অনলাইন নিউজ : গতকাল রোববার সকালে মাদারীপুর থেকে বাস নিয়ে ঢাকার পথে রওনা হন সার্বিক পরিবহনের চালক ইসমাইল হোসেন। পোস্তগোলা সেতু এলাকায় পৌঁছতে তার সময় লেগেছে মাত্র দেড় ঘণ্টা। আগে যেখানে ফেরি পার হয়ে আসতে স্বাভাবিক সময়ে কমপক্ষে ৫-৬ ঘণ্টা লেগে যেত। আর ফেরিঘাটে দেরি হলে সময় লাগত আরও বেশি। উচ্ছ্বসিত ইসমাইল বলেন, ‘কী আশ্চর্য, জীবনে প্রথম দেড় ঘণ্টায় মাদারীপুর থেকে ঢাকায় এসেছি!’ ইসমাইলের মতো গতকাল খুলনা, বাগেরহাট, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের বাসচালক ও যাত্রীরা পদ্মা সেতু দিয়ে অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ৪ ঘণ্টায় যাত্রীবাহী বাসগুলো বরিশালে পৌঁছতে পেরেছে বলে যাত্রী ও পরিবহন চালকরা জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের তিন জায়গায় টোল দিতে হয়েছে। তবে যারা বরিশাল থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে প্রথম দিন ঢাকা এসেছেন তাদের ১৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে আরও কম সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন। কারণ যাওয়ার পথে সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোলপ্লাজায় যানবাহনের চাপ থাকায় সময় একটু বেশি লেগেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে রাজধানীর গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ফেরি হয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে বরিশালের দূরত্ব ছিল ২৪২ কিলোমিটার। বিআরটিএ;র হিসাবে ৪০ আসনবিশিষ্ট নন-এসি বাসে ফেরির টোলসহ যাত্রীপ্রতি ভাড়া ছিল ৬২৬ টাকা। ফেরি পারাপারের কারণে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা বেশি সময় লাগত। এখন ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে বরিশালের দূরত্ব মাত্র ১৬০ কিলোমিটার। এ হিসাবে দূরত্ব কমে এসেছে ৮২ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে বরিশার যেতে সময় লাগছে মাত্র ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা। বর্তমানে এ রুটের নন-এসি বাসের ভাড়া ৪১২ টাকা। একইভাবে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত বর্তমান দূরত্ব ২৯২ কিলোমিটার। নন-এসি বাসে এই দূরত্বের ভাড়া ৭৩৭ টাকা। বর্তমানে এই দূরত্ব যেতে সময় লাগছে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু হয়ে বর্তমানে এই দূরত্ব দাঁড়িয়েছে ২৪৭ কিলোমিটারে। সময় লাগছে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। এ রুটে ভাড়া কমে হয়েছে ৬৪৯ টাকা। একইভাবে দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ জেলার পরিবহন রুটের দূরত্ব কমে এসেছে।
পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে ঢাকা-বেনাপোলের দূরত্ব কমেছে ৯৩ কিলোমিটার। এতে সময় কমছে প্রায় ৪ ঘণ্টা। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া হয়ে বেনাপোলের দূরত্ব ২৭৮ কিলোমিটার। এই পথে ঢাকা থেকে বেনাপোল যেতে সময় লাগত ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বর্তমানে মাওয়া দিয়ে বেনাপোলের দূরত্ব হয়েছে ১৮৫ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগছে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। ফলে এই পথ দিয়ে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হয়েছে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বাসে দেড় থেকে দু’ঘণ্টার মধ্যে মানুষ ঢাকায় পৌঁছতে পারছে শরীয়তপুর জেলার মানুষ। এতে তাদের প্রায় ২ ঘণ্টা সময় বেঁচেছে। শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন, এ অঞ্চলের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেও এটি ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, ঢাকার খুব কাছাকাছি হলেও দীর্ঘদিন ধরে শরীয়তপুরবাসীর মাঝিরঘাট পৌঁছতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগত। এরপর মাঝিরঘাট থেকে মাওয়া পৌঁছতে লঞ্চ, ফেরি করে মাওয়ায় যেতে ১ ঘণ্টা থেকে সোয়া এক ঘণ্টা লাগত। সেখান থেকে বাসে করে ঢাকায় পৌঁছতে আরও দেড় ঘণ্টা লাগত। এভাবে প্রায় ৪ ঘণ্টা লেগে যেত ঢাকায় পৌঁছতে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বিড়ম্বনা আর দুর্ভোগের অবসান ঘটেছে।
মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান গণমাধ্যমকে জানান, তিনি মাত্র ৫ মিনিটে পদ্মা সেতু পার হয়েছেন। আগে ফেরি পার হওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে বসে থাকতে হতো। তিনি বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমিয়ে দিয়েছে পদ্মা সেতু।
এ জাতীয় আরো খবর..