয়া হবে মাটির তৈরি এই টেরাকোটা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যাদেশ পাওয়ার পর ব্যস্ত সময় পার করছেন শরীয়তপুরের কার্তিকপুরের মৃৎশিল্পীরা।
শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে শরীয়তপুরে ২৫ জুন থেকে তিন দিনের বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শরীয়তপুর জেলা সদরের বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত তিন দিনের আনন্দ উৎসবে যোগ দেবেন দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, কণ্ঠশিল্পীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
ওই অনুষ্ঠানে ভিডিওচিত্রে দেখানো হবে পদ্মা সেতুর আদ্যোপান্ত। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকবে। রাতে আতশবাজি, ফানুস ওড়ানো ও লেজার শো উপস্থাপন করা হবে। সারা শহরের সরকারি-বেসরকারি দফতরে আলোকসজ্জা করা হবে। এসব অনুষ্ঠানে জনসাধারণের সঙ্গে সুশীল সমাজ ও সম্মানিত ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। আর আমন্ত্রিত অতিথিদের উপহার হিসেবে দেওয়া হবে স্থানীয় মৃৎশিল্পীদের মাটির তৈরি পদ্মা সেতুর টেরাকোটা।
টেরাকোটার নকশায় স্থান পেয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর তর্জনীর স্পর্ধা হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পদ্মা সেতুর ছবি। এমন ছবি এঁকেছিলেন প্রয়াত শিল্পী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সুলভ শাহরিয়ার। তার আঁকা ছবিটি টেরাকোটায় রূপ দেওয়ার নকশা পরিকল্পনা করেন তার ভাই শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান। আর টেরোকোটায় শিল্পকর্মে রূপ দিয়েছেন শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুর গ্রামের মৃৎশিল্পী সন্দীপ পাল।
সন্দীপ পালের কারখানার শ্রমিক হেলেনা আক্তার বলেন, ‘এখানে আমাদের তৈরি বিভিন্ন শো পিস দেশে-বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। কয়েক দিন যাবৎ একটি ব্যতিক্রমধর্মী শিল্পকর্ম করছি। এর মধ্যে বাঙালি জাতির আত্মত্যাগ, অহঙ্কার ও গর্ব জড়িয়ে আছে। আমি ভাগ্যবান এমন একটি শিল্পকর্মে কাজ করার সুযোগ পেয়ে। পদ্মা সেতু আমাদের উন্নত জীবন দেবে, সেই পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমাদের তৈরি টেরাকোটা উপহার দেওয়া হবে এটাতে অনেক আনন্দিত।’
মৃৎশিল্পী সন্দীপ পাল বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের উন্নয়ন ও গর্বের স্থাপনা। তার সঙ্গে আমার শিল্পীজীবনের যোগসূত্র তৈরি হলো টেরাকোটা নির্মাণের মধ্য দিয়ে। খুব যত্ন নিয়ে পদ্মা সেতুর টেরাকোটা বানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, ‘শাহরিয়ার সুলভ ২০১৭ সালের ২০ মে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে সে ওই ছবিটি এঁকেছিল। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো ঐতিহাসিক সময়ে এ ছবি দিয়ে নির্মাণ করা টেরাকোটা অতিথিদের দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। এ টেরাকোটায় বায়ান্ন থেকে মাথা উঁচু করে সক্ষমতার বাংলাদেশের সব ঐতিহাসিক চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পদ্মা সেতু আমাদের কাছে বঙ্গবন্ধুর তর্জনীর স্পর্ধা হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা এক বাংলাদেশ।’